DMCA.com Protection Status
title="৭

বাংলাদেশ নিয়ে চীন-জাপান যুদ্ধ !

deepক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চীন-জাপান যুদ্ধের ইতিহাস বেশ পুরোনো। দেশ দুটির মধ্যে বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়েছে।কিন্তু এবার বাংলাদেশ নিয়ে চীন-জাপান নতুন এক ‘যুদ্ধে’ নেমেছে!

আসলে যুদ্ধটা বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে। রোববার জাপানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জাপান টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের দৌড়ে চীনকে হারাচ্ছে জাপান, যা এ অঞ্চলে বিশ্ব পরাশক্তি চীনের ক্ষমতা বিস্তারে ভারত মহাসাগরে প্রবেশে বড় ধরণের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ব্লমবার্গ নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে ইমেলে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) জানিয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলে মাতারবাড়িতে ১৮ কিলোমিটার দুরত্বে  গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মানকাজ আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে।

কিন্তু খারাপ সংবাদ যে, এর প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে চীনের সহায়তায় যে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, সেটি বর্তমানে হুমকির মুখে। deep2যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আইএইচএসের বিশ্লেষক ক্রিসপেন আটকিনসন বলেন, ‘আমি মনে করি, সেখানে একটি মাত্র সমুদ্রবন্দরেরই সুযোগ রয়েছে।’ রেল লাইন ও নির্দিষ্ট চ্যানেলে নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকতে পারে। আপনি যদি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চান, তাহলে পশ্চিমাদেশের সমর্থন প্রয়োজন, যা অর্থায়নকারী চীনের বিকল্প হিসেবে দেখা হবে।’ নতুন এ চুক্তির জন্য চীন দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে দেশটি সামরিক ও আর্থিক অবস্থা সুসংহত করার জন্য তৎপর, বড় ধরণের ধাক্কা খেল।

বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদ কব্জা করতে কয়েক বছর ধরে জাপান, চীন ও ইন্ডিয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে আসছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং ফেলো ডেভিড ব্রুস্টার বলেন, সেখানে (বঙ্গোপসাগরে) বিশাল একটি পরিবর্তন আসছে।

deep1বঙ্গোপসাগরকে দক্ষিণ চীন সাগরের জমজ ভাই হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপান পরিষ্কারভাবে চীনকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে এবং এ সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সুযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমি মনে করি, জাপান এ ব্যাপারে খুব খুশি।’ মাতারবাড়িতে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নির্মাণের কাজ শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদশ সরকার। একই সঙ্গে সোনাদিয়া দ্বীপে চীনের সহায়তায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আলোচনা করছে দেশটি।

১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ কোনো সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেনি। তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য কয়েক বছর থেকে পরিকল্পনা করে আসছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের গভীরতা কম হওয়ায় বড় বড় জাহাজ সেখানে ভিড়তে পারে না। ফলে প্রতিদিন বিশাল পরিমাণ অর্থ গচ্ছা যায়। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দর দেশটির জন্য বেশ জরুরি হয়ে ওঠে।

আটকিনসন বলেন, ১৮ মিটার দীর্ঘ মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর বড় বড় কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ধারণে সক্ষম হবে। বড় ধরনের সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে দেশটি এ অঞ্চলের প্রধান শক্তিশালী দেশ হিসেবেও বিবেচিত হবে। সোনাদিয়ায় চীনের সহায়তা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ কেন আটকে গেল- বিষয়টি স্পষ্ট করতে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের সহায়তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ কিছু দেশ বিরোধিতা করে আসছিল। মাতারবাড়ি থেকে সোনাদিয়া যেহেতু মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে, সেহেতু বিষয়টি আমরা নতুন করে ভেবে দেখছি।’

বাংলাদেশের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সেখানে উভয় বন্দর নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। মাতারবাড়ি সাধারণত বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কয়লা আমদানির কাজে ব্যবহৃত হবে। সেই সঙ্গে সোনাদিয়া পূর্ণমাত্রায় গভীর সমুদ্রবন্দর হবে।’ কিন্তু জাইকা প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকা বলেন, ‘মাতারবাড়ি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্য বন্দর হবে। এ বন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।’

এদিকে সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য চীনও জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। জাপান যাতে মাতারবাড়িতে সমুদবন্দর নির্মাণে ব্যর্থ হয়, সেই পরিকল্পনাও রয়েছে বেইজিংয়ের। এ ব্যাপারে ঢাকায় চীনা দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!