ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা সংবিধান এবং আইন পরিপন্থী উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
বুধবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি-কে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আপিল বিভাগের অন্যতম প্রভাবশালী সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ‘প্রধানবিচারপতির এ ধরনের মন্তব্যের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। খালেদা জিয়া এতদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায় অবৈধ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার কথাকে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সমর্থন দিয়ে সিল মেরে দিলেন। এতে দেশে রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পর কোনো রায় প্রদান করেন না। বরং বিচারপতি থাকা অবস্থায় দেওয়া রায় লেখা বাকি থাকলে তা শেষ করেন। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, এমনকি ইংল্যান্ডেও এর প্রচলন রয়েছে। দীর্ঘদিনের এ প্রথা বাংলাদেশে আইনে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান প্রধান বিচারপতির এ কথা মানলে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল ঐতিহাসিক মাসদার হোসেনের রায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রায়, পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়সহ শ’ শ’ রায় অবৈধ হয়ে যাবে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীরাও সুযোগ পেয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বাণী দেন। এটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।’
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে গতকাল বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান পরিপন্থি বলে যে রায় দিয়েছিলেন তার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, এটি অবৈধ। কারণ বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের রায় অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর স্বাক্ষর করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার উক্ত অবৈধ রায়ের সুযোগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দ্বারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেছে।’