ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের পর এবার লুট হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের দুই কোটি টাকা।
রাজিব হাসান নামের ব্যাংকের এক কর্মকর্তা লুট করেছেন এ অর্থ। তার বাসা থেকে বস্তাভর্তি ৭৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আর অফিসে তার ড্রয়ারে পাওয়া গেছে ১৫ হাজার টাকা। বাকি এক কোটি ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার কোনো হদিস মিলছে না।
রাজিব হাসান জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার এই কেলেঙ্কারির খবর জানাজানি হলে গতকাল পুরো ব্যাংক পাড়ায় তৈরি হয় চাঞ্চল্য।
কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। চাপা ক্ষোভও লক্ষ করা গেছে। অর্থ লোপাটের খবরে বেশ কিছু গ্রাহকও ছুটে এসেছেন ব্যাংকে। গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গ্রাহক জানিয়েছেন, আমাদের টাকা আছে কি না দেখতে এসেছি।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়টি কয়েক দিন আগে জানা গেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের রাজিব হাসানের প্রতি সন্দেহ ছিল। সে কারণে তার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। সব শেষে প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পর তার ধানমন্ডির বাসায় হানা দেয়া হয়।
সেখান থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৭৮ লাখ টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে আটক করে নিয়ে আসেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজিব হাসান ব্যাংকের লোকাল অফিসের তৃতীয় তলায় আটক ছিলেন।
এ বিষয়ে তখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়নি। তবে ব্যাংকে তদন্ত চলছে বলে একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে। সরজমিন তথ্য অনুসন্ধানের সময় এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হয় রাজিব স্যার কোথায়, তিনি তো আসনে নেই?
জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, কিসের রাজিব স্যার? রাজিব চোর। রাজিব চোরকে ওপরে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজিব ২ কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। তবে হজম করতে পারেনি। সকালে ৭৮ লাখ টাকাসহ তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে ওই ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রাজিব হাসানের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের চর ভদ্রাসনে। তিনি ২০১০ সালে জনতা ব্যাংকে যোগ দেন। অপর একটি সূত্রের দাবি, তিনি ২০১১ সালে ব্যাংকে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (এফডিআর) বিভাগে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।
একই বিভাগে কর্মরত রয়েছেন কামরুজ্জামান নামের অপর এক কর্মকর্তা। এ বিভাগের ইনচার্জ আশরাফ। সহকারী মহাব্যবস্থাপক রয়েছেন আবদুল গফুর। তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, চুরি হওয়া ২ কোটি টাকা এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ ব্যাংকের আয়-ব্যয়ের টাকা।
তবে অপর একটি সূত্রের দাবি, ওই টাকার কিছু আয়-ব্যয়ের আবার কিছু গ্রাহকের। সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জনতা ব্যাংক লোকাল অফিসের মহাব্যবস্থাপক ড. মো. ফরজ আলী আমাদের জানান, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে। টাকার পরিমাণ তিনি জানাতে পারেননি। শুধু বলেছেন, এগুলো ব্যাংকের টাকা। কোনো গ্রাহকের নয়।
কখন জানতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোববার জানার পর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু ভাউচারের গরমিল থেকে এ অনিয়মের সূত্রপাত। এখন তদন্ত শেষে বাকিটা বলা যাবে।
তিনি বলেন, সব টাকা উদ্ধার করা গেলে জনতা ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে যাবে। কারণ এসব টাকা মুনাফায় যোগ হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
আংশিক টাকা উদ্ধারের দাবি করা হলেও বেশির ভাগ টাকা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর আগে এটিএম জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংক থেকে প্রথমে ২১ লাখ, পরে ৩৭ কোটি টাকা লোপাট করে হ্যাকাররা।