ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এপর্যন্ত বহবার ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল , বিএনপিকে বর্তমান সময়ের মতো বৈরী পরিবেশ আর কখনও অতিক্রম করতে হয়নি । এই প্রবল প্রতিকূল পরিবেশেও দলের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে দেশমাতা বেগম খালেদার জিয়ার প্রতি নেতা কর্মীদের আস্থা ও ভালবাসা আজও অটুট রয়েছে ।
দলের ভবিষ্যৎ নেতা , শহীদ জিয়ার যোগ্য উত্তরসুরী দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রতি দলের আপামর নেতা কর্মীদের রয়েছে অগাদ বিশ্বাস ও নৈতিক সমর্থন । এমতাবস্থায় দলকে সুসংগঠিত করে জনগনের প্রত্যাশায় কাজ করে যাওয়ার প্রয়োজন আজ সময়ের দাবী ।
এই লক্ষ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসার পর বিএনপিসহ এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে । চমক থাকবে র্শীষ নেতৃত্বেও ।
র্শীষ পর্যায়ে দলের নীতির্নিধারনী ফোরামসহ জাতীয় নিবার্হী কমিটির সকল পর্যায়ে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি মহাসচিবের পদটি ভারমুক্ত করে পুর্ণাঙ্গ করা হবে ।
আসবে অনেক নতুন মুখ। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি গবেষণা সেল খোলা হবে। যা দলের ‘থিংক-ট্যাংক’ এর কাজ করবে । এই সেলে দলীয় ঘরানা সম্ভাব্য বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা কাজ করবেন ।
পরিবর্তন আনা হবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসন রাজনৈতিক কার্যালয়ের কাঠামোতে । দলটির সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য মিলেছে । এছাড়াও দলে সম্পূর্ন নিষ্ক্রীয় এবং দলের স্বার্থ বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত কিছু নেতৃবৃন্দের ব্যাপারেও অচিরে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিএনপি ।
জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন , চেয়ারপারসন দেশে ফেরারপর দলের দুই র্শীষ নেতার মধ্যকার আলোচনার বিষয়টি আমরা জানতে পারবো । স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, দল পুনর্গঠন তো করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই । ইতিমধ্যে সারাদেশে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলেছে। দলের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে । সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্বকে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই । তাই তিনি দেশে ফিরে এসে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন ।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন , স্ট্যান্ডিং কমিটি , উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে এমন বেশ কিছু সদস্য আছেন , যারা বছরের পর বছর দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না । তাদের রেখে আগামী দিনে সক্রিয় রাজনীতিতে কোনো কাজ হবে বলে আমি মনে করি না । দেশে ফেরার পর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ।
দলের সূত্র জানায় , বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকে পারিবারিক সফর বলা হলেও রাজনৈতিকভাবে এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ।
দলীয় বিষয়ে করণীয় নিধার্রণে ইতিমধ্যে মা ও ছেলের মধ্যে একান্তে আলোচনা হয়েছে । অনেক গুরত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তও সেখানে নেওয়া হয়েছে । যা আগামী দিনে দলকে নতুন প্লাটফর্মে দাড় করতে সাহায্য করবে ।
নতুন ফর্মেটে বিএনপিকে যে গোছানো হবে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া নিজেই ।
সম্প্রতি লন্ডন প্রবাসী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই দেশে থাকার কারণে আমার অনেক বিষয়ে জানার সুযোগ হয়েছে । বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে। কারণ এরআগে আমার কোনো দেশে এতোদিন ধরে থাকার সুযোগ হয়নি ।
তিনি বলেন , যারা দলের প্রতি নিবেদিত, দলের সঙ্গে বেইমানি করেনি, করবে না, তাদেরই এবার আমরা বিভিন্ন জায়গায় নেবো। তাদের সম্মানিত করতে চাই ।
জিয়া পরিবার ঘনিষ্ট সূত্র জানায় , বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকালিন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা একেবারেই কম ।
এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা এখন চলমান । সরকার যে মা ও ছেলেকে কোনো ছাড় দেবে না এটা ভেবে নিয়ে সামনে দিকে এগুচ্ছে বিএনপি । এজন্য বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক মানষিক ও দলীয় ভাবে সহযোগিতা দিতে তার পুত্রবধু ডা. জোবায়েদা রহমানকে রাজনীতিতে সক্রিয় করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে । আগামী জাতীয় কাউন্সিলে কিংবা তার আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে তাকে ।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চেয়াপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম বলেন , আমিও বিষয়টি শুনেছি । তবে ডা. জোবায়েদা রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে আমি বলতে পারছিন না । তবে তিনি যদি রাজনীতিতে আসে তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই । তার মতো ক্লীন ইমেজের একজন মানুষ দলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। যদি এমনটা হয় তাহলে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো ।
এদিকে লন্ডনে মা ছেলের মধ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছে দলপুর্নগঠনের বিষয়টি ।
দুই নেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত তরুণদের আনা হবে গুরুত্বপূর্ণ পদে । ফলে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে নয়টি পদেই নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে স্থায়ী কমিটির পাঁচ নেতা । আর সরিয়ে দেওয়া হতে পারে আরও চারজনকে ।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল বিলুপ্ত করে স্থায়ী কমিটির সমমর্যাদায় ৩০ সদস্যের নতুন দলের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হবে । পরিবর্তন আসবে যুবদলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটিতে ।
লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দল পুনর্গঠন নিয়ে কথা বলেছেন ।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবারো কিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে পরিবর্তনের কথা বলেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান ।