ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আজ অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনকে প্রহসন ও নীল নকশার বলে মন্তব্য করেছেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন শেষে বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা আলমগীর বলেন, পৌর নির্বাচন নিয়ে আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম সেটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সহিংসতা ও ব্যাপক তাণ্ডবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
তারপরও ফলাফলে কারচুপির আশঙ্কা করে দলীয় এজেন্টদের ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করার নির্দেশ ও সব শেষে ফলাফলপত্রে রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষর সম্বলিত কপি নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হতে বলছি।
গণতন্ত্র বিশ্বাস করে বলেই সরকারের ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র’ স্বত্ত্বেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছিলো, নির্বাচন শান্তিপূর্নভাবে করবে। যদিও সেই আশ্বাসে বিএনপির কোনো বিশ্বাস ছিলোনা। সেটা এরই মধ্যে প্রমানিত হয়েছে।’
বিএনপির প্রার্থী-সমর্থকদের হয়রানি করতে সরকার সবধরনের কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকে বিএনপির প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, প্রচারণায় বাধা মিথ্যে মামলায় জর্জাড়িত করাসহ এমন কোনো কাজ নেই যা সরকার করেনি। নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার বলা হলেও কোনো প্রতিকার করেনি। সেজন্য ভোটের দিন কেন্দ্রগুলোতে সংঘর্ষ হয়েছে, ভোটরদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিপক্ষদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে, সিল মারার উৎসব হয়েছে।’ গণমাধ্যম যাতে নির্বাচনের সত্য চিত্র প্রকাশ করতে না পারে সেজন্য তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
“ভোট চলাকালীন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, অনলাইন ও স্যোশাল মিডিয়ায় ভোটের যে চিত্র দেখেছি, তাতে গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের অত্যন্ত ঘৃনিত ও সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের চেহারা যদি এই হয়ে থাকে, তাহলে সেই গণতন্ত্র অত্যন্ত ভয়াবহ।”
তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকে সাংবাদিকরা যাতে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারে, সেজন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এবারই প্রথম কেন্দ্রের ভেতরে যেতে শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এসব কিছুই প্রমান করে নির্বাচন প্রহসন ছিলো, সাজানো ছিলো এবং আগে থেকেই নির্ধারিত ছিলো। সেইভাবে তারা কাজ করেছে।’
পৌর নির্বাচনে যেসব গণমাধ্যমকর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভুতি জানান তিনি।
মির্র্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির প্রার্থী সমর্থকরা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে না পারে, সেজন্য পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হুমকি এবং সশস্ত্র অবস্থায় ভোট কেন্দ্রের পাশে পাহারা দেয়। অনেক জায়গায় রাতেই ভোট দিয়ে বাক্স ভরে ফেলে।’
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে এভাবেই তারা নির্বাচন করবে। কারণ তারা জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের পারাজয় অবশ্যম্ভাবী। সরকার নিজের জনপ্রিয়তা ‘দেখানোর জন্য’ দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন দিয়ে এতে প্রভাব বিস্তার করেছে দাবি করেন ।
মির্জা আলমগীর, ২৩৪টির মধ্যে দুইশ' পৌরসভায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। যেসব জায়গায় অনিয়ম হয়েছে সেখানে পুননির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের নীল নকশা অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থী ও এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। সংবাদ কর্মীদের হামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সবকিছু করা হয়েছে নির্বাচনে কারচুপি করার জন্য। ইসির কাছে বারবার অভিযোগ করেও এর কোনো প্রতিকার পাইনি।’
এরপরও যে কোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেছেন ‘কেন্দ্রের নির্দেশ আছে, স্থানীয়ভাবে দলের কোনো প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের সুযোগ নেই।’
এদিকে আজ বুধবার রাত ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
এরপর কাল-পরশু দলের অবস্থান জানানো হবে।
তিনি বলেন, “সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সেটি উল্টো প্রমান করার জন্য দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেছে। তারা যে জনপ্রিয় সেটি প্রমান করার উদ্দেশ্য ছিলো। এগুলো খুবই সিগনিফিকেন্ট। একটি সরকার তখনই এসব কাজ করে, যখন তাদের নৈতিক বৈধতার প্রশ্ন দেখা দেয়। কিন্তু পৌর নির্বাচনে প্রমাণ হলো তাদের কোনো জনপ্রিয়তাই নেই।”
বিভিন্ন পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীদের ভোট বর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট বর্জনের কোনো কথা বলা হয়নি। স্থানীয়ভাবে হয়তো কেউ বর্জন করেছে। জেনেছি সেই সংখ্যা ৮ জনের মতো হবে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে নির্দেশ ছিলো বর্জনের কোনো সিদ্ধান্ত যেন না নেওয়া হয়। অনিয়ম হলে নির্বাচন স্থগিত করে পুন:ভোট চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ড. আবদুল মঈন খান, ড. ওসমান ফারুক, আবদুল হালিম, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মোহাম্মদ শাহাজাহান, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।