ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের সম্পত্তি দখলে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের জমিজমা, দোকানপাট, বাড়িঘরে হামলা, নির্যাতনসহ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে এক শ্রেণীর আওয়ামী দুর্বৃত্ত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সরকারের প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইন ও দ্রুত বিচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এবং সরকার ও সব রাজনৈতিক দলে সংখ্যালঘু সেল গঠন করে দ্রুততার সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত।
আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি উষাতন তালুকদার এমপি, সুব্রত রায় চৌধুরী প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসীরা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল করছে বা করার চেষ্টা করছে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল ও দখলের চেষ্টা করছে।
পিরোজপুরে সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে স্বরূপকাঠিতে জনৈক ব্যবসায়ীর দোকান দখলের অপপ্রয়াস চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
তিনি বলেন, হুইপ মাহবুব আরা গিনির বিরুদ্ধে গাইবান্ধার রামগঞ্জ মিশন ও আশ্রমের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
ফরিদপুরে ভাজনডাঙ্গার জমিদার সতীশ চন্দ্র গুহ মজুমদারের বাড়ি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে জমিদার বাড়ির পুরোনো ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ।
রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘জমিদার বাড়ি দখলের এই সংবাদটি আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু যদি সত্য হয়, তবে এ দেশের সংখ্যালঘুরা কোথায় যাবে? আমাদের কাছে খবর আছে, ফরিদপুরে দেবোত্তর সম্পত্তি বিলুপ্তির পথে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা কারও ভোট ব্যাংক নই। আমাদের বেয়াকুব ভাবা ঠিক হবে না। নাচতে নেমেছি, কিন্তু ঘোমটা দেব না।’ সংখ্যালঘু নির্যাতনের আরো চিত্র তুলে ধরে জানানো হয়—লক্ষ্মীপুরের দালালবাজারে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসীরা জমিদার বাড়ির ৩৬ একর দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছে। নাটোরের সিংড়ায় মুক্তিযোদ্ধা ননীগোপাল কুণ্ডু ও তার স্ত্রী চিত্রা রাণীকে খুন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে কলেজ ছাত্রী শিল্পী রাণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কক্সবাজারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাস চালিয়ে তাদের জায়গা দখল করেছে জাবেদ কায়সারের সন্ত্রাসী বাহিনী।
সালাউদ্দিন সেতু বৌদ্ধ বিহারের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে। বরিশালে চার্চের পুকুর ও জমি দখল করে আইনজীবী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আরো অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে সরকারি দলের অফিস ও মুক্তিযোদ্ধাদের অফিসের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ঐক্য পরিষদ।