DMCA.com Protection Status
title="৭

আওয়ামী লীগের ফরমায়েসী জরীপ করলো আইআরআইঃ সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে?

iriক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এবার একটি ভূঁইফোর মার্কিন প্রতিষ্ঠান কে দিয়ে ফরমায়েসী জরীপ করালো আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত আইআরআই নামের এই মার্কিন সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষেও জরিপে মত দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ।তবে এই জরীপের উদ্দেশ্য,লক্ষ্য এবং গ্রহন যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সর্বসাধারনের মনে। এই জরীপের বাাপারে আইআরআই এর সাথে যোগাযোগ করেও এর উদ্দেশ্য এবং নিয়োগকারী কতৃপক্ষের হদিশ পাওয়া যায়নি।

ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) ওই জরিপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। আড়াই হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষের অংশগ্রহণে করা জরিপকে সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখাতে চাইছেন সরকারে নীতিনির্ধারকরা।

অন্যদিকে জরিপ প্রত্যাখ্যান করে সরকারকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। জরিপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও। তাদের মতে, সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হচ্ছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ,এসব ফরমায়েসী জরীপ করে  জনগনকে বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে মাত্র।

আইআরআইয়ের জরিপ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, এই জরিপ প্রমাণ করে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

জরিপের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, টাকা দিয়ে এ ধরনের জনপ্রিয়তা কেনা যায়।

অন্যদিকে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়লে তার পরীক্ষার জন্য দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেছেন, সরকারের জনপ্রিয়তা যদি বাড়ে, তার একটা পরীক্ষা হোক। এ জরিপের ফলাফলে উজ্জীবিত হয়ে সরকার দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নতুন নির্বাচন দিক।

টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, জরিপে মানুষের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। দুর্নীতি বাংলাদেশের বড় সমস্যা। মানুষ গণতন্ত্র চায়। এটা অনেক ভাল। বিএনপি একেবারেই অধঃপতনে গেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপি ৮ বছর ধরে ক্ষমতায় নেই। তারা যা করেছে মানুষ তা ভুলে গেছে। কারণ, মানুষ সবসময় খারাপ কাজ মনে রাখে। সুতরাং বিএনপি যদি ভাল কাজ করেও থাকে, এ জরিপে তার প্রতিফলন নেই। মধ্যবর্তী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা সবাই বলছে, আমরাও বলেছি। হাসিনার সমর্থন বেড়েছে, সরকারের সমর্থন বেড়েছে। এটা তাদের জন্য ভাল।

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক জরিপের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এ জরিপ কার অর্থে হয়েছে সেটা দেখার বিষয়। কারণ যদি এটা আওয়ামী লীগের টাকায় হয় তবে একরকম। আর বিএনপির টাকায় হলে অন্যরকম। তেমনি এ জরিপের জন্য কোন সংগঠন ফান্ড দিয়েছে সেটা খোঁজ নেয়া দরকার। জরিপের প্রণালী কতটুকু সঠিক ছিল তাও বিবেচনা করা দরকার। তিনি বলেন, জরিপে সরকার ও সরকারি দলের কাজ বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে জনগণের সন্তোষের প্রতিফলন ঘটেছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে যেমন দুর্নীতির বিষয়ে সন্তোষের স্তরটা নিচু। অসন্তোষও বলা যায়। সাধারণত সরকারের কাজকর্মে জনগণ যখন সন্তুষ্ট থাকে, সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার তখন মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়। জনগণের সন্তুষ্টির সুযোগ নেয়ার জন্য, যেহেতু জনগণ সন্তুষ্ট তারা সরকারের পক্ষে ভোট দেবে। এ সুযোগ নেয়ার জন্য আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়। আর জরিপে যদি জনগণ অসন্তুষ্ট থাকে তবে সরকার চেষ্টা করে সন্তুষ্টি বাড়িয়ে নির্বাচন সময় মতো দিতে। এই ধরনের জরিপ থেকে সরকার আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবীর এ জনমত জরিপের ফলাফল নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মতো দেশে যে সরকারই হোক না কেন তার জনপ্রিয়তা বাড়ে এটি নজিরবিহীন। বর্তমান সরকারের যদি জনপ্রিয়তাই থাকে তাহলে তারা ৫ই জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনে গেল কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এ জরিপকে যত বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা আমরা তারচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমার এ জরিপের ওপর বেশি আস্থা নেই। কারণ, এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে এরকম জরিপ হয়েছিল। কোন কোন জায়গায় দেখা গেছে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আছে। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেছে বিএনপি জিতে গেছে। এই জরিপগুলো কি পদ্ধতিতে হয়, যত কম সংখ্যক মানুষ এতে অংশগ্রহণ করে। এতে যতটুকু গুরুত্ব দেয়ার কথা আমরা তার থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। ২০১৩-১৪ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে এরকম জরিপে বলা হয়েছিল বিএনপি পিছিয়ে আছে। কিন্তু তখন বিএনপি নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল। জরিপ পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, খুব অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে পরিচালিত হয়। এটা কী পদ্ধতিতে করে সেটা সন্দেহ আছে। আমাদের এটা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, জরিপের একটি বিষয় হচ্ছে একটা সরকার পদ্ধতি এবং কত সংখ্যক মানুষ এখন নির্বাচন চায়। এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বলেছে ৬৭ শতাংশ মানুষ। আমরা ধারণা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে অন্তত ৮০ ভাগ মানুষ কথা বলার কথা। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। জরিপের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বলেন, এ জরিপের প্রয়োজনীয়তা কি বা কেন করা হয় সেটা আমার কাছে পরিষ্কার না। জনগণ কি চায় এটা পরিমাপ করার জন্য সারা পৃথিবীতে বিশ্বাস করা হয় একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া জনগণ কি চায় এটা বিশ্বাস করা সম্ভব না।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান আশেকা ইশরাত মনে করেন, বর্তমান শাসন ব্যবস্থা সর্বোত্তম শাসন ব্যবস্থা। আইআরআইর জরিপকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভাবনীয় সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। তিনি বলেন, এত বছর পরে আমরা একটা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছি- এ জরিপে তা দেখলাম। এ পরিসংখ্যান যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তবে আমরা দেখবো যে বেশ কিছু সাফল্য উঠে এসেছে। সেই সাফল্য চিহ্নিত হয়েছে জনগণ দ্বারা। জনগণের যে জরিপের প্রণালী ছিল সেখানে বড় একটা গ্রুপকে প্রশ্ন করা হয়েছে। এক নম্বরে যে বিষয়টি উঠে এসেছে কিছু সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তারা ডেমোক্রেসিকে সর্বোত্তম শাসন ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

 

সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়লে পরীক্ষা হোক:গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়লে তার পরীক্ষার জন্য দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বলেছেন, সরকারের জনপ্রিয়তা যদি বাড়ে, তার একটা পরীক্ষা হোক। এ জরিপের ফলাফলে উজ্জীবিত হয়ে সরকার দেশ-বিদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নতুন নির্বাচন দিক। গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় তারেক রহমানের অষ্টম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর জনমত জরিপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য্য তো নির্বাচন দরকার। জনপ্রিয়তা বাড়লে সরকারের নির্বাচন দিতে ভয় কিসের। তারা নির্বাচন দেয় না কেন?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজ দেশে গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় শাসন চলছে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। শিগগিরই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। চিকিৎসকদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, দেশের চিকিৎসক সমাজের শতকরা ৮০ ভাগই শহীদ জিয়ার আদর্শের অনুসারী। তারা সরকারের রোষানলে পড়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিনাকারণে অনেক চিকিৎসকের চাকরি হারাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের আরও বেশি করে মানুষের সেবা করার আহ্বান জানান গয়েশ্বর রায়।

এসময় ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অর্থপেডিকস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রফিক আল কাদেরী, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এমএ কামাল হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম সেলিম, ডা. গোলাম মোস্তফা ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

টাকা দিয়ে জনপ্রিয়তা কেনা যায়: হান্নান শাহ

‘আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে’ মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক জরিপের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জে. (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেছেন, টাকা দিয়ে এই ধরনের জনপ্রিয়তা কেনা যায়। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে তারেক রহমানের অষ্টম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তারেক রহমানকে হত্যার নীলনকশা করছে অভিযোগ করে হান্নান শাহ বলেন, বিএনপির শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে দেশের জনগণ তারেক রহমানের নেতৃত্ব চান। এই কারণে সরকার তাকে শেষ করার ষড়যন্ত্র করছে। কারণ সরকার ভাল করেই জানে তারেক রহমান দেশে এলে আওয়ামী লীগ বানের জলে ভেসে যাবে। তিনি বলেন, প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থে নয় ভারতের স্বার্থে কাজ করছে। ভারত সরকার যা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কথাই বাস্তবায়ন করেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির সাংগঠনিক অগ্রযাত্রায় বাধা প্রদান করছে। তাই দেশের জনগণকে বুঝিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি আফম ইউসুফ হায়দার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!