DMCA.com Protection Status
title="৭

১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নাটের গুরুদের বিচার আজও হয়নি, কেনো?

15aug4ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এর বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের দুঃখজনক হত্যাকান্ডের পর দির্ঘ ৪০ বছর কেটে গেলেও এর সাথে জড়িতদের ব্যাপারে কোন সূরাহা আজও হয়নি।আওয়ামী লীগ বার বার সু পরিকল্পিত ভাবে তৎকালীন উপ-সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানকে এর সাথে জড়ানোর চেষ্টা করলেও এর সপক্ষে তারা কোন সাক্ষ্য প্রমান তারা আজও উপস্থাপন করতে পারেনি।অথচ এই হত্যাকান্ডের ফলশ্রুতিতে যে আওয়ামী লীগ নেতারা এবং সামরিক নেতৃত্ব ক্ষমতা গ্রহন করেছিলেন তাদের ব্যাপারে আওয়ামী বরাবর নিরব থেকেছে।এদের বিচারের আওতায় না এনে বরং বিভিন্নভাবে পুরষ্কৃত করা হয়েছে বলা যায়।

bangabandhu-comilla-military-academyজিয়াউর রহমানের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী কর্নেল ফারুকের গ্রানাডা টেলিভিশনে দেয়া একটি সাক্ষাতকারের রেফারেন্স দিয়ে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা।কিন্তু কর্নের ফারুকের নিজস্ব উক্তিতে উনি যে কারও নাম বললেই তা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে কেনো ? জিয়াউর রহমানই যদি এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের প্রধান নাটের গুরু হয়ে থাকেন তবে তাকে মোশতাক-ফারুক-রশীদ চক্র ১৫ ই আগস্টের পর সফিউল্লাহর বদলে তাকে সেনা প্রধান করলেন না কেনো ? সেটাই তো অধিকতর নিরাপদ ও যুক্তি সংগত হতো তাই নয় কি?মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে এই খুনিদের বিচারে পথ রুদ্ধ করে গেলেও আওয়ামী লীগ অতি সন্তপর্নে এ কুখ্যাত অর্ডিন্যাস্স এর সাথে জিয়াউর রহমানের নাম জড়িয়ে প্রচার করে থাকে,যা সর্বৈব মিথ্যা।

এমনকি ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মোশতাকের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্য শুরু করে।সময়ের পরিক্রমায় এই বিচার কাজ শেষ হয় এবং কারাগারে থাকা কয়েকজন আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরও করা হয়।আমার প্রশ্ন হচ্ছে জিয়াউর রহমান যদি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হয়েই থাকেন তবে তার নাম বিচারিক কার্যক্রমে আসেনি কেনো ?এক্ষেত্রে তার মরনোত্তর  বিচারের পূর্ন সুযোগ ছিলো ।কেনো তা করা হয় নি? উত্তরটি খুবই সোজা।এসব মিথ্যা কথা বলে নতুন প্রজন্মকে বিকৃত ইতিহাস জানানোই হচ্ছে আওয়ামী লীগের দুরভিসন্ধী।

 

15aug5বঙ্গবন্ধুর হত্যার নেপথ্যে কারা ছিল তা নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল এবং এখনও আছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীরা যদিও কিছু কিছু কারণ নিজেদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্যে উপস্থাপন করে গেছেন। তাঁর পরও আসলেই কেন তারা এটা করেছে, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোন গোষ্ঠী তাদেরকে দিয়ে এটা করিয়েছে কিনা সে ব্যাপারগুলো অনেকটাই এখনো অস্পষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারাটা অনেকটাই দোষারোপের পদ্ধতি অনুসরণে চলমান। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামীলীগ নেতারা সবাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, সম্মুখ সমরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পরও তাঁর দেশ প্রেম নিয়ে সন্দেহ করেন অহরহ। মানুষের মনের খবর জানেন একমাত্র আল্লাহ তিনিই ভালো জানেন জিয়াউর রহমান আসলে কেন যুদ্ধ করেছিলেন।

inu2আওয়ামীলীগের দীর্ঘ দিনের সরকার পরিচালনাকালে ১৪দলীয় জোটের নেতারা জিয়াউর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে এমনভাবে দেশ ও জাতির সামনে উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছে যা থেকে নতুন প্রজন্ম এই মেসেজটাই পেয়েছে যে ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাজাকার! তিনি সেক্টর কমান্ডার হয়ে যুদ্ধ করেছেন এবং জয়লাভ করলেও তা করেছেন একমাত্র পাকিস্থানের স্বার্থে। তিনি নিজ কণ্ঠে বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং দেশের মানুষকে সংগ্রামে আহবান করেছেন তাও পাকিস্তানের স্বার্থে।‘ যদিও একজন বিবেকবান এই বিষয়গুলো নিয়ে একটু চিন্তা করলেই সহজে সমাধান পেয়েও যেতে পারেন। বিষয়টা অনেকটাই এমন জিয়াউর রহমান যদি পাকিস্তানের স্বার্থেই যুদ্ধ করেন এবং পাকিস্তানও জিয়াউর রহমানের সাথে গোপনে চুক্তি করে তাহলে কেন জিয়াউর রহমান জীবনবাজী রেখে যুদ্ধে যাবেন?

কেন তিনি তখন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন? অনেকে বলতে পারেন বঙ্গবন্ধুর নামে ডাক না দিলে কেউ সাড়া দিত না! তাঁদের মনের খোরাক দিতে এটা বলতে চাই যে তাহলে যুদ্ধ শেষের পর তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্র প্রধান ঘোষণা করতেন! কিংবা তখনই ক্ষমতা দখল করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।

তাছাড়া সে সময়ের চৌকস সেনা-কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম দাবি করেছেন, ‘জুনিয়র কর্মকর্তা শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। সে সময় বঙ্গবন্ধু যদি জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করতেন তাহলে হয়তো ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটতো না।’

তাই আমি জিয়াউর রহমানের দেশ প্রেম এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কোন সন্দেহ করতে চাইনা। এটি রাখতে চাই বিতর্কের ঊর্ধ্বে। নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড আমাদের দেশে নতুন একটি সঙ্কট তৈরি করেছে। সমালোচক এবং জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁকে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী চক্রান্তকারীদেরই একজন মনে করেন। এমনকি অন্যদের তুলনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় সীমাহীন। বংলাদেশের দল নিরপেক্ষ কোন ইতিহাস আছে বলে আমার মনে হয়না।

আওয়ামীলীগ যেমন তাঁদের নেতাকর্মীদেরকে নিজেদের দলের স্বার্থ বিবেচনায় ইতিহাস শেখায় অনুরুপভাবে বিএনপিও তাঁর নেতাকর্মীদেরকে নিজেদের দলের স্বার্থ মাথায় রেখেই রচনা করেছে ইতিহাস। দলের পাশাপাশি এই দুই দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবী এবং ইতিহাসবিদরাও লেখেন দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় কলাম এবং ইতিহাস। যেখানে তাঁদের নিজ দলের সাফাই এবং অন্যদলের বিরুদ্ধে থাকে অনেক অভিযোগ। একই কথা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

যেমন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে নিজস্ব বইয়ের ভাণ্ডার এবং যেগুলো তাঁদের নেতাকর্মীদের জন্য অধ্যায়ন অনেকটাই বাধ্যতামূলক। জামায়াতের কোন কর্মী যদি অশিক্ষিত হন তাহলেও তিনি বাদ যান না এই অধ্যায়ন পদ্ধতি থেকে। সেক্ষেত্রে তারা যে পদ্ধতি অনুসরণ করেন তা হল ‘শ্রবণ শিক্ষণ’। এই পদ্ধতিতে শিক্ষিত কর্মী বইগুলো জোরে জোরে আওয়াজ করে পড়েন এবং অশিক্ষিত কর্মী সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করেন এবং আত্মস্থ করার চেষ্টা করেন।

জামায়াতের লেখা ইতিহাসগুলোর মধ্যে সাবেক জামায়াত আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের লেখা ‘জীবনে যা দেখলাম’, জামায়াত ইসলামের ইতিহাসসহ বিভিন্ন গ্রন্থ উল্লেখ যোগ্য। তবে জামায়াতের কপাল ভালো বাংলাদেশ ভাগের বিরোধিতার অভিযোগ আনা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়ে অভিযুক্ত করে আজ পর্যন্ত কোন বক্তব্য শুনিনি।

অন্যদিকে জাসদ, জাতীয় পার্টিসহ বাকি দলগুলোরও রয়েছে কিছু কিছু রচিত গ্রন্থ। তবে এদের বিরুদ্ধে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে থাকার অভিযোগ। আসল কথায় আসি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় জিয়াউর রহমানকে যেভাবে ঢালাওভাবে দায়ী করে এতদিন আওয়ামীলীগ তথা ১৪দলীয় জোট যে বক্তব্য দিতো গত কয়েকদিন তা অনেকটাই অলৌকিকভাবে ১৪দলীয় জোটের নেতারা নিজেদের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

শুধু তাই নয় এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ বনে গেছে। দিচ্ছে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য বিবৃতি। যা থেকে স্পষ্টত তৈরি হচ্ছে নতুন ইতিহাস। হতে পারে এটাই প্রকৃত ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা ছিল তা গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আসুন আমরা কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য দেখি।

রোববার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম মন্তব্য করেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বঙ্গবন্ধুর হত্যার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল।

inu1’ ‘জাসদই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের এমন বক্তব্য দেয়ার পর একই কথা বলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। মঙ্গলবার রাজধানীর আজিমপুরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি বলেন, জাসদ ও ন্যাপসহ যারা বাম রাজনীতি করতেন বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরে তারা বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন। কেন করেছিলেন, তারাই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। তাদের ঔদ্ধত্য এমন পর্যায়ে ছিল যে, একটা সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য যা যা করণীয় তারা তাই করেছিলেন। আর তারাই ওই সময় তৈরি করেছিলেন জাতির পিতাকে হত্যার প্রেক্ষাপট।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য হাট-বাজার লুটপাট, ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, সাধারণ মানুষকে হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা এমনকি ঈদের নামাজের জামায়াত শেষে আওয়ামী লীগের এমপিদের হত্যা পর্যন্ত করেন তারা। এ সমস্ত কাজের লক্ষ্য ছিল একটাই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অস্থিতিশীল করা। সেই কারণেই কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছিল।'

ওই দিনের অন্য একটি অনুষ্ঠানে ‘১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর সেদিন যারা ট্যাংকের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল তাদের ভুলেননি বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন। জাসদের নাম উল্লেখ না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল, কথিত সেই বিপ্লবীদের কথা আমরা ভুলিনি। পঁচাত্তরের আগে বিপ্লবের নামে রাজনীতিতে অস্থির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। আর তার খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হয়েছে।‘

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘পঁচাত্তরের আগে বিপ্লবের নামে রাজনীতিতে অস্থির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। তার খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হয়েছিল।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কথিত বিপ্লবীরা হত্যার সময় ভুলে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার ধমনীতে তার (বঙ্গবন্ধুর) রক্ত প্রবাহমান। বঙ্গবন্ধুর কন্যাই তার বাবার খুনিদের বিচার সম্পন্ন করবে।’

এখানে উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুর স্ব-পরিবারে নিহতের খবর শুনে খুশিতে বর্তমান তথ্য মন্ত্রী এবং জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু তাঁর বিপ্লবী সঙ্গীদের সাথে নিয়ে ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে।

 ইনু ও আনোয়ারই মনসুর আলীর বাড়ী ঘেরাওয়ে প্রথম গুলি করে: গয়েশ্বরঃ

এদিকে আওয়ামীলীগের পাশাপাশা এ বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে বিএনপিও। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম মনসুর আলীর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করতে দেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, গুলিটা প্রথম আনোয়ার হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেই শুরু হয়। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, ১৯৭৪ সালে আমি জাসদে ছিলাম। আমাদের একটা সিদ্ধান্ত হল, আমরা গ্রেপ্তার-অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করব। কিন্তু ঘেরাও কর্মসূচিতে সশস্ত্র আক্রমণ, এটা আমাদের জানা ছিল না। ছিলেন কে- হাসানুল হক ইনু। আর কে ছিলেন, কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকদিন আগের ভিসি আনোয়ার হোসেন। আমরা জানি, মন্ত্রীর বাড়ির গেইটের সামনে যাব, সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আসবে, স্মারকলিপি নেবে। কিন্তু গুলিটা প্রথম এই আনোয়ার হোসেন ও হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বেই শুরু হল। যখন আত্মরক্ষার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন থেকে পাল্টা গুলি এল, তখন আমরা দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করছি। কারও হাত নেই, কারও পা নেই। কত জন মারা গেছে- তখন জানার সুযোগ ছিল না। গয়েশ্বর আরো বলেছেন, ৭৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দেয় জাসদ। সেই হরতালে বোমা ব্যবহারের জন্য বোমা বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার নিখিল চন্দ্র সাহাকে। যাত্রাবাড়ীর একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে নিখিল বোমা বানাতে যায়। বোমাতে মিশানো জিনিস কোনটা আগে দিতে হয়, পরে দিতে হয়- এরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে হঠাৎ করে তার নিজের হাতের মধ্যে একটা বোমা ফাটে। নিখিলের সন্মানার্থে পেট্রোল বোমার নাম রাখা হল ‘নিখিল’। আপনারা তথ্যমন্ত্রীকে (হাসানুল হক ইনু) জিজ্ঞাসা করবেন, বোমার অপর নাম নিখিল ছিল কি না? বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র রাজনীতি শুরু করেছে। এটা ঐতিহাসিক সত্য।

একই সুরে কথা বলেছেন বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, “১৯৭২ থেকে ৭৫ এর মধ্যে দেশে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছিল এর জন্য দায়ী ছিল জাসদ। এর অন্যতম নেতা হলেন হাসানুল হক ইনু। ওই সময়ে যা হয়েছিল তা দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট করতে হবে।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও অভিযোগ করেছেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কর্নেল তাহের ও ইনু’রা স্বশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। আজ তারাই বড় আওয়ামী লীগার। শেখ হাসিনা একটি কথা বললে ইনু আগ বাড়িয়ে আরো বেশি বলেন।’ এগুলো সব কিছু ঐতিহাসিক তথ্য। তবে রাজনৈতিক কারনেই এতদিন হয়তো কেউ মুখ খোলেনি!

যার শুরু হয়েছিল শেখ সেলিম এবং তৎকালীন সেনা প্রধান শফিউল্লাহ এর একটি ইন্টারভিউ থেকে। যেখানে তাঁরা একে অন্যকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেন। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির এক বিশেষ খবরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহকে মুখোমুখি করা হয়। তারা ১৫ আগস্টের ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তাদের কথোপকথন ছিল এরকম;

শেখ সেলিম: আক্রান্ত হওয়ার পর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু প্রথমে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে টেলিফোন করেছেন। বলেছেন আমার বাসায় আক্রমণ হয়েছে। তুমি দেখ।

শফিউল্লাহ: আমাকে বঙ্গবন্ধু ফোন করেননি। আমি জানতে পারি তখন সকাল সোয়া ৫টা সাড়ে ৫টার মধ্যে কোনো সময় হবে।

শেখ সেলিম: সেনাপ্রধান হিসেবে ৩২ নম্বরে সে (শফিউল্লাহ) আসার চেষ্টা করেনি। ৩২ নম্বরে কি হয়েছে জানার চেষ্টা করেনি। খবর শুনে উনি সেনাবাহিনীর কাউকে বলেননি আসেন ৫টা ট্যাঙ্ক নিয়ে যাই; দেখি বঙ্গবন্ধুর বাসায় কি হয়েছে।

শফিউল্লাহ: ট্যাঙ্ক মাসে দুইবার নাইট ট্রেনিং করে। ১৫ আগস্ট তারিখে ট্রেনিং ছিল। ওটাকে দেখিয়ে তারা ট্রাঙ্ক বের করেছে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

শেখ সেলিম: এটা সত্য নয়। ট্যাঙ্ক সব সময় বের হয় না। উনি সব মিথ্যা কথা বলছেন।

শফিউল্লাহ: আমি যখন জানতে পারি নো বডি এলাউ। আমি গিয়ে ডেডবডি দেখলে কি লাভ হতো?

শেখ সেলিম: শফিউল্লাহ কেন নীরবতা পালন করলো? সেদিন উনি বাসা থেকে বের হননি। মারাটারা যাওয়ার পর উনি মিটিং-এ বসেছে।

শুধু রশিদ-ফারুক নয়; হত্যার পেছনে আরো শক্তি জড়িত ছিল। ক্ষমতার লোভে এই কাজগুলো করেছেঃ শফিউল্লাহ:

সেলিম কি বললো আই ডোন্ট কেয়ার। আমিতো মনে করবো খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে শেখ সেলিমের আঁতাত ছিল। সে তাহলে ১৫ তারিখে কেন আমেরিকান অ্যাম্বেসিতে গিয়েছিল সাহায্যের জন্য?

শেখ সেলিম: না না আমি মার্কিন অ্যাম্বেসিতে যাইনি। উনি (শফিউল্লাহ) যে অপকর্ম করেছে। ওনাকে একটা কিছুতো বলতে হবে। উনি আমাকে অ্যাম্বেসিতে দেখছিলেন না! তাহলে উনি গিয়েছিলেন?

শফিউল্লাহ: ১৫ আগস্ট (সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে) আমার কোনো ভুল ছিল না। যা হয়েছে আমার কিছু করণীয় ছিল না।

শেখ সেলিম: সে (সেনাপ্রধান হিসেবে শফিউল্লাহ) যদি অবস্থা জেনে সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে বাঁচানো যেত। এটা আমি মনে করি।

শফিউল্লাহ: ওই সময় আওয়ামী লীগের লোকজন যদি ধাওয়া করে সেনানিবাসের দিকে ঢুকতো। তাহলে প্রতিরোধ করতে পারতো কেউ?

শেখ সেলিম: গোটা জাতি হতভম্ব হয়েছিল।

শফিউল্লাহ: কথা বলা যায়। কাজের কাজ হতো না। কাজও করেনি কেউ।

শেখ সেলিম: যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছেন; সেই নেতা কীভাবে বিশ্বাস করে বাঙালি জাতি তাকে মারবে?’

ইনু এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেঃ

গত কয়েকদিন যে নামটি বিশেষভাবে উঠে আসছে তা হল বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ইনুর। তিনি সে সময়ে জাসদ নেতা ছিলেন। ১৪দলীয় জোট সরকারের পুরো সময়টাই তিনি বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর যে পরিমাণ প্রশংসা করে মুখে ফেনা তুলেছিলেন ঠিক একই পরিমাণে বিশদাগার করেছেন জিয়াউর রহমানের নাম এবং তাঁর অর্জনের। এখন তিনি অনেকটাই হটাত ফুটো হওয়া বেলুনের মতো চুপসে গিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। একটি বিষয় খেয়াল করলে আপনারা আরও পরিষ্কার ধারণা পাবেন তা হল তথ্যমন্ত্রী সাহেব কিন্তু বিষয়টি তেমন জোরালোভাবে প্রতিবাদ করছেন না! বরং নিজের ঢোলের কাঠি নিজ হাতে রেখে সাবধানেই পিটিয়ে চলেছেন। যেটি লক্ষ্য করা যায় তাঁর বুধবারে দেয়া বক্তব্য থেকে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জাসদকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের দেয়া বক্তব্য ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশে হঠাৎ করে এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় চার নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গঠিত খন্দকার মোশতাক সরকারে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জাসদের কোনো নেতাকর্মী সেই সরকারে যোগ দেননি।

বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম আড়াল করতেই এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জাসদ রাজনৈতিক দল হিসেবে কী কর্মকাণ্ড করেছে, কী ভূমিকা রেখেছে, জাসদ নেতাদের কী ভূমিকা ছিল তা পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।

সাবেক গনবাহিনী প্রধান এবং এখন জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, জাসদ সৃষ্টির পর থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিভিন্ন সময় নেওয়া পদক্ষেপ ভুল ছিল না সঠিক ছিল, সেটি ইতিহাসই বিচার করবে। সাম্প্রতিক কালে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও বিএনপি নেতারা হঠাৎ করেই জাসদের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু করেছেন উল্লেখ করে ইনু বলেন, বিএনপির নেতারা জাসদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন, আমি তাদের সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হতে চাচ্ছি না।

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে জাসদ একটি প্রচারপত্র দেয়। মোশতাক সরকারের ৮৩ দিনের শাসনকালে জাসদের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হয়। জাসদের কোনো নেতা মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলায়নি। কারা খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন, তা আপনার জানেন। তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবং জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার পরিচালনায় একসঙ্গে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবার জন্য এই ঐক্যের প্রয়োজন আছে। শুধু তাই নয়, বিজয় নিশ্চিত করার পর তাকে সংহত করার জন্য এই ঐক্য অব্যাহত রাখা দরকার।’ এদিকে জাসদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ গোফরান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেছেন, উপনিবেশিক আইন কানুন ও রাষ্ট্র প্রশাসন দিয়ে স্বাধীন দেশ পরিচালনা এবং বাকশাল গঠনই বঙ্গবন্ধু হত্যার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অন্যথায় কোন ষড়যন্ত্রকারী বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাহস পেতনা। অথচ আজও একই ধরনের আইন কানুন ও রাষ্ট্র প্রশাসন বিদ্যমান রয়েছে। তা পরিবর্তনের উদ্যোগ না নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চলছে। তথ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দল কোন অভিযোগ অস্বীকার না করে বরং অনেকটা নিজেদের পক্ষেই সাফাই গাইছেন। এখন আরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বিচার করা যাক।

 এদিকটি বিবেচনা করে দেখা যায় হাসানুল হক ইনুর সঙ্গীরা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা বলতেন এবং ধর্মীয় বিষয়গুলোকে মর্যাদা দিতেন। অর্থাৎ জাসদের সাথে বঙ্গবন্ধুর একটি আদর্শগত মতপার্থক্য আগে থেকেই ছিল। আর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতার দরকারতো ছিলই। কাজেই বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার ঘটনায় জাসদের বিপ্লবীরা সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের উপর খুশিতে নাচবে এটাই স্বাভাবিক! কারণ বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলার মহান নেতার তিরোধান ঘটে এবং জাসদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কিছুটা হলেও সরল হয় বলে ভেবে নেয় তাঁরা। যেটি কর্নেল তাহের এর উদ্দেশ্য এবং তাঁর ভাইয়ের দেয়া সাক্ষাৎকার থেকে সহজেই অনুমান করা যায়।

সত্যের জয় চিরদিনঃ

এবার আসি জিয়াউর রহমানের দিকে অজানা তীর ছোড়া প্রসঙ্গে। এতদিন তথ্যমন্ত্রী ইনু জিয়াউর রহমানকে যে হারে আক্রমণ করে কথা বলেছেন ঠিক তাঁর থেকে বেশি কার্যকরীভাবেই জিয়াউর রহমানের জায়গায় এখন তাকে লক্ষ্য করে আক্রমন হচ্ছে । এখন আওয়ামীলীগ নেতারা জিয়াকে যতটুকু আলোচনায় আনছেন তাঁর থেকে বেশি আনছেন জনাব ইনুর কথা।  এভাবে কিছু দিন চলতে থাকলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় কার্যকরী নেপথ্যে যারা ছিলেন সেই তালিকায় ইনুর নামটা থাকবে প্রথম কয়েকজনের মধ্যে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!