ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যে আমাদের বলছেন, আমরা সচিবদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা দিচ্ছি। আমরা তাদের সঙ্গে তুলনা দেব কী? আমরা তাদের তৈরি করি, আমরা তাদের পড়াই।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন বটতলায় শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। ফেডারেশনের সভাপতি আরো বলেন, আমরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধি চাই না, আমরা মান-মর্যাদা চাই।
অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল কাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের মর্যাদার আন্দোলনের প্রথম দিনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, সচিবদের মর্যাদা চাইলে বিসিএস দিয়ে সচিব হয়ে গেলেই পারেন। তবে এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বক্তব্য ভিন্ন। তারা বলেছেন, আমরা সচিব হতে যাব কেন, আমরা সচিব বানাই। একইসঙ্গে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
গত বছরের মাঝামাঝিতে অষ্টম বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কর্মসূচিতে নিজেদের মর্যাদাহানি ও সুবিধা কমে যাওয়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অষ্টম বেতন কাঠামোয় অসঙ্গতি দূর করতে বেধে দেয়া সময় শেষ হওয়ায় সোমবার থেকে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।
শিক্ষকদের কঠোর কর্মসূচির কারণে ইতোমধ্যে অচল হয়ে পড়েছে সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
আর এ দিনই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়ে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা শিক্ষক, আপনারা সম্মান নিয়ে থাকুন। সমস্যা হলে আমরা দেখব।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা অনেক ওপরে শিক্ষকদের মর্যাদাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা সচিবদের মর্যাদা চাইলে কিছু বলার নেই। সম্মানটা নিজেদের ওপর নির্ভর করে। সচিবদের মর্যাদা চাইলে বিসিএস দিয়ে সচিব হয়ে গেলেই পারেন।
এদিকে শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল রয়েছে। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে পদমর্যাদা অবনমন ও বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সোমবার থেকে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। কর্মসূচির প্রথম দিনেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্থবিরতা নেমে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল বা কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হলেও বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভাগীয় অফিস খোলা হলেও ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর অনেক কক্ষই তালাবদ্ধ ছিল। কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনেও একই চিত্র বিরাজ করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে।