ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে কথিত জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ সরিয়ে নেয়ার ঘটনায় মুখ খুললো যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ।তারা বলেছে, হ্যাক কিংবা জালিয়াতি নয় বরং সম্পূর্ণ রীতিনীতি পালন করেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক এ সংরক্ষিত বাংলাদেশের ব্যাংকের হিসাব থেকে তাদের(বাংলাদেশ ব্যাংকের) নির্দেশিত একাউন্ট সমূহে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে তাদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবেই বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে। তারা এই ব্যাপারে কোনো দায় দায়িত্ব নিতেও রাজি হয়নি।
তবে বাংলাদেশকে লোপাট হওয়া অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর শুরুতে নিউইয়র্কের রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতি উচ্চকণ্ঠ হলেও এখন তারা নিজেদের ঘরেই ‘সিঁদ কাটা চোর’ খুঁজতে মনোযোগী হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এই সব তথ্য জানা গেছে। এই ব্যাপারে নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড্রিয়া প্রিস্ট দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ কে বলেছেন, "প্রশ্নসাপেক্ষ লেনদেন নির্দেশনাটি প্রচলিত অথেন্টিকেশন (প্রমাণীকরণ) প্রটোকল বা রীতি অনুসারে সুইফট (ঝডওঋঞ) মেসেজিং পদ্ধতি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অথেন্টিকেশন করা হয়েছিল। ’ অর্থ্যাৎ, লেনদেনের নির্দেশনাটি ঢাকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গিয়েছে এবং প্রচলিত প্রমানীকরন প্রক্রিয়ায় সেই নির্দেশনাটি যথাযথ হওয়ায় নিউইয়র্কের রিজার্ভ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে অর্থটি স্থানান্তরিত হয়েছে। ফেড এর একাউন্ট হ্যাক হওয়ার প্রশ্নে তাদের আগের দেওয়া বক্তব্য পূণরুল্লেখ করে এনড্রিয়া বলেন, প্রশ্নসাপেক্ষ লেনদেনের ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম হ্যাক হওয়ার চেষ্টা হয়েছে আজ পর্যন্ত তার কোনো প্রমান নেই। ফেড সিস্টেম যে হ্যাক হয়েছে তারও কোনো প্রমান নাই।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিলো যে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের একাউন্ট হ্যাক হয়ে অর্থ লোপাট হয়েছে। পরে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষনা দেন।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক সূত্রে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মনোভাব এবং তৎপরতা জানার চেষ্টা করা হয়।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, অর্থ লোপাটের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরপরই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক তাদের ভূমিকা এবং অবস্থান বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়। লেনদেনটি যেহেতু অনুমোদিত এবং বিধিমোতাবেক সম্পন্ন হয়েছে- সেহেতু ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কোনো দায় দায়িত্ব নেই বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংককে তদন্ত এবং অর্থ উদ্ধারে ফেড এর ম্যান্ডেট এর আওতায় যতোটুকু সম্ভব সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এরি মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেড এর একাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে প্রচার করে । পরে অর্থমন্ত্রী মামলার ঘোষনা দেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভিযোগের পরি প্রেক্ষিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কোনো ধরনের তদন্ত করবে কী না জানতে চাওয়া হলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এর মুখপাত্র এন্ড্রিয়া প্রিস্ট জানান. ঘটনার শুরুর দিন থেকেই তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছে। এবং এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত ফেড এর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে মন্তব্য করেছেন। এই ব্যাপারে ফেড এর প্রতিক্রিয়াও জানতে চাওয়া হয়েছিলো। তবে এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড্রিয়া প্রিস্ট তাঁর আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের সাথে বাংলাদেশের ইংরেজী পত্রিকা ‘ঢাকা ট্রিবিউনের’ একটি খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। তিনি বলেন, আমি দু:খিত । আমাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের বাইরে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি খবরের প্রতি তোমার দৃষ্টি আকর্ষন করবো।’
এন্ড্রিয়া প্রিস্ট তাঁর ইমেইলে ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবরের লিংক সংযুক্ত করলেও তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের নীচে ঢাকা ট্রিবিউনের খবরের একটি প্যারা সংযুক্ত করে দেন।
তাতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তাদের নিজেদের সিস্টেমের মধ্যে কোনো ধরনের ফাঁকফোকর আছে কী না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাটের সুযোগ করে দিয়েছে- তা তদন্ত করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ টাকা স্থানান্তরের নির্দেশনাটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই গিয়েছে। সুইফট কোড এ যাদের প্রবেশাধিকার আছে তাদের সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়েছে।
সাপ্তাহিক 'নতুন দিনের' সৌজন্যে