ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ‘আমার মতে সেই সব মানুষের সাথে মিশা উচিৎ যারা সব সময় তোমার ভালো চায়’ ১৬ মার্চ রাত ২টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুকে এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বর্বরতার শিকার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু।
এরপর তার আরেকটি স্ট্যাটাস ছিলো ট্রাভেলিং নিয়ে। সেখানে বিস্তারিত কিছু না লিখলেও উল্লেখ্য ছিলো সে সিলেট যাচ্ছে। তার নিচেই ছোট্ট করে লিখেছিলেন ‘1st time..so happy’।
এই স্ট্যাটাসটি তিনি দিয়েছিলেন ১৮ মার্চ রাত ১২টা ৪৩ মিনিটে। সর্বশেষ তথা যেদিন খুন হন তনু তার কয়েক ঘন্টা আগে বেশ কয়েকটি ছবি তিনি তার ফেসবুকে আপলোড করেন। ছবিগুলো ছিলো সিলেটের চা বাগান ও পাহাড় এবং হাওড়ের। এই ছবিগুলো তিনি আপলোড করেন ২০ মার্চ বিকেল ৩টা ৩৪মিনিটে।
এরপর তিনি ৪টার দিকে সেনানিবাসের বাসা থেকে বের হন টিউশনি করার উদ্দেশ্যে। বাসা থেকে টিউশনি করা বাসার দূরত্ব ২শ’ গজ। অন্যদিন ২টি টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরতেন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে। কিন্তু সেদিন রাত সোয়া ১০টায়ও তিনি বাসায় ফেরেননি।
এরপর রাত সাড়ে ১০টায় বাসা থেকে ১০০ গজ দূরের জঙ্গলে তনুর লাশ পান তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন।
তনুর বাবা জানিয়েছেন, ‘২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে কাজ সেরে রাত সোয়া ১০টায় বাসায় ফিরি। তনুর মা বলল, তনু বাসায় ফেরেনি। সে কখনও ফিরতে এতো দেরি করে না। টর্চলাইট নিয়ে মেয়ের খোঁজে বের হই। বাসার কাছেই একটি কালভার্ট আছে। কালভার্টের পাশে দেখি তনুর একটি জুতা পড়ে আছে। কয়েক হাত দূরে ওর মোবাইল ফোনটা পড়ে থাকতে দেখি।
আর একটু পরে উঁচু জায়গায় জঙ্গলের মধ্যে তনুকে পেলাম। মাথার নিচটা থেঁতলে আছে। ওর মুখে রক্ত আর আঁচড়ের দাগ। কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে ওকে সিএমএইচে (সামরিক হাসপাতাল) নিয়ে যাই। তনু দুইটি টিউশনি করত। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে বাসা থেকে বের হতো’।
এদিকে সর্বশেষ এই ছবিগুলো আপলোড করার কয়েক ঘন্টা পরই নৃশংসতার শিকার হন সোহাগী জাহান তনু।
যে ঘটনায় এখন উত্তাল পুরো বাংলাদেশ। বিচার দাবীতে রোডমার্চ সহ বিভিন্ন আন্দোলন চলছে দেশজুড়ে। জানানো হচ্ছে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ।
অপরদিকে তনু হত্যাকাণ্ডের ৭দিন পেরিয়ে গেলেও তনু হত্যার সাথে সম্পৃক্ত কাউকে চিহ্ণিতকরণসহ গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।