ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরের দুর্নীতি তদন্তে গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক টিমগুলোকে দিয়ে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি রোধ করা যাচ্ছে না।
এজন্যই টিমগুলো বিলুপ্ত করে কমিশনের সরাসরি তদারকির আওতায় দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিশেষ ক্ষমতায় গঠন করা হবে টাস্কফোর্স।
দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান এ কথা জানান। টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান জানান, ১০ সদস্যদের ওই টাস্কফোর্সে কারো কাজই নির্দিষ্ট করা থাকবে না। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো দুর্নীতি সংক্রান্ত ঘটনা খতিয়ে দেখতে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী টাস্কফোর্স সদস্যরা কাজ করবেন।
সরাসরি কমিশনের আওতায় একজন মহাপরিচালক টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দেবেন। আর কমিশন সরাসরি তাদের কাজ তদারক করবেন। একই সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঝটিকা অভিযান চালানোর ক্ষমতাও থাকবে এই টাস্কফোর্সের।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হবে এই টাস্কফোর্স। সরকারের কোনো দফতরে যখনই কোনো দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যাবে তখনই বেশ কয়েকজন সদস্যকে সেখানে পাঠিয়ে তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখার নির্দেশনা থাকবে।
প্রাতিষ্ঠানিক টিমগুলো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, উল্লেখ করে মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক টিমগুলো থেকে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমরা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে যেমন সিটি করপোরেশন জন্য একটি টিম, অন্য প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি তদন্তে আরেকটি টিম কাজ করছে। আগামীতে আর এভা্বে নির্দিষ্ট টিম থাকবে না। তখন কমিশন যখন টাস্কফোর্সের যে সদস্যকে পাঠাবে সে কাজ করবে।
তবে যাদের নির্দিষ্ট অভিযানে পাঠানো হবে তাদের মধ্যে যে সিনিয়র সেই ওই কাজে নেতৃত্ব দেবেন। অর্থাৎ দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজকে আরো গতিশীল করাই টাস্কফোর্স গঠনের মূল উদ্দেশ্য।’
এর আগে ১০ আগস্ট দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের সামনে টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় দুদক কমিশনার বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক টিমগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং অনুসন্ধান-তদন্ত কাজে স্থবিরতা দূর করতে দুদকের প্রাতিষ্ঠিানিক টিম বিলুপ্ত করে ১০ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির খবর পেলেই টাস্কফোর্স সরকারি বিভিন্ন দফতরে ছুটে যাবে।’
এ বিষয়ে দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি বিভাগ ও সেবা খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য ২০১২ সালে প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি), সড়ক ও জনপথ (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), আবাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)- এসব বিভাগ ও দফতরের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে দুদকের ১১টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম। এ ছাড়া ২০১৪ সালে সর্বশেষ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধানে আরো একটি টিম গঠন করা হয়।
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এই ১১টি প্রাতিষ্ঠানিক টিমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। এর ওপর নানা জটিলতায় প্রাতিষ্ঠানিক টিমগুলোর গতিশীলতা নষ্ট হয়। এ ছাড়া এনবিআর, রাজউক, ডিসিসিসহ বেশ কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক টিমের অধিকাংশ কর্মকর্তা ঢাকার বাইরে বদলি হওয়ায় টিমগুলো কার্যত অকার্য্কর।
দফায় দফায় টিম পুনর্গঠন করেও তাদের অনুসন্ধান ও তদন্তের কাজে গতি আনা যায়নি। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানিক টিম নিয়ে কমিশনের অনিয়মিত বৈঠক, অভিযুক্তর সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক টিমের সদস্যদের যোগসাজশ, টিম সদস্যদের বিরুদ্ধে ভয়-ভীতির হুমকি, কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। টাস্কফোর্স গঠন হলে এসব অসঙ্গতি দূর করে দুদকের কার্যক্রম গতিশীল হবে বলেও জানান দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান ।