ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত ৮বছর যাবৎ যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। এই বছর গুলোতে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের শত চেষ্টার পরও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ গোর একটিতেও তাকে অভিযুক্ত করা সম্ভব হয় নি। বরং গেল বছর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় নির্দোষও প্রমানিত হন তিনি।
এমতাবস্থায় বিএনপির ২য় শীর্ষ এই নেতা দলের এবং স্বার্থে নতুন ভাবনা ভাবছেন মনে হচ্ছে। রাজনীতিতে টিকে থাকতেই কৌশল পাল্টেছেন তারেক রহমান। এখন আর স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবনকে আর সহজ ভাবে নিতে পারছেন না দেশনায়ক।
তাই ঝুঁকি থাকলেও তিনি দেশে ফিরে ধরতে চাইছেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের হাল । দেশে এসেই আইনী ও রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি।
এজন্য প্রয়োজনে জেলে যেতেও প্রস্তুত আছেন বিএনপির এই সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান । জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ বেশ কয়েকটি মানহানি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে তারেকের নামে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবিরে তাকে বিদেশ থেকে দেশে আনার জোর দাবিও উঠেছে। তাই দেশে ফিরলে বা ফিরিয়ে আনা হলে তার আপাতঃ কারাবাস একপ্রকার নির্ধারিতই বলা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে তাকে দেশে দেখা যাবে না বলেই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিলো।
কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই অবস্থান থেকে এখন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন তারেক। প্রবাস জীবন ছেড়ে তাই দেশের আলো হাওয়ায় ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয়া ভূমিকা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।
দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল নির্বাচনকেই দেশে ফেরার প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন তারেক রহমান। আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর কমিটি গঠন করে সেই কমিটিতে ভর করেই দেশে ফিরবেন তিনি। এজন্য এরইমধ্যে ছাত্রদলে ৭৩৬ সদস্যের বিশাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর সব অঙ্গ ও সহযোগী দল, এমনকি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিও এমন বিশাল কলেবরেই হবে। সব কমিটিতেই তারেক রহমানের প্রতি অনুগতদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক দলীয় সূত্র।
সূত্রমতে, আসন্ন কাউন্সিলে গঠিত শক্তিশালী কমিটি সারাদেশে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলবে। সেই আন্দোলনে বিভিন্নভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেওয়া হবে দুর্বার রূপ। আর ওই দুর্বার আন্দোলনেরই একটা পর্যায়ে দেশে ফিরবেন বিএনপির তরুণ প্রজন্মের আইকন হয়ে ওঠা তারেক রহমান।
এরইমধ্যে লন্ডনে তার ঘনিষ্ঠ লোকজনের কাছে দেশে ফেরার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভবিষ্যত কর্ণধার তারেক। এতোদিন গ্রেফতার এড়াতে দেশের বাইরে থাকলেও এখন তিনি বলছেন, রাজনীতি করি। জেল তো খাটতেই হবে।
তার বক্তব্যের স্বপক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জেলখাটা রাজনীতিকদের গল্প উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন তারেক। আর তাকে অভয় দিয়ে তরুণ নেতৃত্ব বলছে, ক্ষমতাসীনরা যদি আমাদের নেতাকে গ্রেফতার করে জেলে দেয়, তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাকে বের করে আনবেই আনবো।
বেশ ক’জন তরুণ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার খবরে দারুণ উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন তারা। এদের অনেকেই জিয়াউর রহমানকে স্বচোক্ষে দেখেননি। তারেক রহমানের ভেতর তাই জিয়ারই ছায়া দেখেন তারা।
তাদের কাছে তারেক মানেই জিয়াউর রহমান। যদিও সিনিয়র নেতারা অনেকেই নাখোশ তারেকের ওপর। তাকে নিয়ে নানা অপপ্রচারও চালাচ্ছেন তারা। তারেক বিরোধী মনোভাব উস্কে দিতে পেছন থেকে নাড়ছেন কলকাঠি। জিয়াউর রহমান যেভাবে মানুষকে ভালোবাসতেন, অপরকে শ্রদ্ধা করতেন, ভালো কাজের মর্যাদা দিতেন সেই উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী তারেকের মধ্যে নেই বলেই মনে করেন তারা।
তাই সিনিয়রদের অনেকেই চাইছেন না তারেক দেশে ফিরুক। এমনকি তারেক দেশে ফিরলে কেউ কেউ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কথাও ভাবছেন। এ নিয়ে তারেকের ‘বেয়াদবি’র শিকার সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা নেহায়েতই কম চালাচ্ছেন না। কিন্তু পরিস্থিতি যে তাদের হাতে নেই তাও বেশ বুঝতে পারছেন তারা। তারা জানেন, বয়সের পাঁকে পড়ে একদিন সবাইকে মাঠ ছেড়ে দিতে হয়। শূন্যস্থানে আসে নতুন নেতৃত্ব। সিনিয়রদের অনেকেরই আসন্ন কাউন্সিলে পড়া অনেকটা নিশ্চিতই হয়েই আছে।
তরুণদের মধ্যে তাদের নিয়ে সমালোচনাও চলছে। তবে এখনই এসব নেতার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন তরুণরা। ঘন ঘন লন্ডন যান এমন একজন তরুণ নেতাও বিষয়টি নিয়ে বেশ তৎপর। আর তরুণ নেতারা মনে করছেন, কার্যকর আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটাতে হলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বিপ্লব ছাড়া গতি নেই। এজন্য প্রয়োজন অল আউট নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন।
এর আগে ১৯৯১ সালে যেমন ছাত্রদলের ঘাড়ে ভর করে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েছিলো তারই পুনরাবৃত্তির সুযোগ আসছে সামনে। তবে এ যাত্রায় আর বয়সের ভারে ন্যূব্জদের স্থান হবে না কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তারেক রহমানের সঙ্গে বদলে যাওয়া বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন এখন যাদের তরুণ ভাবা হচ্ছে তাদের চেয়েও তরুণরা। এরাই হবেন বিএনপির নতুন চমক।