ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজ আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির’ দায়ভার অর্থমন্ত্রীকে বহন করতে হবে বলে বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
স্বতন্ত্র পে-স্কেলের দাবি এবং নতুন বেতন কাঠামোয় সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে একদিন আগে মুহিতের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এক বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকে গ্রেড অবনমনসহ কয়েকটি বিষয়ে নিজেদের আপত্তি তুলে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। তারা সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়ার মধ্যে গত সোমবার মন্ত্রিসভা অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করে।
নিজেদের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না পেয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি চালানোর মধ্যে মুহিত মঙ্গলবার বলেন, “দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগন জ্ঞানের অভাবে এ আন্দোলন করছে। “এই কর্মবিরতির কোনো জাস্টিফিকেশন নেই। তারা জানেই না পে-স্কেলে তাদের জন্য কী আছে, কী নেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘ইচ্ছেমতো’ পদোন্নতি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন অর্থমন্ত্রী, যাকে তিনি আখ্যায়িত করেন ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’ হিসেবে।
এর প্রতিবাদে বুধবার ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও অযাচিত, বিরূপ ও হাস্যকর মন্তব্য করে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। “অতীতে তিনি স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং এখনও তার স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি বিধায় তিনি এরকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন। শিক্ষকদের সম্পর্কে তার এহেন মন্তব্য বাংলাদেশের শিক্ষা পরিবারের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।”
বিবৃতিতে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, “আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদাগত বৈষম্যের বিষয়টি নিরসনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করে অনতিবিলম্বে ইপ্সিত সকল দাবি-দাওয়া পূরণ করবেন। “অন্যথায় আমরা শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিসমূহ পূরণে লাগাতার কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।” সংসদেও আলোচনা শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা হয়েছে সংসদেও।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বুধবার অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে বলেন, “শিক্ষকরা বৈষম্যের বিষয়ে আন্দোলন করছেন। শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী অযাচিতভাবে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।” তিনি শিক্ষকদের প্রশংসা করে বলেন, “শিক্ষকদের আসলেই জ্ঞানের অভাব রয়েছে। জ্ঞানের অভাব না হলে শিক্ষক না হয়ে তারা আমলা হতেন। জ্ঞানের অভাবের কারণেই শাসকগোষ্ঠীর সাথে হাত না মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শাণিত করেছেন।”
এ সময় তাহজীবকে উদ্দেশ করে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, “আপনি পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে কাউকে আক্রমণাত্মক কথা বলতে পারেন না।আপনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে একটি নোটিস দেন, আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।” পরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় ক্লাস হচ্ছে না, পরীক্ষা হচ্ছে না। এখন ভর্তির সময়। এই অবস্থা চলতে থাকলে বড় অসুবিধা হয়ে যাবে।
শিক্ষকদের দাবি বিবেচনা করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রীকে বলব, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন, কীভাবে এর সুরাহা করা যায়।”