ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হাইকোর্ট বিভাগের বিদায়ী জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শরিফউদ্দিন চাকলাদার বলেছেন, বিচার ব্যাবস্থার পূর্ব শর্ত গণতন্ত্র। গণতন্ত্র সুসংহত না হলে স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থার কথা চিন্তা না করাই ভালো।
তিনি বলেন, তৃতীয় বিশ্বে গণতন্ত্র ক্ষমতায় যাওয়ায় এক ধরণের অস্ত্র। ক্ষমতায় গেলে যাহা বাহান্নো তাহা তেপ্পান্ন।
মঙ্গলবার সাড়ে তেরো বছরের বিচারিক দায়িত্ব পালন শেষে শেষ কর্মদিবসে সুপ্রিমকোর্টের এনেক্স ভবনের ২৩ নং বিচারকক্ষে ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সংবর্ধনার জবাবে বিচfরপতি চাকলাদার এ সব কথা বলেন।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রের সংজ্ঞার উল্লেখ করে বিচারপতি চাকলাদার বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে, জনগনের জন্য, জনগনের দ্বারা, জনগনের সরকার। কিন্তু এখন আমাদের দেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হচ্ছে সরকার জনবিচ্ছিন্ন, জনগনের ভোট কিনে, সরকার জনগন থেকে দূরে। স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, একাত্তর টিভির টকশোতে যেসব কথা বেঞ্চ এবং বারকে নিয়ে বলা হচ্ছে সে গুলো উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে।
টকশোর প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের সম্মান থাকলেও বিচারকদের সম্মান বলতে কিছু থাকছে না।
বিগত সেনা সমর্থিত ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকে জংলি শাসন (ব্রুট ল) হিসেবে অভিহিত করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি শরীফ উদ্দিন চাকলাদার বলেন, ওই সময় আমার ওপর ফৌজদারি বেঞ্চের দায়িত্ব পড়েছিল। যেদিক দিয়ে জামিন দেই না কেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের জামিন আবেদন স্থগিত করে দিয়েছিল। ওই সময় যদি আপিল বিভাগের দিকে তাকিয়ে থাকতাম তবে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিচরণ করতে পারতেন না। মুচলেকা দিয়ে কালো আইনের তাবেদার হয়ে বাঁচতে হতো। তাই একজন বিচারককে বুঝতে হবে কোনটা আইনের শাসন আর কোনটা শাসনের আইন।
বিদায় অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা বিচারপতি চাকলাদারকে এখান থেকে বড় পরিসর আপিল বিভাগ থেকে বিদায় দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। আপিল বিভাগে চারজন বিচারপতির পদ খালি থাকা সত্বেও রহস্যজনক কারণে জেষ্ঠ অভিজ্ঞ বিচারপতিদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারপতি চাকলাদার দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করেছেন। সেখানে অনেক বিচারপতি দুই থেকে তিন বছর রায় ঝুলিয়ে রেখেছেন সেখানে বিচারপতি চাকলাদার রায় দিয়ে সাথে সাথে দ্রুত সময়ের মধে রায় ঘোষণা করেছেন, যাতে করে কেউ তার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হলে আপিল করতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রবীন আইনবীদ ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ.জে মোহাম্মাদ আলী, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলসহ দুই শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।