ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিপুল উৎসহ এবং উদ্দীপনার সাথে গত ১৯ শে মার্চ হয়ে গেল বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল।কাউন্সিলে দলের চেয়ারপারসন ,সিনিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান ,মহাসচিব ইত্যাদি অতীব গুরুত্বপুর্ন পদের ঘোষনা আসার রেওয়াজ থাকলেও এক্ষেত্রে তা হয়নি।শুধু চেয়ারপারসন এবং সিনিয়ার ভাইসচেয়ারম্যান পদের ঘোষনা এলেও দলের মহাসচিব,স্থায়ী কমিটি সহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঘোষনা এখনও আসেনি।
ফলে দলের মহাসচিব পদটি নিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং ব্যপক কৌতুহল রয়েছে। মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চূড়ান্ত তালিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি কি মহাসচিব থাকছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নতুন করে মহাসচিব পদে আলোচিত হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী বিএনপির সভাপতি.সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম।
মির্জা ফখরুল মহাসচিব হয়ে কী করবেন বা কাজ করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্ন এখন বিএনপির পাশাপাশি দলটির শুভাকাঙ্খী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও উঠতে শুরু করেছে।
এ প্রশ্ন ওঠার প্রথম কারণ, ফখরুল দলের মধ্যে নিজের অনুগত নেতাদের বলয় সৃষ্টি করতে পারেননি। দ্বিতীয় কারণ, দফতর থেকে শুরু করে গুলশান কার্যালয় পর্যন্ত তার বিরোধী বলে পরিচিত নেতারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।
তৃতীয় কারণ, লন্ডনে বসবাসরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভূমিকাও ততো অনুকূলে নয় ফখরুলের জন্য। চার নম্বর কারণ, চেয়ারপারসনকে বিভ্রান্ত করে সাড়ে তিন বছরের বেশি ফখরুলকে যারা ‘ভারপ্রাপ্ত’ রাখতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের শক্তি কম নয়। আর সবশেষ কারণ হচ্ছে, মহাসচিবের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব পদে যিনি আসছেন বলে মনে করা হচ্ছে, তিনিও ফখরুলের খুব একটা পক্ষে নন।
মোহম্মদ শাহজাহান ও রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, এই দু’জনের মধ্য থেকে একজনকে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে শাহজাহান হলে ফখরুলের জন্য বিপদ কিছুটা কম। কিন্তু রিজভী সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব হলে সারাক্ষণই তিনি ফখরুলকে টেনশনে রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী মির্জা ফখরুল এবং রিজভী আহমেদের মধ্যে ‘খারাপ সম্পর্কের’ বিষয়টি বিএনপিতে ওপেন সিক্রেট।
জানা যায় ,ফখরুলের বক্তৃতা যেন কোনওভাইে মিডিয়াতে গুরুত্ব না পায়। এজন্য সপ্তাহে অন্তত ছয়দিন বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিং করছেন রিজভী আহমেদ। এ নিয়ে দলের সর্বস্তরে নানা আলোচনা-সমালোচনা আছে। খালেদা জিয়া নিজেও বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত রিজভীকে এ বিষয়ে নিষেধ করা হয়নি।
নানা সমীকরণে সাড়ে তিন বছরের বেশি ফখরুল কাটিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে তিনি নিজের সমর্থক নেতাদের পদায়ন করতে পারেননি। বরং দলে তৎপর এবং নিয়ন্ত্রণ লাভে মরিয়া অংশের মধ্যে গয়েশ্বর ও রিজভী আহমেদ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্মমহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ অনেকে সারাক্ষণই ফখরুল বিরোধী কাজে তৎপর।
এ কারণে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তাদের সমর্থকরাই বক্তৃতার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনার ত্রুটি খালেদার কাছে তারা আড়াল করতে পারেননি।
এদিকে, লন্ডনে বসবাসরত দেশনায়ক তারেক রহমানের সমর্থনও পুরোপুরি ফখরুলের পক্ষে নয়। কারণ সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজ বা পদ পদবির ব্যাপারে তারেক সমর্থকদের তদবির মহাসচিব হিসেবে ফখরুল সব সময় রাখতে পারছেন না।
বস্তুত তারেক সমর্থকরা নানাভাবে দলে নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করলেও সব সময় এ হিসাবের সঙ্গে মিলছে না চেয়ারপারসন খালেদার হিসাব বা সিদ্ধান্ত। কিন্তু নতুন কমিটিতে প্রভাব বজায় রাখতে চাইছেন তারাও। সব মিলিয়ে লন্ডনের সঙ্গেও এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে ফখরুলের।
বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে বলে থাকেন, দলটিতে একমাত্র খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান অপরিহার্য। নেতাকর্মীরা এ দুজনের প্রতি তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ করে।
ফলে বিএনপিতে এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা মাত্র দুই জনের। তাই মহাসচিব পদে নাম ঘোষণা যত বিলম্ব হচ্ছে নেতাকর্মীদের মনে তত প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। তাহলে কী ফখরুলের বিরোধীরা সফল হচ্ছে? নাকি ফখরুল নিয়ে কোনো গোপন তথ্য আছে শীর্ষ দুই নেতার কাছে? ফখরুলকে নিয়ে কৌতুহল তৈরি হওয়ার পাশাপাশি মহাসচিব পদে ফখরুলের বিকল্প হিসেবে দলের নীচের সারির নেতারা আমির খসরু চৌধুরীর কথা চিন্তা করেছেন।
বিএনপির এক নেতা জানান, অধিবেশনে কাউন্সিলরা চেয়ারপারসনকে বলেছেন ম্যাডাম বেঈমানদের চিনতে পেছনে তাকাতে হবে না। আপনার আশে পাশে তাকান বেঈমান দেখতে পাবেন।
ম্যাডামও বলেছেন, শুধু কেন্দ্রের দোষ দিলে হবেনা তৃণমুলকেও সজাগ থাকতে হবে। ম্যাডামের আশপাশে অর্থাৎ নীতি নির্ধারণী পর্যায় স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যেই বেঈমান রয়েছে। কিন্তু এসব পদে চট্টগ্রামের যারা রয়েছেন তারা পরিক্ষীত।
তিনি অপর এক নেতা বলেন, ‘চট্টগ্রামের নেতারা যারা বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের রয়েছেন তারা খাঁটি সোনার মতো নির্ভেজাল। চট্টগ্রামের নেতারা দলে দাতা হিসেবেও পরিচিত। গ্লোবাল পলিটিক্সে বিএনপিকে শাক্তিশালী হতে হলে চট্টগ্রামকে প্রাধান্য দিতে হবে। চট্টগ্রামে বেশ কয়েকজন জাতীয় নেতা থাকলেও এই মুহূর্তে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মহাসচিব হিসেবে উপযুক্ত।
আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরীকে নিয়ে বলা হচ্ছে, তার সেরকম রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কমিউনিটিভিত্তিক রাজনীতিতে তিনি বেশ এগিয়ে রয়েছেন।’
১৯৯১ সালের সাধারন নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া জনাব আমির খসরু চট্টগামের কাট্টলীর বিশিষ্ট সমাজসেবক রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী জনাব মাহমুদুন্ননবী চৌধুরীর সন্তান।১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসনে বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন।পরে নির্বাচিত বেগম জিয়া ঐ আসনটি তার অনুকূলে ছেড়ে দিলে জনাব খসরু উপনির্বাচনে জয়ী হন ।পরবর্তিতে তিনি একাধিক বার ঐ আসনে নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও বিএনপি সরকারে মন্ত্রীসভায়ও স্থান করে নেন।
জনাব আমির খসরুর পরিছন্ন এবং সৎ ইমেজ বিশেষ করে ১/১১ এর সময়ে তার সাহসী ভূমিকা এবং গত সিকি শতাব্দীর বিএনপির নিবেদিত প্রান কর্মী হিসাবে তার অবদান তাকে বিএনপির মতো একটি বড় দলের মহাসচিব পদের যোগ্যতা দিয়েছে বলে বিএনপির অনেক নেতা কর্মী মনে করেন।
বিশেষ করে ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে তার বেশ প্রভাব এবং সুনাম রয়েছে। দেশ-বিদেশের কূটনৈতিক পাড়ায়তার বেশ যোগাযোগ রয়েছে। গণমাধ্যমে তার বিষয় ভিত্তিক বক্তব্যের চাহিদা রয়েছে। পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশে বিদেশে সমাদৃত। সর্বোপরি বর্তমান বিএনপির সর্বোচ্চ দুজন নেতারও আস্থাভাজন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
কাউন্সিলের পরে মহাসচিব পদে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে তবে বিএনপির সিনিয়র কোন নেতা মহাসচিব কে হচ্ছেন এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চান নি।