ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এবার ভারত সহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রচন্ড চাপে সরকার আগামী বছরের শুরুতেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে । এমনই গুঞ্জন চলছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ।
সেক্ষেত্রে সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার কৌশলে এগুচ্ছে । বিএনপিও তা টের পেয়ে পাল্টা কৌশল নিয়েছে । দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি এ দলটি ভেতরে ভেতরে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে । দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের সাজার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিকল্প প্রার্থীদের তালিকা করা হচ্ছে ।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে । বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ , জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সব দলের অংশগ্রহণে দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ আর একটি নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে ।
কিন্তু ভারত আওয়ামী লীগের পাশে থাকায় ৫ই জানুয়ারীর ভোটারবহীন নির্বাচন ঠেকানো যায়নি বরং সেই সরকারই এখনো টিকে আছে ।
ফের আন্দোলন করেও সহসা সরকার পতন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী। এ উপলব্ধি থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হয়েছে বিএনপি ।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম , চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু , সাবিহ উদ্দিন আহমদসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বেগম খালেদা জিয়া এই বিশেষ দায়িত্ব দেন । তাদের প্রচেষ্টায় গত ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠক হয় । খালেদা জিয়া বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মোদির সহযোগিতা চান । মোদিও ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে খালেদা জিয়াকে ভারতের সাথে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেন ।
লন্ডনে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন । বিএনপির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় তারেক রহমানও তাতে সম্মত হন ।
লন্ডনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় , খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার পর পরই ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা সেখানে যান । বিজেপির ওই নেতার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের তিন উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মোদির প্রস্তাব খালেদা জিয়া মেনে নিয়েছেন বলে জানানো হয় ।
বৈঠক শেষে বিজেপি নেতা ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি অবগত করেন । এরপরই বাংলাদেশ সরকারকে নতুন নির্বাচন দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাপ দিয়েছেন বলে সূত্রটি দাবি করেছে ।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি । তবে বৈঠকের পরপরই লন্ডন থেকে বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে । দুই দিন আগে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি হোটেলে পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলার প্রার্থীরা এ নিয়ে বৈঠকও করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে ।
বিএনপি নেতাদের মতে, মধ্যবর্তি নির্বাচনের জন্য ভারতের চাপের পরেই সরকার সারা দেশে ফের বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করেছে । তরিকুল ইসলাম সহ অনেক বিএনপি নেতাকে নতুন করে মামলায় জড়ানো হয়েছে । বিএনপি যাতে ফের আন্দোলনে মাঠে নামতে না পারে সেজন্য ডিসেম্বরে পৌর ও জানুয়ারিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করেছে সরকার ।
এছাড়াও চাপে রাখার জন্য দুই বিদেশি নাগরিক হত্যায় বিএনপি নেতাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সরকার প্রমাণ করতে চায় বিএনপি একটি ‘জঙ্গি’ সংগঠন। এসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু বিদেশিরা ইতিমধ্যেই আওয়ামী সরকারের কৌশল বুঝে গেছে বলে মনে হয়। ।
সূত্রমতে, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পরে সরকারের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের চাপ আরো বেড়েছে । এমনকি বাংলাদেশে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারে । নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে , দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে । যে কারণে ভারত , যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ , জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে । এছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করে নতুন নির্বাচনের দাবির প্রতি সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনাও করছেন ।
আওয়ামী লীগ সরকার শুধু দেশেই নয় বিদেশেও দমন নীতি অব্যাহত রেখেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশী কয়েক হাজার বাংলাদেশী বিরোধী কর্মীদের জঙ্গী আখ্যা দিয়ে তাদের আবেদন বিবেচনায় বাধার সৃষ্টি করেছে সরকার । এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা এবং বিএনপির বিশেষ দূত জাহিদ এফ সরদার সাদীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জনসন এদের আবেদন পূর্ন বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন এবং ইতিমধ্যেই বেশকিছু রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ।
বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরেই নতুন নির্বাচনের জোরালো দাবি তুলবেন। তখন তার এই দাবির প্রতি ওইসব প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা সমর্থন জানাবে। তাদের চাপে সরকার আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে ।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেও নিজেদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাজা দেয়ার কৌশল অবলম্বন করছেন ।
যে কারণে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং শতাধিক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বিচার কাজ দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে যাতে তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন।
বিএনপি সূত্র জানায় , সরকারের ‘কূটকৌশল’ মাথায় রেখেই দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে । প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি । একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিকল্প প্রার্থী রেখে খসড়া তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে । তালিকাটি এমনভাবে করা হয়েছে , যাতে প্রথম জন নির্বাচনে অযোগ্য হলে দ্বিতীয় জন , দ্বিতীয় জন অযোগ্য হলে তৃতীয় জনকে প্রার্থী করা যায় ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন , বিএনপি নির্বাচনমুখী একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল । প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে । দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের ভেতরেই তুমুল প্রতিযোগিতা হয়। দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ে দলকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ারও প্রস্তুতি চলছে । তবে জিয়া পরিবারকে মাইনাস করে নির্বাচনের চেষ্টা কখনও সফল হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন ।