ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এবারও স্বাধীনতা দিবস পদক না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উপর বেশ চটেছেন প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ।
২০১৬ সালের স্বাধীনতা পদকের ১৪ ব্যক্তির তালিকায় তিনি নেই। আর তাতেই বেশ ক্ষেপেছেন এই কবি। নিজের ফেসবুক ওয়ালে ক্ষোভের প্রকাশও করেছেন।
‘আমাকে স্বাধীনতা পদক দেননি কেন?’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন নির্মলেন্দু গুণ।
সেখানে তিনি লিখেছেন: ‘বাংলাদেশের প্রথম সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে একুশে পদক প্রবর্তন করেন। বঙ্গভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রথমবারের মতো একুশে পদক প্রদান করা হয়। পরে কবি জসীমউদদীন ও বেগম সুফিয়া কামাল একুশে পদকে ভূষিত হন।
অজানা কারণে আমি ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলাম। কিন্তু তৎকালীন ক্যাবিনেট সচিব শফিউল আজম একুশে পদকের মানপত্রটি ইংরেজিতে পাঠ করার প্রতিবাদ জানালে আমাকে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাই পুরো অনুষ্ঠানটি আমার দেখার সুযোগ হয়নি, যদিও আমার নিমন্ত্রণ পুরো অনুষ্ঠানের জন্যই বৈধ ছিল।
সম্ভবত পরের বছর (১৯৭৭) জেনারেল জিয়া একুশে পদকের পাশাপাশি ‘স্বাধীনতা পদক’ চালু করেন। জিয়ার সবই খারাপ বিবেচনায় জেনারেল জিয়ার বাকি সবকিছু পরিত্যাগ করলেও তার প্রবর্তিত একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক প্রদান প্রথাটি শেখ হাসিনা ত্যাগ করেননি।
ফলে এক পর্যায়ে ২০০০ সালে শেখ হাসিনার সরকার আমাকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করে। কিন্তু সেই পদক তিনি নিজ হস্তে আমাকে প্রদান করে যেতে পারেননি। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া হাসিমুখে আমাকে ওই পদক প্রদান করেন। তারপর ১৫ বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে আট বছর কেটেছে শেখ হাসিনার সরকারের। শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পদকের মুলোটি আমার নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু দিচ্ছেন না। উনার যোগ্য ব্যক্তির তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে আকাশে পৌঁছেছে। কিন্তু সেইখানেও আমার স্থান হচ্ছে না।
আমার একদা সহপাঠিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারব্যর্থতাদৃষ্টে আমি প্রথম কিছুকাল অবাক হয়েছিলাম… এখন খুবই বিরক্ত বোধ করছি। অসম্মানিত বোধ করছি। আমাকে উপেক্ষা করার বা সামান্য ভাবার বা তুচ্ছ জ্ঞান করার সাহস যার হয়, তাকে উপেক্ষা করার শক্তি আমার ভিতরে অনেক আগে থেকেই ছিল, এবং আশা করি এখনো রয়েছে। পারলে আপনার ভুল এখনই সংশোধন করেন।’
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, মৌলভী আচমত আলী খান (মরণোত্তর), স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম, বীর উত্তম, শহীদ শাহ আবদুল মজিদ (মরণোত্তর), শহীদ এম আবদুল আলী (মরণোত্তর), এ কে এম আবদুর রউফ, কে এম শিহাব উদ্দিন ও সৈয়দ হাসান ইমাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৪ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পদক তুলে দেবেন।