ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারত থেকে ফিরেই সরাসরি গণভবনে গিয়ে সেখানে টানা আড়াই ঘন্টা অপেক্ষা করেও প্রধানমন্ত্রীর দেখা পেলেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি গণভবন ত্যাগ করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক’ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আটশ কোটি টাকা চুরির ঘটনা মাসব্যাপী গোপন রাখা, দেশজুড়ে সমালোচনা, অর্থমন্ত্রীসহ সিনিয়র মন্ত্রীদের অসন্তোষের মুখে ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বিদায় নিতে হচ্ছে এই গভর্নরকে।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে এই অভুতপূর্ব অর্থ লোপাটের ঘটনায় শুধু গভর্নরকে বলীর পাঠা বানানো বোধহয় ঠিক হচ্ছেনা, তার সাথে সাথে অর্থমন্ত্রী মাল মুহিত সহ বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন কেহই দায় এড়াতে পারেন না কোনভাবেই।
সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর ডাকা জরুরি সংবাদ সম্মেলনে গভর্নরের পদত্যাগের বিষয়ে ঘোষনা আসতে পারে। এর আগে রাতের মধ্যে বা সকালে পদত্যাগ না করলে গভর্নরকে অপসারণ করা হতে পারে বলেও জানা গেছে।
এতোবড় কেলেঙ্কারি ও বিতর্কের মধ্যেই তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লী গিয়েছিলেন।
সোমবার বিকেলে দেশে ফিরেই তিনি সচিবালয়ে যাবেন এ জন্য অর্থমন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তিনি সেখানে যাননি। বাংলাদেশ ব্যাংকেও নয়।
সন্ধ্যায় তিনি যান গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রীও তার সঙ্গে দেখা করলেন না। ফলে এখন পদত্যাগ সময়ের ব্যাপারমাত্র। বুধবার রিজার্ভ ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনা জানতে পারেন গভর্নর। সেদিন ব্যাংকের কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে জরুরি বৈঠকও করেন। কিন্তু কাউকে কিছুিই অবহিত করেননি।
বৃহস্পতিবার খবরটি প্রচার করে ফিলিপাইনের একটি পত্রিকা। সঙ্গে সঙ্গে সে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে দেশময়। কিন্তু এ ব্যাপারে কাউকে কিছু না বলেই দিল্লি যান গভর্নর। ফলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের উদ্রেগ হয় সবার মধ্যে। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রণালয়কে এ খবর না জানানোয় ভীষন ক্ষুব্ধ হন অর্থমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে গভর্নরের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী নালিশ করেন। এর আগে এতোবড় ঘটনার মধ্যে তাদেরকে অবহিত না করে দিল্লি যাওয়ায় প্রধামনন্ত্রীও নাখোশ হন। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রীসহ সিনিয়র মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখানেই ড. আতিউরের বিদায় নিশ্চিত হয়।
সর্বশেষ সোমবার দিল্লি থেকে ফিরে কারও সঙ্গে দেখা না করেই রাতে সোজা গণভবনের যান গভর্নর। কিন্তু সেখান থেকেও নিরাস হয়ে ফিরে আসেন। সূত্রগুলো বলছে, মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আতিউরের বিদায় ও নতুন গভর্নর নিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারেন।