DMCA.com Protection Status
title=""

অবশেষে দেশে ফিরলো নূর হোসেনঃ ফিরে দেখা,বিভিষিকাময় সেই সেভেন মার্ডার

nurhosenক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দরে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে নীল রঙের একটি গাড়িতে করে নূর হোসেনকে নিয়ে ফেরেন বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান এবং বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি তরিকুল ইসলাম। বেনাপোলের ইমিগ্রেশনে উপস্থিত ছিলেন যশোরের পুলিশ সুপার অনিসুর রহমান, বিজিবি কর্মকর্তা মেজর লিয়াকত আলী, ইউএনও আব্দুস সালাম।

বিজিবি প্রধান বলেন, ‘বিজিবির মেজর লিয়াকতের কাছে নূর হোসেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ নূর হোসেনকে ভারতের কাছ থেকে গ্রহণের পর একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এর আগে সন্ধ্যার পর কলকাতার দমদম কারাগার থেকে বের করা হয় নূর হোসেনকে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরসংলগ্ন বিএসএফের হরিদাসপুর চেকপোস্টে পৌঁছায় ভারতীয় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে দুটি গাড়িতে থাকা সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং তার সহযোগীরা।

অন্য একটি গাড়িতে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক। তিন দিন পরে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠে নারায়ণগঞ্জের উপকণ্ঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এদিকে অপহরণের পরদিন অপহৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ফতুল্লা থানায় নূর হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ‘র‍্যাবকে দিয়ে’ অপহরণের অভিযোগ করা হয়। তিন দিন পরে লাশ উদ্ধার হলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পরে আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে আরেকটি হত্যা মামলা করেন। অপরদিকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম প্রথমে র‍্যাবের বিরুদ্ধে ‘ছয় কোটি টাকা নিয়ে’ অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ করেন।

অর্থায়নকারী হিসেবে তিনি নূর হোসেনকে অভিযুক্ত করেন। পরে তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব-১১-এর কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা বের হয়ে আসে। র‍্যাব-১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম এম রানাসহ অন্য সদস্যরা মিলে ওই সাতজনকে অপহরণের পরে হত্যা করে পেট চিরে লাশ নদীতে ফেলে দেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

প্রায় এক বছর তদন্তের পরে গত এপ্রিলে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। এতে র‍্যাবের ওই তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। নূর হোসেন এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত এক নম্বর আসামি। অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে বর্তমানে র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২২ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

২২ জনই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক রয়েছেন র‌্যাবের আট সদস্যসহ ১৩ আসামি। সাত খুনের পরে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন।

ওই বছরের ১৪ জুন কলকাতার বাগুইআটিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থানের মামলা হয়। এরপর গত মাসে ভারত সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করলে নূর হোসেনকে দেশে ফেরানোর পথ সুগম হয়।

 7murderফিরে দেখা,সেই সেভেন মার্ডারঃ

নারায়ণগঞ্জের বিভীষিকাময় সেই ৭ হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে আজও আঁতকে ওঠে সবাই। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে একের পর এক লাশ ভেসে ওঠার দৃশ্য দেখে অনেকের মনে হয়েছে একত্তরের গণহত্যার কথা। সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর নিহতদের পরিবারের কেউ কেউ পথে বসেছে। কারো কারো জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। তাদের শোকের কান্নায় কেঁদেছে পুরো দেশের মানুষ। ফিরে তাকানো : ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর তিন দিন পর ২৯ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় তাদের লাশ। নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

পরে র‌্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তার সত্যতা পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দু’টি মামলায় ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিলেও সে সময় অধরা ছিল মূল নায়ক নূর হোসেনসহ ১৩ জন আসামি।

ঘটনার পর দায়ের করা একটি মামলায় এজাহার নামীয় ৫ আসামিও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকার মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বছর পূর্ণ হয়েছিল। সেদিন যা ঘটেছিল : ৭ খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ২১ জন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের বিবরণিতে উঠে এসেছে ৭ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বিবরণ।

বিবরণিতে জানা গেছে, প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে অপহরণের দিনক্ষণ আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি চাঁদাবাজির মামলায় স্থায়ী জামিন নিতে নজরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসবে।

এ সম্পর্কে মেজর (অব.) আরিফ হোসেন নিশ্চিত হন। নিশ্চিত হয়েই সকালে অপহরণপার্টিকে বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড় করানো হয়। সাদা পোশাকে একটি টিম নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়। তারা সার্বক্ষণিক মেজর আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। নজরুল ইসলাম সেদিন তার গাড়ি না এনে তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়ি ব্যবহার করেন। স্বপনের সাদা রঙের এক্স করোলা প্রাইভেটকার যোগে নজরুল ইসলাম আদালত প্রাঙ্গণে আসেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়ে আদালত থেকে একটি সাদা প্রাইভেটকারযোগে নজরুল ইসলাম বের হওয়ার পরপরই মেজর আরিফের কাছে খবর পৌঁছে দেয় আদালতের আশপাশে অবস্থান নেয়া সাদা পোশাকের র‌্যাব সদস্যরা। নজরুলের সঙ্গে একই গাড়িতে নজরুলের সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, সিরাজুল ইসলাম লিটন, তাজুল ইসলাম। গাড়ি চালাচ্ছিলেন স্বপনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর। নজরুলদের গাড়ির পেছনে ছিল আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ি।

নজরুলদের বহনকারী গাড়িটি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড হয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার পথে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের সন্নিকটে (ময়লা ফেলার স্থান) পৌঁছার পর মেজর আরিফের নেতৃত্বে গাড়ির গতি রোধ করা হয়। নজরুলের গাড়ির পেছনে ছিল আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়ি। নজরুলসহ ৫ জনকে যখন সাদা পোশাকের র‌্যাব সদস্যরা অপহরণ করছিল তখন পেছনের গাড়িতে বসে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার।

পরে দু’টি গাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে সাত জনকে র‌্যাবের দু’টি গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। গাড়িতে তাদের ওঠানোর পর একে একে প্রত্যেকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে অচেতন করা হয়। অচেতন হওয়া সাত জনকে কয়েক ঘণ্টা তাদের গাড়িতেই রাখা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিকল্পনা মতে কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথর ব্যবসাস্থল জনমানুষ শূন্য করার জন্য নূর হোসেনকে ফোন দেয় মেজর (অব.) আরিফ হোসেন।

গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর র‌্যাবের গাড়ি ওই স্থানে পৌঁছায়। গাড়ির ভেতরই অচেতন প্রত্যেকের মাথা ও মুখ পলিথিন দিয়ে মোড়ানো হয়। পরে গলা চেপে ধরার পর একে একে শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যায় সাত জন। পরে সাত জনের নিথর দেহ গাড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নম্বর ঘাট থেকে র‌্যাবের নির্দিষ্ট নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁচপুর ব্রিজের নিচে।

লাশগুলো নৌকায় উঠিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে যাওয়ার পথে আদমজীর সোনা মিয়া বাজার থেকে লাশ গুমের উপকরণ রশি ও বস্তা নৌকায় তোলা হয়। ইট নেয়া হয় আদমজী ইপিজেডের অভ্যন্তরে একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং এর সামনে থেকে। নৌকার মধ্যেই একে একে প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ইট বাঁধা হয়। একটি করে ফুটো করে দেয়া হয় নাভির নিচে-গ্যাস বের হয়ে যাতে লাশ ভেসে না ওঠে। তারপর শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকায় লাশগুলো ফেলে দেয়া হয়।

পুরো অপারেশনে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ২৫ জন অংশ নেয়। এ ছাড়া ছিল কাঁচপুর এলাকায় পাহাড়ায় ছিল নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগী। লাশ ফেলে নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ঘাট দিয়ে উঠে শহরের ভেতর দিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছার পথে শহরের হাজীগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্টে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ পুলিশের মুখোমুখি হয়।

এসময় তারেক সাঈদ দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আমরা আপনাদের মতো ‘ওদের’ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি।’ তখন পুলিশ আর কিছু বলেনি। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে ফতুল্লা মডেল থানার এক কর্মকর্তার মুখোমুখি হয় মেজর আরিফ হোসেন। মেজর আরিফকে দেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আর কিছু বলেননি।

৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত ৩৫ জন : র‌্যাব-১১ এর চাকরিচ্যুত ৩ কর্মকর্তাসহ ২৫ জন এবং নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগীকে অভিযুক্ত করে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দেয়া হয়। এদের মধ্যে র‌্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পলাতক দেখানো হয় নূর হোসেনসহ ১৩ জনকে। যাদের মধ্যে ৮ জন র‌্যাব সদস্য।

আলোচিত ও নৃশংসতম ৭ খুনের ঘটনার ১১ মাস ১০ দিন পরে গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই চার্জশিট দাখিল করেন।

নূরের সহযোগিরা ও র‌্যাবের ৮ জন : নূর হোসেনের বহু অপকর্মের সহযোগী হিসেবে চার্জশিটে মাত্র ৯ জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয় প্রধান ক্যাশিয়ার আলী মোহাম্মদ, প্রধান দেহরক্ষী গোলাম মোর্তুজা চার্চিল, ক্যাশিয়ার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ প্রচার সম্পাদক আবুল বাশার, মাদক স্পট, জুয়া ও অশ্লীল নৃত্য পরিচালনাকারী রহম আলী ও নৌপথের চাঁদাবাজ মিজানুর রহমান।

তবে তখন পলাতক ছিল সেলিম (ভারতে নূর হোসেনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত), টোকাই শাহজাহান, সানাউল্লাহ সানা, জামালউদ্দিন। এদিকে আলোচিত ৭ খুনের পরে নূর হোসেনের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মতিন মাস্টারের ভাতিজা আরিফুল হক হাসান, সামসুল আলম, লোকমান পাটোয়ারী, আবুল কালাম ওরফে হিটলার কালাম, ফরহাদ দেওয়ান, লোকমান মেম্বার, রিয়াদ (নূরের গ্যানম্যান) ও জিতু সহ কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও তারা থেকে গিয়েছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

এজাহার নামীয় ৫ আসামী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন আলী, ঠিকাদার হাসমত আলী হাসু, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আশিক ও বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেনকে ১১ মাসেও গ্রেপ্তার করতে পারছিল না পুলিশ। তবে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের।

৭ খুনের পর ২০১৪ সালের ১৪ মে হাসুকে গ্রেপ্তারের খবর শোনা গেলেও সেটি আজো রহস্যাবৃত। এদিকে কিলিং মিশনে থাকা র‌্যাব এর ৮ জন হলেন, করপোরাল লতিফুর রহমান, সৈনিক আবদুল আলী, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, এএস আই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান। যেমন আছে নিহতদের পরিবারগুলো : বাবা বলে ডাকতে শিখেছে নিহত স্বপনের মেয়ে মাহী তখন মাত্র নয় মাসের শিশু।

পৃথিবীতে শিশুদের সব থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা-বাবার কোল। মুখে কথা ফোটার আগেই সেই মাহী হারায় তার বাবাকে। মাহীর বাবা মোহাম্মদ স্বপন র‌্যাব-১১ এর সাবেক সিও কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও অধিনায়ক এম এম রানা কর্তৃক অপহৃত হওয়ার পর তাদের তাদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন।

ছোট্ট এই মাহির বাবা অপরাধ শুধুমাত্র ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলামের সঙ্গে ছিল এবং নজরুল ইসলামসহ তাদের ৫জনকে অপহরণকারীদের চিনে ফেলে ছিল। নয় মাস বয়সে পিতৃহারা মাহী এখন ২৮ মাস বয়সের। মাহী এখন মা, বাবা এবং দাদা বলে ডাক দিতে পারে। মাহীর মা ও দাদা ডাকে তারা সাড়া দিলেও তার বাবা ডাকে কেউ সাড়া দেয়ার কেউ নেই। বাবা বাবা বলে ডাকার পর নিষ্পাপ মাহীর দুটি চোখ যেন চারপাশ খুঁজে বেড়ায় তার বাবাকে। নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার স্বপনের ছোট ভাই রিপন এসব কথা জানান।

অপরদিকে নিহত স্বপনের আরেক মেয়ে স্বর্নালী। স্বর্নালী যখন তার বাবাকে হারায় তখন তার বয়স আট বছর। স্বর্নালী এখন সিদ্ধিরগঞ্জের শাহিনূর কিন্ডার গার্টেনের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ড এখনও তার মনে দাগ কাটে। সে এখন মেনে নিয়েছে তার বাবা আর পৃথিবীতে নেই। পাশাপাশি স্বর্নালী এও বুঝতে শিখেছে তার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

স্বর্নালীকে তার বাবার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে পৈশাচিক নির্মমতার স্বর্নালী মুখে সাদামাটা উত্তর বাবাকে র‌্যাব মেরে ফেলেছে। রিপন আরও জানান, স্বর্নালী ও মাহী দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেই দিন কাটছে নিহত স্বপনের পরিবারের। র‌্যাব সদস্যদের মত নিষ্ঠুরতা দেখাননি স্বর্নালীর স্কুলের কর্মকর্তারা। তারা স্বর্নালীকে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

সেই সঙ্গে স্বর্নালী যাতে ভাল করে লেখাপড়া করতে পারে তার পড়ালেখায় যেন কোনো প্রকারের অবহেলা না হয় সেই দিকেও তার প্রতি বিশেষ যত্ন নেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। রিপন জানান, স্বপনের মৃত্যুর পর কদমতলী এলাকায় তার ভাগের কিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছেন স্বপনের স্ত্রী। জমি বিক্রির টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছেন তিনি। ব্যাংকে জমাকৃত টাকা থেকে যে লভ্যাংশ পায় তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন স্বপনের স্ত্রী।

তারপর তাদের যতটুকু সামর্থে কোলায় তার সবটুকু দিয়ে নিহত বড় ভাইয়ের স্ত্রী সন্তানদের লালন পালন করে চলেছেন তারা। নজরুলের রেখে যাওয়া তিন রত্ন এখনও আতঙ্কে : বাবার মৃত্যুর পর নজরুলের তিন সন্তান ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপরও বাবার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ বছর বয়সী নজরুলের ছোট্ট মেয়ে তাহনা। সে এখন রাজধানীর রাজউক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। আর নজরুলের ছোট ছেলে ফাহিম পড়লেখা করছে একই স্কুলের নবম শ্রেণীতে।

জেএসসি পরীক্ষায় ফাহিমও পেয়েছে জিপিএ-৫। আর বড় ছেলে নাঈম পড়ালেখা করতো ভারতে। বাবার হত্যাকাণ্ডের পর ভয়ে নাঈম পড়ালেখার জন্য আর ভারত যায়নি। নাঈমও পড়ালেখা করছে রাজউক মডেল কলেজে। সে এখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এস এস সি নাঈম পেয়ে ছিল জিপিএ-৫। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে নজরুলের তিন সন্তান রাজউক মডেল স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করছে বলে জানান নজরুলের স্ত্রী সালমা ইসলাম বিউটি। আর নজরুল খুন হওয়ার পর তার ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে স্বামীর শূন্য আসনে বসেছেন তার স্ত্রী সালাম ইসলাম বিউটি।

বিউটি এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৯জন নারী কাউন্সিলর থাকলেও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মত বিউটিও একমাত্র নারী কাউন্সিলর। বিউটি জানান, নজরুল চলে গেছে। তার স্মৃতি হিসেবে রেখে গেছে তিন সন্তানকে। তিনটি সন্তানই রত্ন। তাদের বাবা খুন হওয়ায় তারা ঠিক মতো লেখাপড়া করতে পারেনি। তবুও ওই বছর তানহা পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পরীক্ষায় পাস করেছে। বড় ছেলেটা ভারতে লেখাপড়া করতো। কিন্তু তার বাবার হত্যাকাণ্ডের পর সে আর ভারতে পড়তে যায়নি।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তিনজনকেই রাজউক মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। বিউটি আরও বলেন, ‘যে দিন নজরুলসহ সবাইকে অপহরণ করা হলো সেদিন আমরা যখন মামলা করতে ফতুল্লা থানায় গিয়েছিলাম সেদিন আমাদের গাড়িটিকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। পরে গাড়ি পাল্টে বাড়ি ফিরেছিলাম। নয়তো ওই দিন আমাদেরও মেরে ফেলা হতো। বিউটি আরও বলেন, সন্তান তিনটির মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে আছি।

তারা খুব আতঙ্কের মধ্যে থাকে। তাদের নিয়ে আমিও আতঙ্কে থাকি। নয়তো নজরুলের হত্যার বিচার চাইতে যেখানে যাওয়া দরকার সেখানেই যেতাম। আল্লাহর কাছে বিচার চেয়ে বেঁচে আছেন তাজুলের মা বাবা তাজুলের লাশের সন্ধান পেয়ে তার মা তাসলিমা বেগম বিলাপ করে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন নূর হোসেনের ওপর আল্লাহ গজব পড়বো। আমার মানিকের কোনো শত্রু ছিলো না গো। আমার মানিকটারে তারা কিভাবে মাইরা ফালাইলো গো। আমি অহনে কার মুখ দেইখা থাকুম। তাজুলের বাবাও বলে ছিলেন তাজুলসহ সাতজনই আমার পোলা। যারা আমার পোলাগো খুন করছে তাদের বিচার আল্লাহ করবো। বাকি দুই ছেলে মুখ দেখে তাজুলের মা বেঁচে থাকলেও তাজুলের কথা যেন কিছুতেই ভুলতে পারেননি এই সন্তান হারা মা। তাজুলকে হারানোর পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এখনও তিনি অসুস্থ। আর পৃথিবীর সব থেকে ভারী বোঝা ছেলের লাশ কাঁধে নিয়ে তাজুলের বাবা আবুল খায়েরেরও একই অবস্থা। নিহত তাজুলের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম রাজু জানান, ভাইয়া ছিল আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মৃত্যুর আগেও ভাইয়া ছাত্র ছিল।

তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন থেকেই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার স্বপ্নটা পূরণ হয়নি। দরিদ্র পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হত্যার পর তাদের পরিবারটির যে অবস্থা হয় আমাদেরও ঠিক অবস্থা। কোনো রকমে দিন কাটতে আমাদের। গার্মেন্টে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী স্বামীকে হারানোর পর এখন গার্মেন্টে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন সাত হত্যাকাণ্ডে নিহত গাড়ি চালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর নূপুর। গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল র‌্যাব কর্তৃক মালিক স্বপন মিয়ার সঙ্গে অপহৃত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর।

মূলত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে অপহরণ করতে গিয়ে স্বপন, জাহাঙ্গীর ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ মোট সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করে র‌্যাবের কর্মকর্তারা। জাহাঙ্গীর যখন র‌্যাবের নির্মমতার শিকার হয়ে তার লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে গলে যায় তখন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূপুর ছিল ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ২০০৪ সালের ৪ জুলাই একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় নূপুর। তখন ছিল রমজান মাস। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী জাহাঙ্গীরের মেয়ের নাম রাখেন রোজা।

নিহত জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর জাহাঙ্গীরের পরিবারের বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘স্বামী না থাকলে স্ত্রীর জীবন যেভাবে চলে সেইভাবেই চলছে জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর জীবন। তার মা মেহেরুন্নেছার সঙ্গে কদমতলীর বাসায় রয়েছে নুপুর। বর্তমানে নুপুর একটি গার্মেন্টে চাকরি করে সংসারের ব্যয় বহন করছে নুপুর। তবে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ভাল আছে জাহাঙ্গীরের মেয়ে রোজা।

সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের দেয়া চার্জশিট সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে তারা আর কোনো কিছু করতে চান না। ভাই হারিয়ে সেই দুঃখই বুকে চেপে আছেন।’ ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করার পর হত্যা করা হয়। তিনদিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে।

নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম সে সময় অভিযোগ করেন, র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে ভারতে পালিয়ে যান নূর হোসেন। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ জুন কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে কৈখালি এলাকার একটি বাড়ি থেকে দুই সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়।

গতবছর ১৮ আগস্ট নূর হোসেন ও তার দুই সহযোগী ওহাদুজ্জামান শামীম এবং খান সুমনের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ। নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম সন্দীপ চক্রবর্তী গত ১৬ অক্টোরবর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি করে দেন।

কে এই নূর হোসেন : ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন ১৯৯২ সালে বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি শামীম ওসমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়ন কাঁচপুর শাখার সভাপতি হন। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের পর তিনি এলাকায় ফেরেন। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে বালু-পাথরের ব্যবসা, উচ্ছেদে বাধা, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!