ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সর্বক্ষেত্রে সমঅধিকার সহ সাত দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে ছয় মাস সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পরিষদের নেতারা।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে 'অস্তিত্ব রক্ষার প্রত্যয়ে এবং সম-অধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে' ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী মহাসমাবেশে থেকে এ হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
সমাবেশে জাতীয় ঐকমত্যের সাত দফা দাবিনামা উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্বশীলতা, সাংবিধানিক বৈষম্য বিলোপকরণ, সম-অধিকার ও সমমর্যাদা, স্বার্থবান্ধব আইন বাস্তবায়ন ও প্রণয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য নিরসন, দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্প্রদায়িকতা ধর্মান্ধতা সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'ডিসেম্বর মাসে এই সভা করার কথা ছিল না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের একটি বৈচিত্র ছিল। সেই বৈচিত্রের মধ্যে একটি সৌন্দর্য্য ও সুষমা ছিল। যেখানে হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলেই আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম।'
তিনি বলেন, 'আজ স্বাধীনতার ৪৬ বছরে এসে আমার ৫৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনের পরও আমাকে বলতে হয়- আমাদের সেই আখাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। দেশে এখন সংখ্যালঘুদের ওপর বহু নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্র জানে না, সরকার জানে না, রাজনৈতিক দল জানে না এমন কথা নয়।'
সুরঞ্জিত বলেন, 'রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম নাকি ইসলাম ধর্ম রাষ্ট্র এটা বড় কথা নয়। বড় কথা- আমাকে বাদ দিয়া মুক্তিযুদ্ধ, কোনো আন্দোলন, কোনো লড়াই করেছেন? আমার চেয়ে বড় ত্যাগ আপনারা করেছেন? করেননি। আমার সুবিধাটা বাদ দিয়ে নিজের সুযোগটা নিছেন, এইতো কথা।'
তিনি বলেন, 'এ সমাবেশে স্পষ্ট কথা কইতে আইছি, ইনাইয়া-বিনাইয়া, ঘুঁচাইয়া-প্যাঁচাইয়া কথা কইতে নয়। আমরা আমাদের সমান অধিকার চাই। আজ কি কল্পনা করা যায়- যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার একটা সরকার, অথচ সেই সরকারের কেবিনেটে একজন সংখ্যালঘুকে কেবিনেট মিনিস্টার করা গেল না। এর সঙ্গে জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও আইয়ুবের কেবিনেটের বেশ-কম কী?'
প্রবীণ এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, 'একবার ভেবে দেখেন- ১৯৪৭ সালে দেশে সংখ্যালঘু ৩৭ ভাগ ছিল। এরপর '৭১ এ এসে ২১ ভাগ আর এখন ৯ কিংবা ১০ ভাগ ! আর তিন বছর পরে ১০ এর শূন্য চইলা যাবে। তখন ওই গণতন্ত্র কঠিন হবে, সেই গণতন্ত্র আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের রূপ নেবে। চিন্তা কইরা দেখছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা এত সহজ না।'
পৌরসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে ২৩৬ জনের মধ্যে নয়জন সংখ্যালঘুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এটা কোনো বিচার হইলো?'
সুরঞ্জিত বলেন, 'সামরিক বাহিনীতে আপনরা এই দেশের সংখ্যালঘুদেরকে নিচ্ছেন না। এটি সংবিধান লংঘন করার মতো গুরুতর অপরাধ। বিজিবিতে চাকুরি জন্য গেলে বলে- এই তোমরা একটু সইরা দাঁড়াও। তাহলে এরা যাবে কোথায়?'
তিনি বলেন, 'যদি চাকুরিটাও না পায়, ব্যবসাটাও না পায়, তাহলে কোথায় যাবে তারা? এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বানাইছেন, কয়টা ভিসি দিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান থেকে। এতগুলো ব্যাংক ভাগভাটোরা করে নিয়া গেলেন, একটা ব্যাংক দিয়া দেখলেন না, তারা নিতে পারে কিনা। তাহলে আমি আমার ছেলেদের চাকুরি দেব কোথায়?
হুঁশিয়ারি দিয়ে সুরঞ্জিত বলেন, 'মনে করেছেন- সংখ্যালঘুরা খুবই পোষ্য, যা বলা যায় শুনে। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আরও ছয়টি মাস দেখবো। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আবারও আমরা সমবেত হবো।' 'স্পষ্টভাবে বলতে চাই- খায় দায় মুজির উদ্দিন মোটা হয় জব্বার এটা চলবে না। আমার খাইবেন, আমার গাইবেন, আর মোটা হবেন জব্বর তা হইবে না। যারা ব্যাংক-মুন নিছেন নিয়া যান, কিন্তু আমাদেরকে আপনরা ভোট ব্যাংক বানাবেন না' যোগ করেন তিনি।
ঐক পরিষদের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্তের (বীরউত্তর) সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রিয়া সাহা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্তু কুমার দেব, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিও প্রমুখ। সমাবেশে সাত দফা দাবিনামা উপস্থাপনা করেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এবং সমাপনী বক্ত প্রদান করেন ঊষাতন তালুকদার এমপি।