ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চলতি হজ কার্যক্রমে মক্কা ও মদিনায় লাগেজ সেন্টারে মালামাল নিয়ে হাজিদের অসহনীয় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। আর এজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাইল হেইউডকে দোষারোপ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, কাইল হেইউড হজ যাত্রীদের মালামাল পরিবহনে সৌদিভিত্তিক পাকিস্তানি একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিল। ফলে তারা বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করতেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি।
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের ‘বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ১৩তম বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান সভাপতিত্ব করেন। কমিটি সূত্রে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে কমিটিকে জানানো হয়েছে, কাইলের একক সিদ্ধান্তে সৌদিভিত্তিক এক পাকিস্তানি নাগরিকের কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হেন্ডেলিংয়ের কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করতেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এর ফলে চলতি হজ কার্যক্রমে লাগেজ বা মালামাল নিয়ে হাজিরা বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন।
বৈঠক শেষ কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিমানের বর্তমান এমডির চুক্তির মেয়াদ নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ তার পারফরম্যান্স ভালো না। এবার লাগেজ হেল্ডেলিংয়ের দায়িত্ব সৌদি আরবে এক পাকিস্তানিকে দিয়েছিলেন তিনি। যে কারণে লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ে বিপত্তি ঘটেছিল।
কমিটির পক্ষ থেকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছি এটা কে দিল? বিমান থেকে জানায়, কাইল দিয়েছে। এ বিষয়ে ইনকোয়ারি করার সুপারিশ করেছি। সার্বিক বিষয় নজরে এনে কমিটিকে নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছে।’
তবে এবারের এমডি নিয়োগে বাংলাদেশ থেকে কাউকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানান ফারুক খান। কাইল প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি জানান, কাইল সম্পর্কে অভিযোগ করে কমিটিকে জানানো হয়েছে, কাইল ৭ দিনের বদলে ১৪ দিন ছুটি কাটিয়েও চিঠি দেন না। তার ছুটি এক বছরে দুই মাসেরও অধিক হয়েছে। কিন্তু কাইলের ছুটি বছরে এক মাস। কাইলের জন্য বিমানের মাসে খরচ হয় ২০ লাখ টাকা।
বর্তমানে তিনি নিজ দেশে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে বিমান পর্ষদকে জানিয়েছেন, তিনি অসুস্থ এবং বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। আর এরই মধ্যে তিনি জানিয়েছেন আসন্ন ক্রিসমাসে তার ১২দিনের ছুটি প্রয়োজন। এছাড়া কাইল কর্তৃক হুন্ডির মাধ্যমে নিজ দেশে বেতনের টাকা পাঠানোর অভিযোগের বিষয়েও কমিটিতে আলোচনা হয়।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কাইল হেইউডের চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ বিমানের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পুনরায় চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না করার বিষয়ে কমিটি সুপারিশ করে কমিটি।
’ জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও হাজিদের সুবিধার জন্য মক্কা ও মদিনায় তিনটি লাগেজ সেন্টার করে বিমান। এই সেন্টারগুলোর জন্য সৌদি আরবের এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। কিন্তু হজ ফেরত অধিকাংশ হাজি সাংবাদিকদের বলেন, মালামাল আনা-নেওয়া কীভাবে হচ্ছে, তা দেখার জন্য বিমানের কোনো প্রতিনিধি সেখানে ছিল না। এ সুযোগে এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অবৈধ অর্থের বিনিময়ে বেশি ওজনের মালামালও পার করে দিচ্ছে। তারা ১০ রিয়ালের বিনিময়ে ১০টি ৩০, ৪০ ও ৫০ কেজি ওজনের ব্যাগ পার করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, কাইল হেইউড গত ৫ জানুয়ারি বিমানে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কর্মরত ছিলেন। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ছাড়াও ইতিহাদ, গালফ এয়ার, এয়ার এ্যারাবিয়া, নাস এয়ারসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সে কাজ করেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ২০১৬ পর্যটন বছরের কর্মসূচি উপস্থাপন করছে।
এছাড়া বৈঠকে দশম জাতীয় সংসদের ‘বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি’র ১ম থেকে ১২তম বৈঠক পর্যন্ত গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের আলোকে জাতীয় সংসদের প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করা হয়। বর্তমানে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের উপযোগী রয়েছে। কোনো বিমান কোম্পানি এ বন্দরে ফ্লাইট অপারেট করার উপযুক্ত প্রস্তাব করলে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের সৈয়দপুর ও বরিশাল বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দরে উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিমান বন্দর দুটির উন্নয়নের লক্ষে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, ড্রইং-ডিজাইন, মাষ্টার প্লান ও প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণের জন্য পরামর্শক নিয়োগের নিমিত্তে প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বৈঠকে বিমানের দক্ষ জনবল বাড়াতে পদোন্নতির পাশাপাশি সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে বিমানের যাত্রীদের সেবার মান আরও উন্নত করার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল আশরাফ খান, মো. আফতাব উদ্দীন সরকার এবং সাবিহা নাহার বেগম অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।