দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ আইএস এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এর যুক্তিতে সৌদি নেতৃত্বে জোট সামরিক গঠনের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য এবং কার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিচার বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে।
মুসলিম প্রধান ৩৪ টি দেশ নিয়ে নতুন এই জোটে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশও। সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর এবং আফগানিস্তানে জঙ্গিদের মোকাবেলা করবে এই জোট।
তাজ হাসমি যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি অঙ্গরাজ্যের অস্টিনপি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক জিহাদি তৎপরতা নিয়ে একাধিক গবেষণা ধর্মী বই লিখেছেন তিনি।
এসব বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে বলেন ড. তাজ হাসমি। আইএস দমনে মার্কিন নেতৃত্বে যেখানে বহু দেশ যার ভিতরে অনেক মুসলিম দেশও রয়েছে।
তারা জোট বেঁধে কাজ করছে সেখানে আলাদা করে সৌদি আরব এই জোট গঠনের পিছনে কারণ কী থাকতে পারে এ প্রসঙ্গে ড. তাজ হাসমি বলেন, প্রথমত যেটা পশ্চিমা দেশগুলোতে সবসময় বদনাম যে মুসলমানদের এরকম আইএস টেরোরিষ্ট নামে একটা সংস্থা ওরা সারা দুনিয়া জ্বালিয়ে খাচ্ছে তার বিরুদ্ধে মুসলমানদের কোন সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ গড়ে উঠেনি।
ওই দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমি মনে করি এর একটা পজেটিভ দিক আছে। সেটা হল মুসলমান দেশগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে নেই তারাও এরকম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে।
দ্বিতীয় ব্যাপার যেটা খটকা লাগে যে এইভাবে তাদের ভেতরে এত বিরোধ মুসলমান দেশগুলোর ভেতরে অনেকের সঙ্গেই কোন রকম আদান-প্রদান নেই, ডিপ্লোমেটিক সম্পর্ক নেই। তারা একচ্ছত্র হয়ে এরকম একটা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোট করে যুদ্ধ করতে পারবে বা করবে এ ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দীহান।
এই জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সৌদি আরব আসলে কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে এখন খোলাখুলি কথাবার্তা হচ্ছে, অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কারণ তারা বলছেন এই যে জঙ্গি আছে আইএসসহ এরা ওহাবি ইসলামে দিক্ষিত এবং এরা টাকা, পয়সা সৌদি আরব থেকে অথবা দেশের প্রভাবশালি মহলের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকে সেখানে সৌদি আরবের নেতৃত্ব কতটা বিশ্বাসযোগ্য এর উত্তরে তাজ হাসমি বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে আলকায়েদা এবং ইসলামি স্টেট দুটোইতো ওহাবিদের সবচেয়ে স্ট্রিম দিক একেবারে উগ্রপন্থী মতবাদ সেটা প্রচারে এবং প্রসারে তারা লেগে আছে।
এতে সৌদি আরব প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না হলেও সৌদি রাষ্ট্রের যে মতাদর্শ সেটা নিশ্চয়ই এদের উৎসাহ দিচ্ছে। যেখানে আমরা দেখছি নারী স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং শরীয়া বিরোধী কোন কিছু তারা সহ্য করছে না।
এটা খুবই আশ্চয্যের বিষয় সৌদি আরব এমন একটা জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে যারা মুলত সৌদি আরব রাষ্ট্র ব্যবস্থা যা প্রচার করে সেটার প্রসারে তারা লেগে আছে সুতরাং এটাতে নিশ্চয়ই প্রশ্নবিদ্ধ।
আরেকটা জিনিস আমরা দেখছি সৌদি এই জোটে যে দেশগুলো ইরাক, সিরিয়া, ইরান নেই। এ দেশগুলো মুলত শিয়া প্রধান দেশ তাহলে এটা কী মুলত সুন্নি ব্লক হচ্ছে এর উত্তরে তাজ হাসমি বলেন, অবশ্যই এটা বোঝাই যাচ্ছে যেখানে ইসলামি স্টেট সবচেয়ে বেশি আঘাত করছে সিরিয়া, ইরাক এবং লেবানন এখানে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই।
সৌদি আরব এবং তাদের যে সঙ্গী দেশগুলো বিশেষ করে তুরস্ক এবং সৌদি আরব বেছে বেছে তারা এই যে শিয়া এবং কুর্দি যারা আইএস বিরোধী তাদেরকে হত্যা করছে।
এর আগেও দেখেছি ২০১১ সালে বাহারাইনে যেখানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হলো এখানে ট্যাংক পাঠিয়ে শিয়া জনগোষ্ঠীর আন্দেলনকে ধংস করে দিলো আমেরিকা সেখানে সৌদি আরব নিষ্ক্রিয় ছিল। তাদের মুল দন্দ্বটা হচ্ছে মিয়াইজমকে ধংস করতে হবে। তারা মনে করে খমেনির আদর্শে তারা আদর্শান্বিত হয়ে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনের একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এটা একটা প্রক্সি ওয়ার এর ব্যাপার।
ইরান, সিরিয়া এবং ইরাককে এখানে রুখতে হবে এবং সেই জন্য সুন্নীদেশগুলো নিয়ে আইএস ধংস করার নামে জোট গঠন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দিয়েছে এটার কী কারণ এর জবাবে তাজ হাসমি বলেন, দেশের পররাষ্ট্রনীতি সবসময় সঠিক পথে চলে এটা আমি মনে করি না। এখানে মনে করা হচ্ছে এই জোটে গেলে কিছু পয়সা কড়ি আসবে। বাংলাদেশ সেখানে কিছু সেনাবাহিনী পাঠাবে কিছু ডলার আসবে এটা সুবিধাভোগী পলিসি বলে আমি মনে করি।
সবচেয়ে যেটা বিপদজনক ব্যাপার হবে আইএস এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যদি সৈন্য বাহিনী পাঠায় তাহলে আইএস নেই এই কথাটা আমরা বেশি দিন ধরে রাখতে পারবো না। এক্ষেত্রে আইএস বাংলাদেশকে শত্রু রাষ্ট্র হিসাবে তারা আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস মুলক কাজে লিপ্ত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।