ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজারকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার ব্যক্তিকে আটক করার পর পুলিশ বেশ ঘটা করে সংবাদ সম্বেলন করে দাবী করেছে, গতকালই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এদেরকে আটক করা হয়।
কিন্তু আটককৃতদের একজন কথিত রাসেলের মা দাবি করেছেন, তার ছেলেকে আসলে আটক করা হয় ১৫ দিনেরও বেশি আগে – অক্টোবরের ১০ তারিখে।
আটককৃত চার ব্যক্তির একজন হলেন ঢাকার দক্ষিণ বাড্ডার বাসিন্দা রাসেল চৌধুরী (৩৩)। পুলিশ বলছে, ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে তাকে গতরাতে আটক করা হয়।
কিন্তু তার মা আফরোজা আখতার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ডিবি পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়ে তিন-চারজন লোক তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায় ১০ই অক্টোবর শনিবার সকাল ১১টায়। তিনি বলেন, পুলিশ বলছে গতকাল গুলশান থেকে রাসেলকে আটক করেছে, কিন্তু তা ঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
বিবিসি বাংলার মিজানুর রহমান খানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আফরোজা আখতার বলেন, ওই লোকেরা ছিলেন সাদা পোশাকে – তবে একজনের কাছে একটি পিস্তল ছিল বলে তিনি দেখেছেন। তারা কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাননি. শুধু বলেন একটি 'ইনকোয়ারির' কাজে তারা রাসেলকে নিয়ে যাচ্ছেন। কি অভিযোগের তদন্ত – তা জানতে চাইলেও তারা বলেন নি বলে জানান আফরোজা আখতার।
"তারা ঘরে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালান, এবং তার পর একটি কাগজে রাসেলের বাবা এবং আরেকজনের স্বাক্ষর নিয়ে রাসেলকে নিয়ে যান। তার আগে তারা রাসেলকে প্রশ্ন করেন যে সে ছাত্রদল বা যুবদল করে কিনা। রাসেল তাদের জানায় যে সে কোন দল করে না।"
আফরোজা জানান, ডিবি পুলিশের পরিচয়দানকারীরা একটি টেলিফোন নাম্বার দিয়ে গিয়েছিলেন যাতে ফোন করে প্রথম কয়েকদিন তারা জানতে পারেন যে রাসেল ভালো আছে।
তারা ডিবি অফিসেও গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তাদের থানায় জিডি করতে বলা হয়। তবে জিডি করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করে নি বলে অভিযোগ করেন আফরোজা আখতার। পুলিশ আজ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ইটালীয় নাগরিক চেজারে তাভেলা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাসেল চৌধুরী সহ চারজনকে আটক করা হয়।
তাদের আটক করার দিন তারিখ নিয়ে আটককৃতদের পরিবারের লোকেরা যা বলছেন, তা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, অনেক আগে গ্রেফতারের ঐ তথ্য সঠিক নয়। পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আটক ব্যক্তিরা ভাড়াটে খুনী হিসেবে একজন কথিত 'বড় ভাইয়ের নির্দেশে' এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। “আমরা সেই কথিত বড় ভাইকে খুঁজছি। এই বড়ভাই-এর পেছনে মদদদাতা কারা সেটিও আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে অর্ধেক টাকা ‘খুনিদের’ দেয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেক পরে দেয়া হবে বলে সেই কথিত বড়ভাই জানিয়েছিলেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “একজন কথিত বড়ভাই তাদের (আটক ব্যক্তিদের) বলেছে একজন বিদেশীকে খুন করতে হবে।” তিনি জানান সিসিটিভি’র ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিশ্চিতভাবে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়েছে।
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কর্মী তাভেল্লা সিজারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পরপরই বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস তাদের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা হুশিয়ারী জারী করেন।
সূত্র:বিবিসি