ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অস্ত্র ও গুলিসহ নিষিদ্ধঘোষিত জেএমবির তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল শনিবার রাতে তাঁদের আটক করা হয়। জানা যায়, হাটহাজারি থানার আমান বাজার এলাকায় হাজী ইছহাক ম্যানসন নামের ওই দুই তলা বাড়ির নিচতলায় শনিবার রাত দেড়টা থেকে রোববার ভোর ৬টা পর্যন্ত অভিযান চালান তারা। গত ৫ অক্টোবর খোয়াজনগর এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্যদের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে নাহিম, রাসেল ও ফয়সাল নামে ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সী তিন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রাসেলের কাছ থেকে আমরা ওই আস্তানার সন্ধান পায়। পরে তাদের নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া যায়। সরঞ্জাম এর মধ্যে রয়েছে এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, ২০০ গুলি, দুটি ম্যাগজিন, দুই কেজি জেল এক্সপ্লোসিভ, ১০টি ডেটোনেটর, সেনাবাহিনীর ১২ সেট পোশাক, একজোড়া মেজর পদের র্যাংক ব্যাচ এবং বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।
অভিযানে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিটের এসআই সন্তোষ চাকমা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি স্নাইপার রাইফেলটি অত্যাধুনিক। চট্টগ্রামে এ ধরনের রাইফেল এর আগে আর উদ্ধার হয়নি।” ওই বাসা ভাড়া নিয়েছিল জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার ফারদিন। আগে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজনের কাছে ওই আস্তানার কথা জানা গেলেও ওই বাসার ঠিকানা আগে পুলিশ জানতে পারেনি।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগঃ এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল বাংলাদেশে কিভাবে আসলো?
চট্টগ্রামের ‘জঙ্গি’ আস্তানা থেকে স্নাইপার রাইফেল উদ্ধারের ঘটনাকে বিষ্ময়কর ও উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অত্যাধুনিক এ অস্ত্র বাংলাদেশে কোথা থেকে কিভাবে এলো এটিও প্রশ্নের বিষয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সমাজের মধ্যে বিভাজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য মসজিদে হামলা করা হচ্ছে। যারাই করুক তারা জেনে শুনে পরিকল্পনা করে করছে। কাদিয়ানি মসজিদে হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে যে ধরনের হামলা হয় সে ধরনের হামলা হয়েছে। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
তিনি বলেন, সৌদি সামরিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনলো কিনা সেটাও দেখার বিষয়।
চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা থেকে এমকে-১১ রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। এ রাইফেল তো সর্বাধুনিক অস্ত্র। মধ্যপ্রাচ্য ইরাকে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এ অস্ত্র জঙ্গিদের কাছে কিভাবে আসলো। এটা তো খোলা বাজারে কেউ কিনতে পারবে না। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এটার অনুসন্ধান কে করবে। জঙ্গি আস্তানাগুলো খুঁজে বের করার দায়িত্ব যাদের তারা কতটা পারদর্শী। গোয়েন্দাদের দুর্বলতা আছে। তাদের যে মুখ্য কাজ তারা সেটা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করছে। এটাকে হালকা করে দেখার বিষয় না। দেশের মধ্যে যে জঙ্গি সংগঠনগুলো আছে তারা এখন কোথায়। তারা কি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে?
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হলে কিভাবে মোকাবিলা করবে সরকার। এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। যারা সরকারের সঙ্গে সুর মেলায় তাদের কথা শুনলে হবে না। এ নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনীরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হলো। এর দায় আইএস স্বীকার করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার ধরনের দিক থেকে নতুন মাত্রা যোগ হলো। দুদিক দিয়ে বিষয়টি ভালো নয়।
প্রথম হলো- আগে শিয়াদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এখন কাদিয়ানিদের ওপর হামলা হলো।
দ্বিতীয়ত হলো- এই প্রথম বাংলাদেশে আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হলো। এর আগে আত্মঘাতী হামলা হয়নি।
এতে সেক্টরিয়ান হামলার বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে। চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র এমকে-১১ উদ্ধারের বিষয়ে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এর আগে এত অত্যাধুনিক অস্ত্র বাংলাদেশের জঙ্গিদের হাতে দেখা যায়নি। এটি ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয়।