ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে আওয়ামী সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্লজ্জ ভাবে বাধার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলটির অভিযোগ, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে হাতে নেওয়া নানা কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা প্যান্ডেল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার দুপুরে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এসব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি তার ৩৭তম প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে। সরকার সারাদেশে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে বাধা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে ৫০টি জেলায় প্রায় ৪০০ উপজেলায় বাধা দিয়েছে। তারা আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতাবার্ষিকীর পোস্টার, ব্যানার, বেলুন উড়াতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানে প্যান্ডেল ভেঙে ফেলছে। শেরেবাংলা নগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ‘জিসাস’ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির প্যান্ডেলও সোমবার দুপুরে পুলিশ ভেঙে দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনপূর্ব সভা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, মঙ্গলবার (১লা সেপ্টেম্বর) বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৮ম কারামুক্তি দিবস এবং ১১ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ৮ম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এ সমন্বয় সভা করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নাম উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ইনু রাজনীতিতে এখনও পুরনো কার্ড খেলে যাচ্ছেন; যা আর চলছে না। অচল হয়ে পড়েছে। তাকে নতুন কার্ড খেলতে হবে। ইনু সবসময় জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির বিরোধীতা করে বক্তব্য দেন। এটা এখন জনগণ আর গ্রহণ করছে না।
আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, যখনই রাজনীতির ‘প্যালাসাইট’ বা পরগাছা জনসমর্থনহীন ইনু দেখেন তার মন্ত্রীত্ব পদ টলটলায়মান, তখনই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১৪ দলীয় জোটকে খুশি করতে এসব খিস্তি গেয়ে থাকেন। উদ্দেশ্য মন্ত্রীত্ব রক্ষা করা। তিনি মনে করেন, এসব করলে শেখ হাসিনা খুশি হবেন আর তার মন্ত্রীত্বও রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, এই ইনু ও তাদের গড়ে তোলা স্বশস্ত্র অবৈধ সংগঠন গণবাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই দেশের রাজনীতি উত্তাল ও হিংস্র হয়ে উঠেছিল। ইনুদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই আজকের প্রধানমন্ত্রীর পিতার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। ইনু যতই চেষ্টা করুন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কি তা ভুলাতে পারবেন? তিনি কি ভুলে যাবেন তার পিতার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা?
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দলীয়ভাবে সহানুভুতি জানিয়ে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় অসহায়। তাকে যারা রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, যাদের নেতৃত্বে ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনায় তার পিতার করুণ পরিণতি হয়েছিল; আজকে ক্ষমতার প্রয়োজনে তাদেরকে মন্ত্রী সভায় স্থান দিতে হয়েছে। আমরা শেখ হাসিনার প্রতি সহানুভুতি জানাই।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব হত্যায় যারা অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন, সেইসব মানুষদের গাড়িতে আজ পতাকা উড়ছে। এটা ইনুর জন্য সৌভাগ্য আর প্রধানমন্ত্রীর জন্য চরম দুর্ভাগ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আরও দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, তাকে প্রতিদিন মন্ত্রী সভায় ইনুর চেহারা দেখতে হয়।
বিএনপির মুখপাত্র আরও বলেন, গতকাল (রবিবার) বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট আয়োজিত শেখ মজিবরের মৃত্যুবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় ইনু আবারও জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে নিয়ে গালিগালাজ করে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন। যা সত্যেরে অপলাপ ছাড়া কিছু নয়। ‘৭২-৭৫ সাল পযর্ন্ত জাসদ ও গণবাহিনী সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল। গণবাহিনী কোনো আইনী বাহিনী ছিলনা। তারা একটি বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। ইনু ছিল তার সেকেন্ড ইন কমান্ড, উপ অধিনায়ক। আজকে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড থেকে নিজে রক্ষা পেতে জিয়াউর রহমান ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ইনুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কাঁচের ঘরে থেকে ঢিল ছুড়বেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মুখপাত্র রিপন বলেন, সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা এক কথায় শুধু দুঃখজনক বললে শেষ হবে না। আমাদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগুরুরা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের সোনার ছেলে ও ছাত্রনামধারীদের হাতে নিয়মিত ‘গুরুদক্ষিণা’ পেয়ে থাকেন। এটা নিন্দনীয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, মহিলা দলের সভাপতি নূরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, মৎসজীবী দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের সহ সভাপতি নাজমুল হাসান প্রমুখ।