জাহিদ এফ সরদার সাদীঃ ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ছিলেন দলের আরো বহু যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের একজন (বর্তমানে অবশ্য সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন)। সরকারি কোনো পদে কখনো ছিলেন না তারেক রহমান।
তবে বাংলাদেশের স্বাভাবিক রাজনৈতিক চর্চা অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের সন্তান হওয়ার সুবাধে অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবও ছিল নিশ্চয়ই ছোট খাটো অনেক মন্ত্রীর চেয়ে বেশি।
কিন্তু সরকারি কোনো পদে না থাকায় সেই সরকারের সময়ে সংগঠিত বায়বীয় বিভিন্ন অপকর্মের জন্য আইনগত এবং যুক্তিগতভাবে তারেক রহমানের কোনো দায় থাকে না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কিছু তদবির ছাড়া অন্য কোনো বেআইনি বা অনিয়মের কাজে তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এখন পর্যন্ত কেউ আনেওনি, এবং যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো প্রমাণও করতে পারেনি। বরং নানা অভিযোগে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত রায় হওয়া একমাত্র মামলাটিতে তারেক রহমান বেকসুর খালাস পেয়েছেন আদালত থেকে।
কোনো সরকারি পদে না থাকার পরও বায়বীয় বিভিন্ন অভিযোগে ভিত্তিতে ওয়ান-ইলেভেনের সময় এবং এরপরের কয়েক বছর আওয়ামীপন্থী এবং ভারতের দালাল বলে খ্যাতি অর্জন করা বাংলাদেশের মিডিয়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে তাকে “দুর্নীতির রাজপুত্র” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
অন্যদিকে, এখন চলছে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারি শাসন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগে তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহীর কাছে চিঠি লেখেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর দেশে বিদেশে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। তাকে হত্যা চেষ্টাও করা হয়। অর্ধশতাধিক মামলা দায়ের করা হয় রিপোর্টার ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
এক পর্যায়ে সজীব ওয়াজেদকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীর মর্যাদায় নিজের তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাৎসরিক ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতন পেয়ে আসছিলেন হাসিনাপুত্র। সরকার এবং আওয়ামী মিডিয়ায় প্রচার করা হয়, সজীব ওয়াজেদ দেশকে ‘ডিজিটাল’ বানানোর স্বপ্ন দেখছেন।
গত কয়েক বছর ধরে জয়ের টালমাটাল ডিজিটালিকরণ চলার পর দেশের ইতিহাসে প্রথম ‘ডিজিটাল ব্যাংক ডাকাতি’র ঘটনা ঘটে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তাও আবার রাষ্ট্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে ! যদিও তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে এক মাস গোপন রাখার পর বিদেশী পত্রিকায় মার্চ মাসে এসে প্রকাশিত হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে দেশের যাবতীয় না হোক, অন্তত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত বিষয়াদির সাফল্যের সাথে ব্যর্থতার দায়ও সজীব ওয়াজেদের। কারণ তিনি এই বিভাগের সমস্যাদি সমাধানে জনগনের টাকায় বিশাল অংকের বেতনভুক্ত দায়িত্বশীল। একটি মন্ত্রণালয়ে কোনো অঘটন ঘটলে যেমন তার দায়িত্ব মন্ত্রীর ওপর বর্তায়, ঠিক ক তেমনই সেই বিষয়ক উপদেষ্টার উপরও বর্তায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ হাজার কোটি টাকার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ডাকাতি হওয়ার ঘটনার দায়ও তাই তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে জয়ের উপর বর্তায়।
কিন্তু কোথায়? এখন তো আওয়ামী লীগের দালাল মিডিয়াগুলোতে তো জয়ের এই সরাসরি দায়কে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে কোনো প্রতিবেদন নেই। কোনো সরকারি দায়িত্ব পালন না করেও তারকে রহমানকে ‘দুর্নীতির রাজপুত্র’ বানিয়ে দিলেও সরকারি দায়িত্ব পালনকারী উপদেষ্টার নিজের খাতে এত বড় ডাকাতির দায়ে কেন তাকে ‘ডাকাতির বরপুত্র’ বলে প্রচারণা হচ্ছে না কেন? এখন তো ৮০০ কোটি টাকার গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কোনো গল্প নয়, বাস্তবতা।
জাহিদ এফ সরদার সাদীঃ বিএনপি চেয়ারপারসনের বৈদেশিক উপদেষ্টা ও বিএনপির বিশেষ দূত।