ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পৃথিবীর ইতিহাস কুচক্রীদের ব্যাপারে বরাবরই একই আচরন করেছে । ইতিহাসের কুখ্যাত ঘষেটি বেগম, জগৎ শেঠ ,রাজ বল্লভদের পর হিটলার থেকে শুরু করে যতো কুচক্রী আর ষঢ়যন্ত্রকারী দুনিয়ায় এসেছে তাদের অমোঘ ও করুন পরিনতি যেনো প্রকৃতি অবধারিত ভাবেই নির্ধারন করে রেখেছিলো।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকজনক অধ্যায় হচ্ছে ১/১১ এর বেঈমান ও কুচক্রী মঈনউদ্দীন – ফখরুদ্দীন গং দের তিন মাসের জায়গায় প্রায় ২ বছর অসাংবিধানিক ভাবে দেশ শাসনের লজ্জাজনক অধ্যায় । বিশেষ করে তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ স্বপ্রনোদিত হয়ে যেভাবে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার ধার না ধরে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় আড়াল থেকে সরকারকে নিয়ন্ত্রন করেছিলেন তা ছিলো অভূতপূর্ব ।
২০০৭ সালের প্রারম্ভে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সদ্য ক্ষমতা ত্যাগী বিএনপি এবং প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের টানা পোড়েনে এ জেনারেল মঈন সরাসরি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন তা আজ সকলের কাছে পরিষ্কার । অথচ তিনি ছিলেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনোনিত একান্ত বিশ্বস্ত সেনা প্রধান ।
এ প্রসঙ্গে জেনারেল মঈন নিজে তার ঐ সময় লেখা আত্মজীবনী "শান্তির স্বপ্ন" শির্ষক বইয়ে এভাবে বেগম জিয়ার সঙ্গে গাদ্দারী করায় স্বয়ং দুঃখ প্রকাশ করেছেন । এই বইয়ে তিনি ঐ সময় সেনাবাহিনীর সমর্থনে ফখরুদ্দীন সরকার গঠন পেছনে যে কারন এবং যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা পরবর্তিকালে সকলের কাছে সম্পূর্ন মিথ্যা বলে প্রমানিত হয় । তিনি বলেন , ঐ সময় ক্ষমতা গ্রহন করা আর কোনো উপায় ছিলো না কারন , অন্যথা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের বহিষ্কার করবে বলে আলটিমেটাম দিয়েছিলো ।
অত্যন্ত শঠ ও ধুর্ত এই জেনারেল মঈনের এসব অজুহাত আমাদের ৯/১১ পরবর্তি যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমনের পূর্বে সাদ্দাম হোসেনের হাতে ভয়ংকর মন বিধ্ধোংসী মারনাস্ত্র রয়েছে বলে অজুহাত বুশ দিয়েছিলো , সেই ঘটনাই মনে করিয়ে দেয়।
তবে মঈনের এই মিথ্যাচার আরও প্রমানিত হয় যখন পরবর্তি কালে ২০১৩/১৪ সালের আরও ভয়াবহ সংঘাতময় পরিবেশেও জাতিসংঘ এধরনের কোন ব্যবস্থা নেয়নি । এভাবেই ইতিহাসের অন্যান্য শঠ ও কূচক্রী মহলের মতো জেনারেল মঈনও নিক্ষিপ্ত হয়েছেন আস্তাকূড়ে ।
১/১১ এর অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে জিয়া পরিবার কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে চির বিতারিত করার সকল নীলনক্সার প্রনেতা ছিলেন এই মঈন । বেগম জিয়ার অন্যায় কারাবাস এবং তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর উপর প্রচন্ড নির্যাতন করা হয় তার সরাসরি নির্দেশেই । এছাড়াও বেগম জিয়ার সেনানীবাসের ৩০ বছরের স্মৃতি বিজরিত বৈধ বাসস্থান থেকে তাকে বিতারিত করার আসল কুশলী ছিলেন এই জেনারেল মঈন ।
এমনকি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে সংঘটিত পিলখানার বিডিআর গনহত্যার সময়ে সেনা প্রধান হিসাবে তার নির্লিপ্ততা এবং অস্বাভাবিক আচরন , এই দুঃখজনক ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং তার সরাসরি জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে বার বার । অতি সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে আবার এ অভিযোগ করে ৫৭ জন মেধাবী ও সিনিয়র সেনা অফিসার হত্যায় হাসিনা ও মঈনের বিচার দাবী করেছেন ।
এবার ফিরে আসি বর্তমান প্রেক্ষাপটে । চাকুরী থেকে অবসর গ্রহনের পর থেকেই এই জেনারেল মঈন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আস্তানা গাড়েন । ১/১১ এর সময়ে অন্যায় ভাবে উপার্জিত বিপুল অর্থ সম্পদ এবং হাসিনা সরকারের সাথে মধুর সম্পর্কে তার দিনকাল বেশ ভালোই কাটছিলো ।
এর মধ্যে হঠাৎ শোনা যায় তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত এবং চিকিৎসা গ্রহন শুরু করেছেন ।অবশ্য এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহের যথেষ্ট কারন রয়েছে । জনমনে তার বিরুদ্ধে পুন্জিভূত ঘৃনা ও ক্ষোভ প্রশমন করে সহানুভূতি আদায়ের উদ্দেশ্যেও এই ক্যান্সার নাটক করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন ।
উল্লেখ্য , যুক্তরাষ্ট্রে তার এবং তার ছোটভাইয়ের ব্যবসা-বানিজ্য দেখা শোনা করে থাকে মূলত তার গুনগ্রাহী মোহাম্মদ দিনাজ খান । এই দিনাজ খান ছিলেন ফ্লোরিডা বিএনপির সভাপতি এবং ১/১১ সময়ে জেনারেল মঈন যুক্তরাষ্ট্র আসলে তাকে গন – সম্বর্ধনা দেয়ার অপরাধে দল থেকে বহিষ্কৃত হন যুক্তরাষ্ট্রে দাগী ও জেলখাটা আসামী এই মোঃ দিনাজ খান ।
জানা গেছে, জেনারেল মঈন কে জনসমক্ষে আবার স্বাভাবিক ভাবে উপস্থাপনের গোপন উদ্দেশ্যেই আগামী ৭ নভেম্বর ফ্লোরিডায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের অনুষ্ঠা আয়োজন করেছেন এই দিনাজ খান । উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির আরেক বিতর্কিত নেতা ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ।
এর প্রেক্ষাপটে ১/১১ এর কুচক্রী ও কুখ্যাত মঈনের ফ্লোরিডা উপস্থিতি আবার কোন নতুন ষঢ়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে আল্লাহ মালুম । তবে এক কালের বিশাল প্রতাপশালী সেনা প্রধান, যিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন পাল্টে দেয়ার অশুভ চেষ্টা করেছিলেন, তার এই একাকী , রিক্ত ও পরিত্যক্ত ছবি দেখলে আশ্চর্যই লাগে বৈকি । গাদ্দারী এবং মিথ্যাচারই ছিলো যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার পক্ষে এভাবে একা একা মসজিদে বসে থাকা বেশ কঠিনই বৈকি ।
জানা যায়, ঐ অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে বর্নিত এক সাদেক হোসেন খোকা ব্যতিত অনেক অতিথিই আদৌ জানেন না এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে।
ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বীচের লেক ওয়ার্থ বায়তুল মোকাররম মসজিদে জেনারেল মঈনের এই দূর্লভ ছবিগুলো তার অজান্তেই তুলেছেন এনটিভির ফ্লোরিডা প্রতিনিধি জনাব রফিকুল ইসলাম । তার কাছ থেকে জানা যায় ঘৃনিত ও কুখ্যাত এই সাবেক জেনারেল কে উপস্থিত মুছল্লীদের অধিকাংশই চিনতে পেরে জুম্মার নামাজের পর তাকে প্রতিরোধের মুহুর্তে তিনি তাদের এড়িয়ে দ্রুত সটকে পড়েন ।
তবে এই কুচক্রী মঈনের হঠাৎ ফ্লোরিডা উপস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীগন বেশ চিন্তিত বলে জানা গেছে । এছাড়াও মঈনের দোষর বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দিনাজ খানের উদ্যোগে ও খোকার উপস্থিতিতে ৭ই নভেম্বর পালনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্লোরিডা বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে । এই কুখ্যাত মঈন-খোকা গংদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে ফ্লোরিডা বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্যের বিএনপি নেতাকর্মীদের বিপুল অংশগ্রহনে এক ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর আয়োজন করতে যাচ্ছে ।