ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, কট্টরপন্থি সংগঠন আইএস তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে চায় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে । পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) তার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছে ভারতে । তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করেছে – এ বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশকে জানিয়েছে ভারত ।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-এর একটি দল । খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
এনআইএ এরই মধ্যে বাংলাদেশকে জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় দাগি অপরাধীরা ভারতে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে । একই সঙ্গে জেএমবি কিভাবে তাদের শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটাচ্ছে সে বিষয়েও বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে এনআইএ’র এক কর্মকর্তা বলেছেন , বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোর রাডারে ধরা পড়ার পর পরই অপরাধীরা সীমান্ত পাড়ি দেয় । বাংলাদেশে গত মাসে যখন চারজন জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয় তখন সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কর্মকর্তারা ।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা শাখার কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন , এসব অভিযুক্ত ব্যক্তি ঘন ঘন পাকিস্তান সফর করেছেন । এর মধ্যে ৪৮ বার পাকিস্তান গিয়েছেন ইদ্রিস আলী নামে একজন। ওদিকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে শক্তি বৃদ্ধি করতে চায় মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।
গুজরাটে ভারত পুলিশ বিভাগের মহাপরিচালক ও আইজিদের বার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন ভারতের রাজনাথ সিং। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএনআই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য অনলাইন ফোরামের মাধ্যমে তরুণদের চরমপন্থায় আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাজনাথ সিং । গুজরাটের ভুজের কাছে র্যান অব কুচ-এ অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে রাজনাথ বলেন, ভারতেও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে ।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও ভালো সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি এ সময় বলেন , ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে আইএস । ভারতের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওই সম্মেলন উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।
রাজনাথ আরও বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে পূর্বের বছরগুলোর চেয়ে এ বছর নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক ভালো ছিল । সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশংসাযোগ্য কাজ করে দেখিয়েছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ।
তিনি আরও বলেন , বামপন্থি চরমপন্থায় আক্রান্ত রাজ্যগুলোর পরিস্থিতিও দ্রুত ভালোর দিকে যাচ্ছে । তবে এ অবস্থা মোকাবিলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে ।
তিনি বলেন , প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত আগ্রহে এ বছর নাগাদ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। ওদিকে বাংলাদেশের কাছে জেএমবির ১০০ সদস্যের একটি তালিকা তুলে দিয়েছে ভারত । এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্পর্শকাতর জেলাগুলোর পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে । এই এলার্ট সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ।
তিনি বলেছেন, জেএমবি সদস্যদের বিষয়ে আমাদের জানিয়েছে ভারত সরকার । তাদের নিষ্ক্রিয় করতে পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা । বাংলাদেশে গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে এরই মধ্যে এনআইএর কর্মকর্তারা দিল্লিতে নিজেদের মধ্যে একটি বৈঠক করে নিয়েছেন । সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে জেএমবির পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে ।
এক কর্মকর্তা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড় মামলার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে অভিযুক্ত কয়েকজনের নাম । তারা হলো সাদিক ওরফে সুমন, শেখ হেমতুল্লাহ ওরফে সাজিদ ও নাইম । তারা বাংলাদেশি সংস্থাগুলোর রাডারের আওতায় ছিল ।
পুলিশ যখন তাদের খুঁজতে শুরু করে তখনই তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায় । জেএমবি অপরেটিভরা বগুড়া, সিলেট, রাজশাহী, কুষ্টিয়ায় ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা করেছিল । এনআইএ কর্মকর্তা এসপি বিক্রম খালাতে বলেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে । এর মধ্যে ৫ জন পলাতক রয়েছে ।