ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে বেড়ে চলা যৌন হয়রানির অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
এতে গত বছর ২১ দেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে ৬৯টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন অভিযুক্ত সেনাদের কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, অভিযোগের এই ঢেউ মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়ে কাজ করছে।
শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বান কি মুন প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত দেশগুলোর নাম প্রকাশ করলেন। এসব দেশের অভিযুক্ত সেনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চাপ সৃষ্টি করতেই তাদের নাম প্রকাশ করা হলো। এর আগেও শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নারী ও শিশু নিপীড়নের অভিযোগ জাতিসংঘকে বিব্রত করলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুব কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে পারেনি।
২০১৩ সালে শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে ৬৬টি অভিযোগ ছিল। ২০১৪ সালে তা কমে ৫২ হয়েছিল, তবে ২০১৫ সালে অভিযোগের সংখ্যা আবার বেড়েছে। ওই বছর মোট ৬৯টি অভিযোগ উঠেছে শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ৬৯টি যৌন হয়রানির ঘটনার মধ্যে ২২টি ঘটেছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে। আর ১৬টি ঘটেছে কঙ্গোতে। ২১টি দেশের সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান শান্তিরক্ষী প্রেরনকারী দেশ বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভাবে এসব গর্হিত অভিযোগের বাইরে রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে। এ দেশের শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মরক্কো আর দক্ষিণ আফ্রিকার শান্তিরক্ষীরা। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি করে অভিযোগ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুন, কঙ্গো, তানজানিয়া, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্ডি, গ্যাবন, নাইজার, নাইজেরিয়া ও টোগোর শান্তিরক্ষীরাই বেশি যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িয়েছেন। রুয়ান্ডা, ঘানা, মাদাগাস্কার আর সেনেগালের পুলিশের বিরুদ্ধেও আছে এমন অভিযোগ। এ ছাড়া কানাডা, জার্মানি, মলদোভা ও স্লোভাকিয়ার কয়েকজন শান্তিরক্ষীও সংকটাপন্ন দেশে শান্তি ফেরানোর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন।
ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, এসব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নজরে পড়ার মতো ব্যবস্থা নেয়নি জাতিসংঘ। ২০১৫ সালে একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি মামলা হয়নি। শুধু হাইতিতে কানাডার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ৯ দিনের জন্য বরখাস্ত করা হয়। কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য অবশ্য শান্তিরক্ষীদের দেশগুলোকেই দায়ী মনে করছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, শান্তি মিশনে কর্মরত শান্তিরক্ষীরা কোনো অন্যায় করলে তাদের দেশকেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।