ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়টি এবার কানাডার সর্বোচ্চ আদালতে গড়িয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রমাণ চেয়েছে অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের আদালত।উল্লেখ্য পরামর্শক নিয়োগ সহ প্রারম্ভিক কাজে আওয়ামী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে সুস্পস্ট দূর্নীতির অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংক এবং বহু দেন-দরবারের পর বাংলাদেশ সরকার তদন্তে সহায়তা না করার অভিযোগে এই বিশাল প্রকল্প(২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ব ব্যাংক।
আদালত পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব তদন্তের নথিপত্র উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে।তবে আদালতের নির্দেশ ঠেকাতে বিশ্বব্যাংক কানাডার সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বব্যাংকের আবেদন গ্রহণ করলেও শুনানির কোনো দিনক্ষণ ঘোষণা করেনি। অন্টারিওর সুপিরয়র কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারক আয়ান নেইমারের আদালতে বাংলাদেশের পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের মামলা চলছে।
এবার অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতের নির্দেশকে ঠেকাতে আইনি লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
এদিকে পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলার আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ায় পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আদালতে বাদী-বিবাদীর বক্তব্য এবং সুপিরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারকের আদেশের সূত্র ধরে ‘চার জন তথ্যদাতা’ নিয়েও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন, বিশ্ব ব্যাংক চারজন বেনামী তথ্যদাতার বরাতে কানাডার ফেডারেল পুলিশ আরসিএমপির কাছে অভিযোগ পাঠিয়েছে।
আরসিএমপিও ‘চারজন বেনামি তথ্য দাতার’ তথ্যের উপর নির্ভর করেই তদন্ত কাজ পরিচালনা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। অপরদিকে বিচারকও তার রায়ে বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের ‘চার জন তথ্যদাতার’ দুইজনকে আদালত ইতিমধ্যে ‘গোপনীয় তথ্যদাতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থ্যাৎ তাদের পরিচয় বা তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যাবে না।
উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি) অনুরোধ জানায়। বিশ্বব্যাংক নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্য ছাড়াও ‘চারজন বেনামি তথ্যদাতার’ দেওয়া তথ্যাদি আরসিএমপির কাছে দেয়। এরই ভিত্তিতে আরসিএমপি কানাডিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কিছু কর্মকর্তার টেলিফোন সংলাপ রেকর্ড করার অনুমতি নেয়।
পরে তারা এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়। ২০১২ সালে মোহাম্মদ ইসমাইল এবং রমেশ শাহকে অভিযুক্ত করে। পরে কেভিন ওয়ালেস ও বাংলাদেশি কানাডিয়ান ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূইয়াকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের এই পর্যায়ে এসে জুলফিকার ভূইয়ার আইনজীবী ফ্রাঙ্ক অ্যাডারিও বিশ্বব্যাংকের তদন্তে পাওয়া তথ্যাদির নথিপত্র আদালতে উপস্থাপনের দাবি জানান। কিন্তু বিশ্বব্যাংক আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। অ্যাডারিও সুপ্রিম কোর্টে জমা দেয়া লিখিত বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন যে, ‘বিশ্বব্যাংক কানাডার বিচার ব্যবস্থার প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে।’
বিশ্বব্যাংকের যুক্তি, আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে বিশ্ব ব্যাংক আইনি দায়মুক্তি ভোগ করে। ফলে সংস্থাটি তার কোনো নথিপত্র কোনো আদালতে জমা দিতে আইনগতভাবে বাধ্য নয়। কানাডার আইনও এই দায়মুক্তি দিয়েছে সংস্থাটিকে। কিন্তু অন্টারিওর সুপরিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের বিচারক আদেশে বলেছেন, আরসিএমপির তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে বিশ্বব্যাংক নিজেই তার দায়মুক্তির লংঘন ঘটিয়েছে।
বিচারক বলেন, কানাডার আইন এমনিতেই পুলিশের স্পর্শকাতর সোর্সের গোপনীয়তার সুরক্ষা দেয়। বিশ্বব্যাংকের ‘চারজন তথ্যদাতা’র মধ্যে দুইজনকে ইতিমধ্যে আদালত গোপনীয় তথ্যদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মামলার শুরুর দিকে আরসিএমপি তার তদন্তে পাওয়া দলিলপত্র আদালতে উপস্থাপন করে। অভিযুক্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রমের উপর ‘প্রকাশনা নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করায় সেই সব নথিপত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়নি।