ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে ‘সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির আশংকায়’ ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, দু’দলের সভার অনুমতি চাওয়ার পর থেকেই গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। রোববার সেই তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে জমা দেয়া হবে। রিপোর্টে কোন ধরণের নাশকতা, দুর্ঘটনা কিংবা সংঘর্ষের আশংকা থাকলেই সভা-সমাবেশে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সমাবেশকে ঘিরে যে কোনো ধরণের সংঘর্ষের আশংকা থাকলে কাউকেই অনুমতি দেয়া হবে না। কেননা ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৮, ২৯ ধারায় ‘জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমিশনারকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষমতাবলে তিনি রাজধানীতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন, বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করতে পারেন।
অনুমতির বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্সের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষণের জন্য পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনারকে (ডিসি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে রমনা বিভাগের ডিসি আব্দুল বাতেন বলেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষণের কাজটি ডিএমপি হেড কোয়ার্টার্স ডিভিশন দেখছে।
এদিকে, ৬ জানুয়ারি জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। এ রায়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে নাশকতার পরিকল্পনা শুরু করেছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। শনিবার রামপুরা থেকে কোটি টাকাসহ ৫ জামায়াত নেতাকে গ্রেফতারের পর পুলিশ এমন তথ্য জানতে পারে।
গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে জামায়াতের একটি গ্রুপ ৫ ও ৬ জানুয়ারি নাশকতা করতে পারে বলেও আশংকা করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাউকেই অনুমতি না দিয়ে সভা-সমেবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো।
রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সোহরওয়ার্দীতে না হলে নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হোক। তবে খোলামেলা কোন স্থানে ডিএমপি সমাবেশের অনুমতি নাও দিতে পারে বলে জানিয়েছে ডিএমপি হেড কোয়ার্টার্স সূত্র।
সূত্র জানায়, যদি গোয়েন্দা তথ্য ইতিবাচক হয়। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সমাবেশের অনুমতি পেতে পারে উভয় দল। এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়া হতে পারে।
এদিকে ৫ জানুয়ারি সোহরওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। রোববার একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আমরা আগে আবেদন করেছি। অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
এর আগে, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিও পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছিল আওয়ামী লীগ-বিএনপি। সমাবেশের আগের দিন ৪ জানুয়ারি একইভাবে রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ডিএমপি।কিন্তু আওয়ামী লীগ যথারীতি সমাবেশের অনুুমতি পায় । এর প্রতিবাদে এরপর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।