ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ‘‘ আজকে দেশে গণহারে মানুষ হত্যা চলছে । দেশে গণতন্ত্র , মানবাধিকার নেই , আইনের শাসন নেই । বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই । আজ শুধু শুধু চলছে অত্যাচার অত্যাচার । অত্যাচার করছে শাসকদল যারা জবরদখল করে ক্ষমতায় আছে । আজকে হায়নার কবলে দেশ , আজকে ডাইনির কবলে দেশ । এরা রক্ত খেকো মানুষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ।
মঙ্গলবার রাতে নিজের কার্যালয়ে ছাত্র দলের আহত নেতা-কর্মীদের এক অনুষ্ঠানে দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে এইরকম অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ।
তিনি বলেন, ‘‘ পুলিশ ও সামরিক বাহিনী- তাদেরকে বলছি , আপনারা কোনো দলের কর্মী না । আপনারা এদেশেরই সন্তান । আপনারা দেশের মানুষের দিকে তাকান। সশস্ত্র বাহিনীকে বলব , এই বাহিনী গড়েছি আমরা । এরা তো চায়নি । তারা চেয়েছিলো বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই ।” ‘‘ লোভ দেখানোর জন্য আজ তাদেরকে বিপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । আজকে তাদেরকে দেশে নিরাপত্তার জন্য কোনো কাজ দেয়া হচ্ছে না । তারা এখন রাস্তা-ঘাট বানাবে , এই বানাবে , বিল্ডিং বানাবে । তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে । এই হলো দেশের অবস্থা ।”
বিগত আন্দোলনের সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের অনুদান দিতে চেয়ারপারসন কার্যালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । হত্যা-গুমের জন্য পুলিশ ও র্যাবকে অভিযুক্ত করে খালেদা জিয়া এজন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও র্যাব এর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে সরাসরি দায়ী করেন খালেদা জিয়া ।
মেহেরপুরে দুই জন কর্মীকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত করার ঘটনা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ গতকালও দুইজনকে ক্রসফায়ার করা হয়েছে । কীসের ক্রসফায়ার। পুলিশ ও ছাত্রলীগ এসব করছে। পুলিশের কমিশনার ছিলো আগে এখন র্যাবের ডিজির বেনজীর- এ হলো মানুষ খেকো। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হাসিনা আর এর আগে ছিলো জিয়া । আরো কয়েজন আছে ।” ‘‘ আমি পুলিশের সবাইকে অভিযুক্ত করব না, খারাপ বলবো না । পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা বাধ্য হয়ে এই কাজ করছে। তারা নিজের দেশের ভাই-বোনকে মারছে ।
পুলিশ ও র্যাব বাহিনীকে বলব, এসব হত্যা বন্ধ করুন। র্যাবের বেনজীকে বলব, এসব বন্ধ করেন। নইলে এর পরিণতি ভালো হবে না।” ‘ সীমান্তে মানুষ হত্যার কোনো প্রতিবাদ নেই’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আর কখন জাগবেন । আর কত মা-বোনেরা কাঁদবেন , সন্তান হারাবেন । এখন আমাদের জাগতে হবে । এখন সময় এসেছে ।”
বিচারপতিদের ‘নিরপেক্ষভাবে’ বিচার কাজ পরিচালনার আহবান জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন , ‘‘ আপনারা সদয় হউন। ন্যায় বিচার করুন । অন্যায় নির্দেশ মানবার জন্য আপনারা শপথ নেননি । আপনারা শপথ নিয়েছেন সত্যিকার ন্যায় বিচার করবেন, জনগনকে সুবিচার দেবেন ।” জনপ্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে সুশাসন নিশ্চিত করার আহবানও জানান তিনি ।
বিএনপি দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিহিত করে বিএনপিকে রনাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে অভিহিত করেন খালেদা। ‘‘ আমরা বিএনপি সন্ত্রাস ও জঙ্গিতে বিশ্বাস করিনা। এই আওয়ামী লীগ কয়দিন পর পর কিছু লোককে ধরে অত্যাচার করে জঙ্গি বানায়। এই জঙ্গি জঙ্গি বলে বিদেশীদের ভয় দেখানোর জন্য। আওয়ামী লীগ চলে গেলে নাকী জঙ্গিদের উত্থান হবে। আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ থাকলে জঙ্গির উত্থান হয় এবং হবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘‘ কিছু লোককে ধরে র্যাব অনকে দিন রেখে দেয়।তারপর তাদের খেতে দেয় না। তাদের চেহারা সুরত বদলে যায়। তাদের চুল-দাঁড়ি লম্বা হয়ে গেলে তখন মানুষের সামনে আনে। পুলিশের কাছে যেসব হাবি-যাবি অস্ত্র থাকে, সেগুলো সামনে নিয়ে ধরে বলে এই যে জঙ্গি ধরেছি।”
ক্ষমতায় গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করার কথার বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বক্তব্যে আবারো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দাবি করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান, আফরোজা আব্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।