ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিশ্বজুড়েই ধর্ম পালন ও ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি ভিন্ন মত ও ভিন্ন ধর্মের মানুষের উপর সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গিদের হামলার মধ্যে সোমবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন-ইউএসসিআইআরএফ।
কমিশনের ২০১৬ সালের এই প্রতিবেদনে ৩২টি দেশ ও অঞ্চলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে; যাতে বলা হয়েছে, আগের বছরের চেয়ে পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন ঘটছে, এমন দেশ ও অঞ্চলগুলোকে নিয়ে কয়েকটি শ্রেণির তালিকা করেছে ইউএসসিআইআরএফ।
অবস্থা গুরুতর না হলেও উদ্বেগের- এমন শ্রেণিতে রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরির সময় ইউএসসিআইআরএফ এর একটি প্রতিনিধি দল গত বছর বাংলাদেশ সফর করে বলেও জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গত বছরজুড়ে লেখক-প্রকাশক ও ব্লগারসহ ধর্মীয় মতাদর্শগত কারণে হত্যার উল্লেখ ছাড়াও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তির সব ধারা বাস্তবায়ন না হওয়াকে উদ্বেগজনক বলা হয়।
পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জমি দখলের মাত্রা বাড়ছে দাবি করে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা, চিন্তার স্বাধীনতা, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে লেখালেখির কারণেই গত বছরে অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
বাংলাদেশের সঙ্গে একই শ্রেণিতে থাকা আরও ৫টি দেশ ও অঞ্চল হল- বাহরাইন, বেলারুশ, হর্ন অব আফ্রিকা (অঞ্চল), কিরগিজস্তান ও পশ্চিম ইউরোপ (অঞ্চল)। বাংলাদেশে যখন হত্যাকাণ্ড গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, একই অবস্থানে থাকা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রে মুসলিম, শিখ ও ইহুদিদের ধর্মীয় পোশাক পরার স্বাধীনতা খর্বের কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই কমিশন।
প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেও এক বছরে পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ্য করে তা থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “যে কোনো বিচারে গত বছরের তুলনায় ধর্মীয় স্বাধীনতা মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।” ইউরোপে মুসলিম ও ইহুদি বিদ্বেষে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন ঘটে- এমন ১৭টি দেশকে তালিকার শীর্ষ শ্রেণিতে রেখেছে ইউএসসিআইআরএফ, যার আটটিকে অন্তর্ভুক্তের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়েছে তারা।
‘সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বেগের দেশসমূহ’ বা সিপিসি শ্রেণিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মিশর, ইরাক, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবেচনায় সিপিসি শ্রেণিতে এসেছে মিয়ানমার, চীন, ইরিত্রিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব, সুদান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনায় হয় সরকার নিজেই জড়িত থাকে অথবা ঘটনাগুলোকে সহ্য করে থাকে বা কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
এর পরের শ্রেণিতে রয়েছে আফগানিস্তান, আজারবাইজান, কিউবা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, লাওস, মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও তুরস্ক। বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশ ও অঞ্চলের অবস্থান ঠিক তার পরের শ্রেণিতে।