ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর শত শত মোবাইল টেলিফোনের টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। সীমান্ত ঘেঁষে মোবাইল টাওয়ার থাকলে চোরাকারবারি বা অন্যান্য অপরাধীদের সুবিধে হবে, এই আশঙ্কাতেই ওই অঞ্চলে এতদিনে টাওয়ার বসানোর ওপর নানা বিধিনিষেধ ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা শিথিল করার পর দেশের সরকারি টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল সীমান্তে টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান ও মিয়ানমার সীমান্তেও একই কাজ শুরু হবে। ভারতের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন এতে দেশের সীমান্তরক্ষীদের ও ওই এলাকার বাসিন্দাদের খুব সুবিধা হবে – আর বাংলাদেশের মোবাইল পরিষেবার সঙ্গেও এতে কোনো সংঘাত হওয়ার কারণ নেই। সরকারি বিধিনিষেধের কারণে সীমান্ত এলাকার মানুষজন তাদের মোবাইল ফোনে সিগনাল পেতেন না বললেই চলে – আর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফেরও ভরসা ছিল শুধু নিজস্ব ওয়্যারলেস।
তবে ভারতের এই টাওয়ার গুলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ সহ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় কিনা তা বাংলাদেশ কে গভীর ভাবে খতিয়ে দেখতে হবে বলে আমরা মনে করি ।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর তার পরই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বিএসএফের চৌকিগুলো ঘেঁষে মোবাইল টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল। বিএসএনএলের আসাম সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার রাজীব যাদব বলছিলেন, সীমান্তে মোতায়েন জওয়ান ও ওই এলাকার অধিবাসীদের টেলিসংযোগের সুবিধা দিতেই ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত। ভারতের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন মোবাইল টাওয়ার বসানো হলে দেশের সীমান্তরক্ষীদের ও ওই এলাকার বাসিন্দাদের সুবিধা হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই এলাকার লোকজনকে এতদিন আমরা টেলিকম পরিষেবা দিতে পারিনি, তারা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিলেন। এখন বিএসএফ ও এলাকার লোকজনের পক্ষে কমিউনিকেশন অনেক সহজ হবে, এমন কী মোবাইল পরিসেবা থাকলে স্থানীয় মানুষজন বিএসএফকে গোয়েন্দা তথ্যও দিতে পারবেন। আর এই কারণেই আগের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে'।
টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হবে আসামে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়েই – আর মোটামুটি প্রতি চল্লিশ কিলোমিটার পর পর প্রতিটি সীমান্ত চৌকি বা বর্ডার আউটপোস্ট পিছু একটি করে টাওয়ার বসানো হবে। শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভুটান সীমান্ত বরাবর বসবে সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো টাওয়ার। তবে মি. যাদব বলছেন সীমান্তের এত কাছে টাওয়ার বসানো হলেও প্রতিবেশী বাংলাদেশের মোবাইল পরিসেবার সঙ্গে এতে কোনো সংঘাত হবে না। তার যুক্তি হলো, বিএসএনএলের টাওয়ারের রেঞ্জ তিন কিলোমিটারের বেশি নয়। তা ছাড়া সীমান্তের দুদিকেই দুদেশের নিউট্রাল জোন আছে দশ কিলোমিটার করে – কাজেই কোনো কনফ্লিক্ট হবে না।
কিন্তু সীমান্তে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পেলে চোরাকারবারি ও অন্যান্য সীমান্ত-অপরাধীদের কাজে সুবিধা হবে বা এই ধরনের অপরাধ বাড়বে, এমন আশঙ্কাও কিন্তু থাকছে। যদিও উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, সাধারণ মানুষের মন জিততে না-পারলে একটা এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। অনেকটা সেই যুক্তি থেকেই সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের দাবি মেনে নিয়ে ভারত সেখানে মোবাইল টাওয়ার বসাতে রাজি হয়েছে।
তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মোবাইল টাওয়ার বসানো হলে ওই এলাকা আরও সুরক্ষিত হবে কি না তা অবশ্য এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু ভারত সরকার ও ভারতের সীমান্তরক্ষীরা ধারণা করছেন, এতে তাদের জীবনযাপন অবশ্যই অনেক সহজ হবে – আর গোটা সীমান্ত এলাকাই সার্বিকভাবে তার সুফল পাবে।