ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকক্ষে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কড়াকড়িতে রাখতে লিখিত নির্দেশনা দিলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।
গেলো সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনী সমূহ নির্বাচন টিভিতে লাইভ কাভারেজ বন্ধ রাখার পক্ষে জোড়ালো দাবী জানানোর পর ইসি তাদের খুশী রাখতে এই নির্দেশনা জারী করেছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ । এর ফলে সরকারী চাপে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা আরও দুরুহ হয়ে উঠবে তাতে কোনোই সন্দেহ নেই ।
এই নির্দেশনায় সাংবাদিকরা পাঁচটি নিয়ম মেনে চলবেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না, কোনো প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন, সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন, সাংবাদিকরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্যে সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
ইসির এসব নির্দেশনার সমালোচনা করছেন খোদ সংস্থাটির কর্মকর্তারাই।
তাদের মতে, প্রথম নির্দেশনার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরের কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পরিবেশনে অসুবিধা হবে। এক্ষেত্রে অনুমতি পেতে বিলম্ব হলে প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারবে না গণমাধ্যম।
দ্বিতীয় নির্দেশনার ফলে, ব্যালট পেপার বা বাক্স বা নির্বাচনী উপকরণ দুর্বৃত্তরা নষ্ট করলেও সে সংবাদের গভীরতা বা প্রমাণযোগ্যতা কমে যাবে।
তৃতীয় নির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের অনেকটা হুঁশিয়ারিই দেওয়া হয়েছে। কেননা, যে কোনো সংবাদেই কোনো না কোনো পক্ষ উপকৃত হয়।
অথচ এতে বলা হয়েছে-সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা দলের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না। এক্ষেত্রে প্রকাশিত সংবাদকে কর্মকাণ্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে।
চতুর্থ নির্দেশনার ফলে কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা নির্বাচনী দায়িত্বরত কর্মকর্তা অনিয়ম করলেও তাকে কিছু বলা যাবে না। এক্ষেত্রে অনিয়মকারী কর্মকর্তাকে সুরক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পঞ্চম নির্দেশনায়, সরাসরি আইন লঙ্ঘনের পরিণতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ অন্য নির্দেশনার যে কোনোটা না মানার অভিযোগ এনে সংবিধান ও আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
ইসির অনেক কর্মকর্তাই বলেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনাররা দেশের বাইরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এসে মতামত দিয়েছেন- ইংল্যান্ড, আমেরিকায় ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা ঢুকেই না। কিন্তু এদেশে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের কারণে নির্বাচনী কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। তাই তাদের বিচরণ নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। আর সে ভাবনা থেকেই নীতিমালা করে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নির্বাচনেই ভোটকেন্দ্রে বা কক্ষে সাংবাদিক প্রবেশে এই কড়াকড়ি ছিল না। গত ২৮ এপ্রিলের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।
ওইদিন বেলা ১১ পর্যন্ত বেশিরভাগ কেন্দ্রেই সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডতায় অনেক কেন্দ্রে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতও করে পুলিশ। এরপর গঠিত এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয় যে সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
একইসঙ্গে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ সীমিত করা উচিত বলেও ওই তদন্ত কমিটি সুপারিশ করে। যে কমিটির প্রধান ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। এতে ৩ হাজার ৫৫৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
যেখানে ২০ হাজারে বেশি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ইসির জনসংযোগ শাখা সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র নেওয়ার জন্য ২৪ ডিসেম্বর মধ্যে আবেদন আহ্বান করেছেন।