ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মোবিন চৌধুরী হঠাৎ করেই বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষনা হঠাৎ আসলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগন এতে মোটেও আকাশ থেকে পড়েননি।
কারন গত প্রায় বছর খানেক ধরেই বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক অন্যতম নীতিনির্ধারক এই শমসের মোবিন চৌধুরীর নির্লিপ্ততা এবং অনাগ্রহ সবার চোখে পড়ছিলো । বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন লেফটেনান্ট শমসের এর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং তার সেনাবাহিনী চাকরী ফরেন সার্ভিসে ন্যস্ত করেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু নিজেই ।
কিন্তু পরবর্তি কালে যথাযথ মূল্যায়িত না হওয়ায় তিনি বিএনপির দিকে ঝুকে পড়েন। এবং তার ফলও পেতে থাকেন হাতে হাতে। বিএনপির শাসনামলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র সচিব পর্যন্ত হন।
বরাবরই ভারত ঘেষা বলে পরিচিত হলেও শমসের বিগত দিনগুলোতে বিএনপির সাথে ভারতের টান পোড়েন ও ভূলবুঝাবুঝি অবসানে কেনো কার্যকর ভূমিকা রাখেননি এই প্রশ্ন আজ আকাশে বাতাসে । তবে কি শমসের মোবিন যা করছিলেন তা জেনে বুঝেই করছিলেন ?
মোবিন বিএনপিতে প্রধানত আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো দেখভাল করতেন। দুই বিদেশী হত্যার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করেই তার এই পদত্যাগের ঘোষণা তাই তাৎপর্যপূর্ণ। তার বিএনপি ছাড়ার কথায় আওয়ামী লীগের তরফ থেকে যে উল্লাস দেখানো হচ্ছে, তা থেকেই বোঝা যায় মোবিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে ঠেকছে।
জীবদ্দশায় কখনো নির্বাচনে অংশ না নিলেও গত কয়েক বছর এবং তারো আগে সরকারি চাকরি করার সময়ে তিনি বিএনপির মূল ক্ষমতাকেন্দ্রের খুব কাছাকাছিই ছিলেন। তবে তিনি কখনও সাংসদ কিংবা মন্ত্রী হতে পারেননি । শোনা যাচ্ছে, আওয়ামী সাংসদ ও সমাজকল্যান মন্ত্রী মহসিন আলীর মৃত্যুতে মৌলভীবাজারের যে সংসদীয় আসনটি খালি হয়েছে, সেখান থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে তিনি নির্বাচনের স্বাদ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন এবং ভোটারবিহীন নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের পড়ন্ত আন্তর্জাতিক ইমেজ পুনরুদ্ধারে পররাষ্ট মন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
তবে পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে,হঠাৎ শমসের মোবিনকে এভাবে দলে টেনে এনে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক ভাবমুর্তি উদ্ধার তো হবেই না, বরং তা আরও সংকটে পড়বে । কারন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ব্যক্তিগত সততা এবং ন্যায়নীতি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে থাকে ,এ ধরনের ডিগবাজী তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে অনেকে মনে করেন।
আর তার চলে যাওয়াকে বিএনপির পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ দল অত্যন্ত দূর্বল হয়ে যাওয়ার প্রচারনা নেহায়েত অমূলক আর অসত্য । দির্ঘদিন সরকার পরিচালনাকারী দল বিএনপিতে আরও বহু যোগ্য এবং সক্ষম ব্যক্তি এখনও রয়েছেন যাদেরকে সঠিকভাবে দ্বায়ীত্ব দিলে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী সুফল বয়ে আনবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন ।
বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত দৃঢ় এবং সৎ ইমেজ বিএনপিকে বহির্বিশ্বে যথেষ্ট সহায়তা করবে বলেও আমরা গভীর ভাবে বিশ্বাস করি।