DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

শেখ হাসিনার দু:শাসনে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে অনিরাপদ জনপদ : তারেক রহমান

tr1ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ‘শেখ হাসিনার দু:শাসনে দেশ এখন অনিরাপদ জনপদে পরিণত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।

তিনি লন্ডনে বাংলাদেশের ৪৫তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সভায় এমন মন্তব্য করেন। লন্ডনে দ্যা রয়্যাল রিজেন্সী অডিটরিয়ামে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দু:শাসনে দেশ এখন অনিরাপদ জনপদে পরিণত হয়েছে। দেশে এখন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধনী, গরীব, নারী পুরুষ কেউ নিরাপদ নয়। এই অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। এখন দলীয় স্বার্থ নয় দেশের স্বার্থ, প্রতিহিংসা নয় সহযোগিতা, বিরোধ কিংবা বিভক্তি নয় ঐক্য ও সংহতি এখন সময়ের দাবি। এই ঐক্যের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার।

সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ। সভায় অরো বক্তৃতা করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমানসহ দলের নেতারা।

তিনি বলেন, দেশে এখন গনতন্ত্র নেই। মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই মানুষ গুম হচ্ছে খুন হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্র থাকেনা।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, তিনি দেশে একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেমন আছেন? জবাবে ওই ব্যক্তি বলেছেন, ভালো থাকার নির্দেশ আছে। তারেক রহমান বলেন, এই হলো দেশের বর্তমান পরিস্থিতি। যেখানে এখন ভোট চাইতে গিয়েও নারীরা ধর্ষিতা হয়।

এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৪টি পেরৈসভায় নির্বাচন। কিন্তু দেখা গেছে, নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের ৬ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌর মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করেছে তথাকথিত নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশের জনগণ সব সময়ই স্বাধীনচেতা, গণতন্ত্রকামী এবং নির্বাচনমুখী। তৃণমুণল পর্যায়ের পৌরসভা নির্বাচনে ফেনী সদর, পরশুরাম এবং চাটখিল পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাওয়া যাওয়া যাবেনা এটি শেখ হাসিনার তথাকথিত নির্বাচন কমিশন ছাড়া পাগলেও বিশ্বাস করেনা।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও ১৫৪ জনকে এমপি একইভাবে এমপি ঘোষণা করেছিলো এই নির্বাচন কমিশন। কৌশলগত কারণে বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি আগেই বলেছে এই নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উপর ইউকে বিএনপি মিডিয়া সেলের উদ্যোগে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হয়।

তারেক রহমান বলেন, দু:খজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইতিহাসকে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে এবং একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই ইতিহাস বিকৃতির শুরু।

তিনি বলেন, আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন জিয়াউর রহমান নাকি অবৈধ রাষ্ট্রপতি। অথচ এ ধরণের কথা কোন রায়ে নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে সম্প্রতি বৃটেনের একটি সংস্থা ডিএফআইডি সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেই রিপোর্টেও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনেও সংশয় রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, যদি আদালতের রায়ের দোহাই দেয়া হয় তাহলে দেখা যায় ২০০০ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত তাকে রংহেডেড হিসাবে রায় দিয়েছিলো। তারেক রহমান প্রশ্ন করেন, ২০০০ সালের উচ্চ আদালতের রায় আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে যদি কোন আদালত শেখ হাসিনার বর্তমান কথাবার্তাকে পাগলের প্রলাপ কিংবা তার সময়ে নেয়া সকল কার্যক্রমকে পাগলের কাজ কিংবা অবৈধ হিসাবে রায় দেয় ? স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ অবৈধ ছিলো বলে যদি ভবিষ্যতে কোনো আদালত রায় দেয় এবং অবৈধ রাষ্ট্রপতি হিসাবে যদি তার পরবর্তী সকল কার্যক্রম অবৈধ হিসাবে রায় দেয় ? কিংবা শেখ মুজিব সাংবিধানিকভাবে সকল গণতান্ত্রিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কারণে সাংাবিধানিকভাবেই যদি তাকে গণতন্ত্রকারী হত্যাকারী হিসাবে আদালতের রায় আসে কিংবা রায়ে শেখ মুজিবকে বাকশালের জনক হিসেবে উল্লেখ করে? তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই রাজনৈতিক ইস্যুর সমাধান হওয়া দরকার জনতার আদালতে।

রাজনৈতিক ইস্যু আদালতে নেয়া একটি খারাপ দৃষ্টান্ত মন্তব্য করে তিনি বলেন, আদালত কিংবা র্যাব পুলিশ দিয়ে ইতিহাস নির্মাণ করা যায়না। সেই ইতিহাস জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়না। জনতার আদালতে বিচার কিভাবে হয় এর একটি উদাহরণ তুলে ধরেন তারেক রহমান বলেন, এখন থেকে ২৫ বছর আগে, ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জনগণ রায় দিয়েছিলো জিয়াউর রহমানের দল বিএনপিকে, প্রত্যাখ্যান করেছিলো আওয়ামী লীগকে।
মহান বিজয় দিবসের বক্তৃতার শুরুতেই তারেক রহমান স্মরণ করেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যিনি ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন সশস্র মুক্তিযুদ্ধে। তারেক রহমান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষানীকে যিনি ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনেই পাকিস্তানকে আসসালামুআলাইকুম বলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বুনেছিলেন। মাওলানা ভাষানীই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে প্রথম স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন।

তারেক রহমান বলেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের কথাও স্মরণ করছি যদিও শেখ মুজিব আন্দোলন করেছিলেন স্বায়ত্বশাসনের জন্য তবে জনগণ চেয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তারেক রহমান প্রশ্ন করেন, যদি ১৯৭১ সালের সাত মার্চে শেখ মুজিবের চারটি শর্ত মেনে নিতো তাহলে কি সে সময় দেশ স্বাধীন হতো? পাকিস্তান চারটি শর্ত মেনে নিলে শেখ মুজিব হতেন ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তারেক রহমান স্মরণ করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক তাজউদ্দিন আহমদ, জেনারেল ওসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য শহীদদের যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশ।

তারেক রহমান বলেন, ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তিনি ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইতহাসের বেশ কিছু সত্য তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বই থেকে উদ্ধৃত করে দলিল প্রমাণসহ তথ্য প্রমাণ তুলে ধরলেও কিছু লোক গালাগাল করা ছাড়া কোন তথ্য ভুল প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, যেসব বই থেকে তিনি দলিল প্রমাণ তুলে ধরেছেন তাদের অনেকে এখনো বেঁচে আছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!