ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও সরকারদলীয় ব্যক্তিদের নির্লজ্জ ভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের পটভূমিকায় তা সঠিকভাবে পালনের জন্য সরকার প্রধান শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কক্ষে রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সরকার দলীয়রা আইনশৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন— এমন অভিযোগের মুখে নির্বাচন কমিশনার সরকার প্রধানকে আচরণবিধির বিষয়টি দেখতে বলেন।
শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘যারা সরকারে আছেন, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হবেন এটাই আশা করব। বর্তমানে যারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছেন এবং নির্বাচিত, তাদের অনুরোধ করব— তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। এখানে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন আছে। যদিও আমরা নির্বাচন কমিশন আলাদা, তারপরও সরকার থাকা অবস্থায় নির্বাচন করছি। তাই সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন উঠবে। সেই কারণে যিনি সরকার প্রধান, তাকেও বলব বিষয়টি দেখার জন্য।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে বলব— সরকারে যারা আছেন, তারা যেন আমাদের সহযোগিতা করেন। আমাদের যেন অপ্রস্তুত না করেন এবং নিজেরাও যেন অপ্রস্তুত না হন।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘এখন পযন্ত আমরা যা রিপোর্ট পেয়েছি, আপনারা এমন কিছু দেখেননি যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। আমাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা অনিয়ম দেখেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।’
নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘যারা ব্যবস্থা নেবেন না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেবেন না, তাদের বিরেুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব। ব্যবস্থা নিতেই হবে। কেউ না নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
রিটার্নি কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না— জানতে চাইলে ইসি বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ যে পরিমাণ পাওয়ার কথা, সে পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে বৈঠকে তাদের অত্যন্ত খোলামেলা করে বলেছি। তাদের বলেছি, এগুলো জাতীয় দায়িত্ব, সঠিকভাবে পালন করুন।’
তিনি বলেন, ‘কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি এড়িয়ে গেলে, সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং নেব।’
ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপে পুলিশ প্রধান যে সুপারিশ করেছেন সে ক্ষেত্রে কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে সুবিধা-অসুবিধার কথা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সেখানে বলেছি, তারা যেন এলোমেলোভাবে না যান। সাংবাদিকরা আগে যেভাবে যেতেন, সেভাবেই যাবেন। তবে অন্যদের সুযোগ দেবেন।’
বৈঠকে উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে, সেক্ষত্রে কমিশন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দারা জানিয়েছে, কোনো আশঙ্কা নেই। তবে আশঙ্কার ঘটনা ঘটলে তারা ব্যবস্থা নেবে।’
উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেছে, এ ক্ষেত্রে কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে— জানতে চাইলে শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র দখল হোক, এটা আমরা চাই না। কাউকে প্রশ্রয়ও দেই না।’ ‘আমরা কঠিনভাবে বলে দিয়েছি, যেন কোনো ধরনের ছাড় দেও্য়া না হয়।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু লোক আচরণবিধি লঙ্ঘনের চেষ্টা করছে, আগে সেগুলো লক্ষ্য করা হয়নি। অভিজ্ঞতা হোক বা পরিবেশের কারণেই হোক, এখন শক্ত ব্যবস্থা নিতে পিছপা হব না।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইসি পক্ষপাতিত্ব ভূমিকা পালন করছেন— এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজেরা দেখেছেন, আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি, বিভিন্ন সময় নিরপেক্ষতার জন্য চরম চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনও করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও কোনো দল অভিযোগ করলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমাদের দেশে একটা নিয়ম হয়ে গেছে যে, যারা চাপ সৃষ্টি করতে চায়, তারা অযথা নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে। তারা মনে করে, নির্বাচন কমিশন চাপে পড়বে। তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আমরা কোনো ধরনের চাপ সহ্য করব না। আমরা আমাদের মতই চলব।’ 1