ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত ১৩ই অক্টোবর'১৫ এ পূর্ব লন্ডনে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী মুভমেন্ট’ এর উদ্দোগে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পূনরুদ্ধারে জাতির করণীয়’- শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিরোধী দলের উপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতায় অসংখ্য গুম-খুনের ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন সহ চরম মানবাধিকার লংঘন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উত্থান এবং দূর্নীতি ও চরম দূঃসাসন থেকে জাতিকে রক্ষার প্রধান শর্ত হিসেবে – দেশে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠা করার কোন বিকল্প নাই বলে- বক্তারা দৃঢ় মত পোষন করেন।
বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী মুভমেন্টের আহবায়ক শরফরাজ আহমেদ আজাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান এবং বিশেষ বক্তা – ব্যারিষ্টার নাজির আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী ফোরামের আহবায়ক- মেজর (অবঃ) ফারুক আহমেদ।সভাটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সেক্রেটারী সৈয়দ জিল্লুল হক ।
সভার মূল বক্তব্যে বলা হয়,বর্তমান সরকারের অনির্বাচিত সাংসদের পিস্তলের গুলিতে ১০ বছর বয়সের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্র যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়; সরকার দলীয় ক্যাডারদের ছোড়া গুলিতে মায়ের গর্ভের সন্তানের বুক যখন বিদীর্ণ হয়; দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে বহিঃর্বিশ্বে পরিচিত করতে যখন স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বিদেশী মিডিয়ার কাছে স্বাক্ষাতকার প্রদান করেন এবং মোক্ষম সময়ে দেশের মাটিতে বিদেশীদেরকে হত্যা করে যখন প্রধানমন্ত্রী ও তার পুত্রের দাবিকেই শক্তিশালী করা হয় ; চরম লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়া করে এবং বিরোধী দলের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকার করে হামলা-মামলার মাধ্যমে চরম নির্যাতন করা হয় এবং সর্বোপরি- মিডিয়ার বাক্-স্বাধীনতা সংকুচিত করে শতশত বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম-খুনের মাধ্যমে সরকার তার অবৈধ শাসনকে প্রলম্বিত করতে চায়- সেখানে এ নব্য বাকশালের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করা – পুরো জাতির জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ।
বক্তারা আরও বলেন ,২০১৪ সালের ৫-ই জানুয়ারীতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পূর্বেই আওয়ামী লীগ খালি মাঠে বিজয়ী হয়ে পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছিলো।
দেশের ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৮ কোটি ভোটার এ নির্বাচনে ভোট প্রদান করার সুযোগ পায়নি। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনেই যদি ভোট ছাড়াই অনির্বাচিত সাংসদ নিযুক্ত হয়- তাহলে পৃ্থবিীর কোন দেশের মানদন্ডেই তা গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে স্বীকৃত হতে পারেনা। আর তাই- বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার জনগনের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত নয় বিধায় – সরকার পরিচালনার কোন বৈধ অধিকার তাদের নেই।
কোন অনির্বাচিত সরকারের প্রতি আনুগত্য পোষন করা- দেশের সংবিধান লংঘন এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা – বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তার স্বীকৃতির জন্য প্রচেষ্টা চালালেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের কাছে তিনি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণ্য হতে পারেননা।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে একদিন এ অবৈধ সরকারের পতন হবেই।
মূল প্রবন্ধ পাঠে ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বলেন, সংবিধানের ১১ এবং ৬২(২) ধারা মতে- জনগনের সরাসরি ভোটে সংসদের ৩০০ জন সংসদ নির্বাচিত হওয়ার শর্ত থাকলেও তা পূরণ করা হয়নি। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে সংবিধানের ৬৫(২) ধারা অনুসরন করে কোন সাংসদ নির্বাচিত হননি।
তিনি আরো বলেন যে, ‘দি ইউনিভার্সাল ডিক্ল্যারেশন অব হিউম্যান রাইটস’ এর আর্টিকেল ২১(৩) অনুযায়ী জনগণের রায়ই সরকার গঠনের মূল ভিত্তি এবং ‘দি ইন্টারন্যাশনাল কভনান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিকাল রাইটস’ এর আর্টিকেল ২৫(বি) অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট প্রদান ও নির্বাচিত হবার অধিকার ও সুযোগ থাকা আবশ্যক; জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের উক্ত আর্টিকেলে বাংলাদেশ একটি স্বাক্ষর প্রদানকারী সদস্য বিধায় জাতিসংঘের শর্তের ভংগ করে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনের পরিপন্থী।
সাপ্তাহিক লন্ডন বাংলা সম্পাদক কেএম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র বিপন্ন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নেই, প্রায় ৫০ হাজার বিরোধী নেতা-কর্মী বন্দী আবস্থায় আছে। এমতাবস্থায়, দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য বিরোধী দলের আরও কার্যকরী হওয়া প্রয়োজন।
প্রফেসর মামনুন মোরশেদ বলেন, অবৈধ সরকারের শাসন প্রতিহত করতে গণআন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র নেতা সাদিক মিয়া বলেন,দেশের ক্রান্তিকালে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দেশেবিদেশে জোরালো আন্দোলন করতে হবে।
বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি ফোরামের আহবায়ক মেজর (অবঃ) ফারুক আহমেদ বলেন, যে দলই জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করবে- আমরা তাদেরকে স্বাগতম জানাবো। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পূণরুদ্ধারের জন্য দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের এগিয়ে আসা নাগরিক দায়িত্ব। প্রফেসর আব্দুল কাদের সালেহ বলেন, বিরোধী শক্তিকে আরও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং ২০ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দকে রাজপথে থেকে দেশে ও বিদেশে আন্দোলনকে গতিশীল করতে হবে।
মেজর (অবঃ) জহির উদ্দীন বলেন, বিএনপি যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রকে অনুসরন করলে এবং দলের উন্নয়ন ও গতিশীলতা অর্জনের জন্য দেশে-বিদেশে অবস্থানরত মেধাবীদেরকে মুল্যায়ন করলে আন্দোলনে সফলতা আসার সম্ভাবনা। ব্যারিস্টার আফজাল জামি সাইদ-আলী বলেন, গণতন্ত্রের পূণরুদ্ধারের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের গুরুত্ব অত্যধিক বিধায় দেশে ও বিদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনকে সহায়তা ও সমন্বয় সাধনের জন্য নেতৃত্বের পর্যায় থেকে নির্দেশনা আবশ্যক।
ব্যারিস্টার ইকবাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সংস্কতি, আইনের শাসন- ইত্যাদি সবকিছুই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আন্দোলনের স্বার্থে অকর্মণ্যদের স্থলে সক্রিয়দেরকে দায়িত্ব প্রদানের আহবান জানান তিনি।
ব্যারিস্টার আলীমূল হক লিটন বলেন, জাতি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি বৈধ ও দেশপ্রেমী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।
যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক বলেন, বাংলাদেশে দশজন লোক একসাথে বসে একটি মিটিং করলেও পুলিশী হয়রানীর শিকার হতে হয়। আমার দেশ এবং দিগন্ত টিভি সহ সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে এবং জাতির বিবেক- আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে অচিরেই মুক্ত করে দিতে বক্তারা সরকারের প্রতি আহবান জানান। সংগঠনের সভাপতি এস এ আজদ বলেন, সর্বক্ষেত্রে দেশের অবনতিশীল পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অনির্বাচিত সরকারের কবল থেকে গনতন্ত্র, মানবাধিকার, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার্থে একটি ঐক্যবদ্ধ গণবিপ্লবের সূচনা করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন- প্রফেসর মামনুর মোর্শেদ, সম্পাদক কেএম আবু তাহের চৌধুরী, টাওয়ার হেম্লেটের সাবেক ডেপুটি মেয়র– কাউন্সিলর অহিদ আহমেদ,সাংবাদিক এম এ কাইয়ূম, মেজর (অবঃ) শাহ আলম, মেজর (অবঃ) জহির উদ্দীন, ব্যারিষ্টার ইকবাল হোসেন, ব্যারিষ্টার আফজাল জামি সাইদ-আলী, ব্যারিষ্টার আলীমূল হক লিটন, সলিসিটর ইকরামুল হক মজুমদার, ব্যারিষ্টার আনোয়ার আহমেদ, যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা আশিকুর রহমান আশিক, মাওলানা শামীম আহমেদ, জুবদল নেতা সাদেক মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আঃ মালিক কুটি, শেখ সেলিম, আমিনুর রশীদ, মোঃ আখলাকুর রহমান, কমর উদ্দীন আহমেদ, ফারুক হাসান দুলু, আবু বকর ফয়েজী সুমন, কাজী রুপম, এম এ জলিল খান, এবং নূর বক্স সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।