ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।তারা বলেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের এই বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত অসচ্ছ এবং আগোছালো । এভাবে তড়িঘড়ি করে বিচার কখনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না।
সংস্থাটি এতদিন ‘মানবাধিকার রক্ষায়’ মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আপত্তি তুললেও এবারের বিবৃতিতে সেই প্রসঙ্গের পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর আগে থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল অ্যামনেস্টি। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামানের ফাঁসি স্থগিত রাখার সুপারিশ করে একাধিকবার অনুরোধও করেছিল তারা।
এবার জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানির আগে আবারও একই ধরনের আবেদন জানাচ্ছে সংস্থাটি।
এসব বক্তব্য দিয়ে অ্যামনেস্টি সীমা ছাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে অপরাধীরা আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছে, টাকা খরচ করেছে। আর সেই টাকায় অ্যামনেস্টি বিবৃতি দিচ্ছে’।তবে বাংলাদেশ সরকার কেনো এদের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ দিচ্ছে না এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির সাউথ এশিয়া রিসার্চ ডিরেক্টর ডেভিড গ্রিফিথ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অপরাধগুলো ভীতিকর। কিন্তু সঠিক ভাবে বিচার না করে মৃত্যুদণ্ড শুধুমাত্র দেশকে সন্ত্রাসের দিকেই ঠেলে দিবে। ন্যায্য বিচার ছাড়া মৃত্যুদণ্ড আরো বিরক্তিকর ।
উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের আবেদনের শুনানি আগামী ২ নভেম্বর আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চে হবে।
এর আগে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু’জনকেই মৃত্যুদণ্ড দেন। রিভিউ আবেদন নাকচ হয়ে গেলে তাদের ফাঁসি কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
সাকা-মুজাহিদের রিভিউ শুনানির আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই বিবৃতিতে রাজনীতির গন্ধ আছে বলে মনে করছেন বর্তমান সরকারের ঘনিষ্টজন এই শাহরিয়ার কবির ।
অথচ এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সিনিয়র আইনজীবিরা এই বিচার প্রক্রিয়া মোটেও সচ্ছ নয় বলে বার বার দাবী করেছেন । বিশেষ করে বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিচারে তার পক্ষে সাক্ষী দেয়ার জন্য আবেদনকারী ৫ জন বিশিষ্ট পাকিস্তানী নাগরিকের সাক্ষ্য গ্রাহ্য করেনি এই আদালত । এতে করে নিজেকে বার বার ঐসব ঘটনার সময় বাংলাদেশে ছিলেন না দাবীকারী মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত সাকা চৌধুরীর বিচারের রায় প্রহসনমূলক হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন ।