DMCA.com Protection Status
title="৭

আসামের স্বাধীনতাকামী নেতা অনুপ চেটিয়া ভারতের কাছে কেনো এতো গুরুত্বপূর্ন ?

anupক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দীর্ঘ ১৮ বছর বাংলাদেশে কারাবন্দী থাকার পর ভারতের আসামের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী উলফার অন্যতম শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াকে ঢাকার জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা  ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট করে এর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানান।

তিনটি মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত অনুপ চেতিয়ার সাজার মেয়াদ ২০০৭ সালে শেষ হবার পর ভারত সরকারের তরফ থেকে অনেক চাপ এবং অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাকে এতদিন ফেরত পাঠায়নি । গতকাল মধ্যরাতের পর অনুপকে জেল থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের হাতে হস্তান্তর করা হয় এবং তারপর সিমান্ত পেরিয়ে ভারত এবং পরে তাকে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানা গেছে ।

১৮ বছর পরে অনুপ চেটিয়াকে এমন এক সময় ভারতে ফেরানো হল যখন উলফার সঙ্গে ভারত সরকারের শান্তি আলোচনা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকে এগোচ্ছে। জানা গেছে অনুপ চেটিয়াকে ছাড়া এই শান্তি প্রক্রিয়া সফল হবার সম্ভাবনা কম বলেই তিনি ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটা ফ্যাক্টর ।

 গত কয়েকদিন ধরেই যে মি. চেটিয়াকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল, দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল, সেটা পরিস্কার। দিন দুয়েক আগে তিনি নিজেই উলফার এক ভারত নিবাসী নেতাকে জানিয়েছিলেন এই সম্ভাবনার কথা । আর মঙ্গলবার রাতে কয়েকটি গোয়েন্দা এজেন্সি জানতে পারে যে বুধবার মি. চেটিয়াকে নিয়ে আসা হবে পেট্রাপোল দিয়ে। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা নিয়ে যেভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিলো , তার কারণ বোঝা যাচ্ছিল না।

এতে ভারতের প্রতিক্রিয়া কী ?

ভারত বুধবার অনেক বেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে অনুপ চেতিয়াকে ফেরত আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন এবং যেভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি অনুপ চেটিয়ার কথাও ওঠে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এছাড়া আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

উলফার যে অংশটি ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাচ্ছে, তারাও খুশি যে তাদের নেতা এতো বছর বাদে দেশে ফিরেছেন এবং সম্ভবত আলোচনার দিশা নির্দেশ দিতে পারবেন তিনি। কিন্তু উলফার সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়া, যার নেতৃত্বাধীন অংশটি শান্তি আলোচনার ঘোরতর বিরোধী, তিনি এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানান নি।

অনুপ চেটিয়া ফিরিয়ে নেয়া ছিলো ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্নঃ

অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে উলফার সরাসরি কর্মকান্ডের বাইরে রয়েছেন। তার পরে দেড় দশকেরও বেশি সময় তিনি জেলেই ছিলেন। ২০০৭ সালে জেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তিন বার বাংলাদেশে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রতিবারই সেটা খারিজ হয়ে যায়।

কিন্তু ২০০৯ সালে যখন উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া সহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে আটক করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় আর ভারত সরকার তাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করে, তখন থেকেই মত বদলাতে থাকেন অনুপ চেটিয়া। পরে নিজেই দেশে ফিরতে চান তিনি।

অন্যদিকে উলফার নেতারাও দাবি করতে থাকেন মি. চেটিয়াকে ফিরিয়ে এনে আলোচনায় বসানো হোক। উলফার বিদেশ সচিব শশধর চৌধুরী বুধবার বিবিসি বাংলাকে বলেন যে অনুপ চেটিয়ার মতো রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ নেতা খুব কমই আছেন। সেজন্য মি. চেটিয়াই যাতে শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দেন, সেটাই অনেক দিন থেকে চাইছিলেন তারা।

তবে শান্তি আলোচনা এখন একেবারে শেষ পর্বে। ২৪ নভেম্বর সরকারের সঙ্গে আলফার যে বৈঠক রয়েছে দিল্লিতে, সেখান থেকেই সম্ভবত অন্তিম পর্ব  অর্থাৎ শান্তি চুক্তি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরকম একটা সময়েই রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণ নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হলো বাংলাদেশ থেকে । এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে সাথে বাংলাদেশকে যেভাবে অভিনন্দন জানালেন, তার থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে মি. চেটিয়া এখনও কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভারত সরকার আর উলফা নেতৃত্বের কাছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!