ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সময়ের প্রয়োজনে দেশের অন্যতম শীর্ষ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।
দলটির তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত পুনর্গঠন করা হচ্ছে।গত বছর দুয়েক ধরে বিএনপির তৃনমূল এবং মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রবল দাবী ছিলো দল পূনর্গঠনের ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম-মহাসচিবসহ নির্বাহী কমিটির প্রতিটি পর্যায় থেকে বাদ যাচ্ছেন নিষ্ক্রিয়রা। এদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন অপক্ষোকৃত তরুণ, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ,পরিক্ষিত যোগ্য ও মেধাবী নেতারা।
একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের লন্ডন সফরে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে সেখানকার কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চোখের চিকিৎসার পাশপাশি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে দুই সপ্তাহের মতো সেখানে অবস্থান করবেন তিনি।এই সময় দল পূনর্গঠনের উদ্দেশ্যে দলের ২য় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, যে কোনো কঠিন সময় অতিক্রম করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি। এ মুহূর্তে জেলে থাকা নেতা-কর্মীদের জামিনে মুক্ত করাই দলটির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এর পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করাই মূল চ্যালেঞ্জ। বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে দলের শীর্ষ দুই নেতার (চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান) আলোচনায় এগুলোই স্থান পাবে।
সূত্র জানায়, ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা চলছে। এতে পুরো দলকে ঢেলে সাজানো হবে। এ লক্ষ্যে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারমান তারেক রহমানের আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনের যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করে আন্দোলন থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তারা কালো তালিকায় স্থান পাচ্ছেন।
বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিলের পর দলের মহাসচিবের দায়িত্ব পান প্রয়াত নেতা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ তিনি মারা যান। এরপর দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তাকে স্থায়ী করা হয়নি।
গুরুতর অসুস্থ মির্জা ফখরুল আদালত থেকে জামিন নিয়ে চিকিৎসার্থে প্রায় একমাস দেশের বাইরে রয়েছেন তিনি।তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলে তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দলের হাইকমান্ডের। আসন্ন কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলের একটি সূত্র জানিয়েছে।তবে এব্যাপারে তার শারিরীক সুস্থতা একটি বিবেচ্য বিষয় হতে পারে । বিকল্প হিসাবে পরিক্ষিত নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামও শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কয়েকজন নিষ্ক্রিয়। দলের কোনো কার্যক্রমে তারা অংশ নিচ্ছেন না। এম শামসুল ইসলাম, ড. আর এ গনি, বেগম সরোয়ারী রহমান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। শাসমুল ইসলাম গত দুই বছর ধরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে অনুপস্থিত থাকছেন। এ ছাড়া বর্তমানে কারাগারে আছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এই চারজনসহ আরো দু-একজনকে স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। স্থায়ী কমিটি থেকে সরিয়ে তাদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হতে পারে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হলে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নাম মোটামুটি নিশ্চিত।
জাতীয়তাবাদী যুবদলকে গতিশীল করতে সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রদল নেতা সানাউল হক নীরুকে এর সভাপতি করার দাবী দলের তৃনমূল পর্যায় থেকে বহুদিন ধরেই করা হচ্ছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম-মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল করা হবে। ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতাদের নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর চিন্তাভাবনা চলছে। এ ছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবদক দল, মহিলা দলও আপাদমস্তক পরিবর্তনের আওতায় আসছে।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর দল পুনর্গঠন করে বিএনপি। ২০০৯ সালের জুন মাসে এক সঙ্গে ৭২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ওই বছর ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল। পরের বছর জানুয়ারিতে গঠন করা হয় ৩৮৬ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি। তিন বছর মেয়াদী কমিটির সময় আড়াই বছর আগেই শেষ হয়েছে।
এর আগে দুই দফা কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়নি।