দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ লাস্যময়ী মডেল-অভিনেত্রী সুজানা গায়ক হৃদয় খানের সঙ্গে তার সংসার ভাঙা প্রসঙ্গে বলেছেন, তিন বছরের বন্ধুত্বের সম্পর্কের সময়ে হৃদয় খানের মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়। হৃদয় নিয়মিত নামাজ-কোরআন পড়তেন, রোজা রাখতেন, ড্রিংকস ছেড়েছেন- সবই ভালোবাসার কারণে। এজন্যই তার প্রতি ‘বিশ্বাস’ জন্মেছিল এবং দু’জনের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর এসবের এক ফোঁটাও নেই।
ঢাকা এফএম রেডিও’র স্টুডিওতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব বলেন সুজানা। রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠানে হৃদয় খানের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের নানা বিষয় তুলে ধরেন তিনি। সাড়ে তিন বছর প্রেম করার পর গত বছরের ১ আগস্ট মডেল সুজানাকে বিয়ে করেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হৃদয় খান। এটি ছিল দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে। মাস তিনেক যেতে না যেতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। একটা পর্যায়ে তা চরম আকার ধারণ করে। অবশেষে গত ৬ এপ্রিল ডিভোর্সের মাধ্যমে আট মাসের সংসার জীবনের অবসান ঘটান তারা।
ভাঙনের কারণ সম্পর্কের ভাঙনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার সুজানা বলেন, “পৃথিবীতে কি কোথাও লেখা আছে পুরুষের কথামতো হুবহু চলবে তার স্ত্রী? মনে হয় হৃদয় জোর খাটাতে চাচ্ছিল- আমার বউ আমার কথামতো চলবে।ৃকোনো স্বামীরই উচিত নয়- তার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ বলে তাকে এতোটা ছোট করা।” তিনি বলেন, “ডিভোর্সের ১০-১২ দিন আগেও বাসার বাইরে দু’জন বসেছিলাম নিজেদের বিষয়গুলো ঠিকঠাক করার জন্য। কিন্তু হয়নি। কোনো পজেটিভ কিছু তো দূরের কথা, তার ব্যবহার, স্টাইল সব বদলে গেছে। আগের হৃদয়কে যা দেখেছিলাম, তার এক ফোঁটাও সেদিন দেখিনি।” বিয়ের আগে যেমন ছিল “বিয়ের আগে কোরআন ছুঁয়েও হৃদয় বলেছে- মরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সুজানাকে ছাড়ব না। আমার প্রতি তার ভালোবাসা যেভাবে মানুষকে বলে সেভাবে আমাকে দেখায় না। লোক দেখানো ভালোবাসা আমি পছন্দ করি না।”
ভালোলাগা থেকে কীভাবে বন্ধুত্ব, প্রেম ও বিয়ের সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছে সেসব নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন সুজানা। তিনি বলেন, “তিন বছর ধরে তার (হৃদয়) সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, প্রেম হয়নি। সম্পর্কের দু’বছর পর থেকে বুঝতে লাগলাম সে আমাকে ভালোবাসার কারণে অনেক অভ্যাস চেঞ্জ করে ফেলছে। বিভিন্ন উপলক্ষ এলে আমাকে অনেক গিফট দিত, কিন্তু আমি সেগুলো নিতাম না। কারণ যদি সে ভাবে- আমিও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি? বারবার তাকে বলতাম- তুমি আমার ভালো বন্ধু।” “আমাকে সে অনেক রেসপেক্ট করত। আমার সব কথা শুনতো। মাঝে কাজ করত না। আমি বলে তাকে অ্যালবামের কাজ করিয়েছি। নানা কারণে তার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারতাম না। যদি বিয়ের পর সে বদলে যায়? তাছাড়া সে বয়সে আমার ছয় বছরের ছোট।” যেভাবে প্রেম হয় সুজানা বলেন, “যে হৃদয় নামাজ পড়ত না, তাকে আমি নামাজ পড়িয়েছি, কোরআন পড়িয়েছি। গত রমজানে খতম তারাবিহ পড়া শেষে আমাকে এসে বলতো- ‘তোমার জন্য’। আচ্ছা আমার জন্য বা যার জন্য হোক নামাজ-কোরআন পড়তো, এসব আমার কাছে ভালো লাগত।”
২০১০ সালের শুরুর দিকে পূর্ণিমা আকতার নামের একটি মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন হৃদয় খান। ছয় মাসের মাথায় হৃদয় খানের সেই সংসার ভেঙে যায়। তার আগে সাত বছর প্রেম করেন নওরীন নামের আরেকজন মেয়ের সঙ্গে।
অন্যদিকে ২০০৬ সালে ঢাকার একটি বায়িং হাউসের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদেকে প্রথম বিয়ে করেন সুজানা। তার সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার মাস। এসব প্রসঙ্গে সুজানা বলেন, “আমাদের দু’জনেরই একটা অতীত আছে। সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। হৃদয় সবাইকে বলত- আমি কি বুক কেটে দেখাব সুজানাকে কত ভালবাসি। শেষ পর্যন্ত বিয়ের চার-পাঁচদিন আগে বলেছিলাম- আমার আম্মু চাইলে হৃদয়কে বিয়ে করব।” “বিয়ের দিন রাতে হৃদয়ের মা, নানী, খালা, মামা সবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন আসতে চান। কিন্তু হৃদয়ের বাবার নিষেধ আছে, তাই তারা আসতে পারছেন না। বিয়ের আগের দিনও আমার মধ্যে ভয় কাজ করছিল হৃদয়কে নিয়ে।”
বিয়ের পরের সময় বিয়ের পরের সময় নিয়ে সুজানা বলেন, “অনেক ভালো কাটছিল। ইন্ডিয়ায় দিয়ে দু’জনে পরিবারের সবার জন্য শপিং করেছি। চট্টগ্রামে গিয়েছি। দু’জনেই আমরা খেতে ও ঘুরতে পছন্দ করতাম। সব থেকে ভাল্লাগতো তার মুখে আমার রান্নার প্রশংসা। বিরিয়ানি, বিফ, মিষ্টি জাতীয় খাবার পছন্দ করে সে। আমি নিজে এসব রান্না করতাম তার জন্য।” “কোরআন ছুঁয়ে সে (হৃদয়) আমাকে বলেছিল- আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে কিছু করবে না। বিয়ের পর সেরকম কিছু চোখেও পড়েনি। তাকে আমি অনেক বিশ্বাস করতাম।” “বিয়ের দুই মাসের মাথায় ছোটখাট বিষয় নিয়ে হৃদয় সমস্যা করত, মাইন্ড করত। তিন-চার মাস পর দেখতাম এসব বিষয় নিয়ে রাগ উঠলে আমাকে রেখে সে একা ঢাকার বাইরে চলে যেত। ১৫-২০ দিন পর ফিরে এসে বলত- জান, আমার ভুল হয়ে গেছে।”
ভাঙনের সুরঃ “বিয়ের পরে মনে হয় হৃদয় জোর খাটাতে চাচ্ছিল, আমার বউ আমার কথামতো চলবে। যখন তিন-চার মাস ধরে একই ধরণের ঘটনা ঘটছিল। টানা ১৫-২০ দিন দু’জনে আলাদা থাকছি। তখন থেকে টের পাচ্ছিলাম সংসার ভাঙতে বসেছে।” “আমাদের বিষয়গুলো ঠিকঠাক করার জন্য তিন-চারবার পরিবারের লোকজন আমাদের নিয়ে মিটিংয়েও বসছিল। সবাই মিলে হৃদয়কে অনেক বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কথায় কথায় বলত- ‘কাউকে মানি না।’ ” -বলেন সুজানা।
তিনি বলেন, “পৃথিবীতে কি কোথাও লেখা আছে পুরুষের কথামতো হুবহু চলবে তার স্ত্রী? মনে হয় হৃদয় জোর খাটাতে চাচ্ছিল- আমার বউ আমার কথামতো চলবে।কোনো স্বামীরই উচিত নয়- তার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ বলে তাকে এতোটা ছোট করা।” শেষ চাওয়া “কোনো মেয়েই চায় না সংসার ভাঙুক। যখন দেখলাম সে একই ধরণের কথা বলছে। কোনো পিচ-ই পাচ্ছি না, শুধু মেন্টাল টর্চার বাড়ছে। তখন ডিভোর্সের বিষয়টি সামনে আসে।” জানান সুজানা।
তিনি বলেন, “ডিভোর্সের চার-পাঁচদিন আগেও সবাই মিলে বাসায় বসেছি। হৃদয় বলে- আমি ডিভোর্স চাই। এখানে সংসার করব না। ডিভোর্সের আগ পর্যন্তও আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ফেরত চেয়েছি আমার হাজব্যান্ডকে। হয়নি। জোর করে সংসার করলেও তো সে একই রকম আচরণ করত এখনো।” “আগের হৃদয়কে আমি অনেক ভালোবাসি। আমার বাবা নেই। মাকে কষ্ট দিয়ে কিছু করতে চাই না। আমার ফ্যামেলিকে নিয়ে থাকতে চাই। হৃদয় অনেক ভালো থাকুক। সবার কাছে আমাদের দু’জনের জন্য দোয়া চাই। আর সবার প্রতি বলব- অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্তে যাওয়া উচিত।”