DMCA.com Protection Status
title="৭

নিজামীর মৃত্যুদন্ড অগণতান্ত্রিক ও অন্যায়ঃ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান

erdo copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)’র সভাপতি ও তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে দেয়া ফাঁসির রায় প্রসঙ্গে বলেন, “আজ বাংলাদেশে ৭৫ বয়সী একজন মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। যিনি এ পৃথিবীতে কোন ধরণের অপরাধ করে থাকতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না। এভাবে ফাঁসি দেয়ার বিষয়টিকে আমরা অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় বলে মনে করি।”

শুক্রবার ইস্তাম্বুল শহরে জুমার নামাজ পরবর্তী আইয়্যুপ সিটি কর্পোরেশনের একটি সেবা কেন্দ্র ভবন উদ্ভোধনের সময় এক গণসমাবেশে বক্তব্যকালে এরদোগান এসবকথা বলেন।

বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক ইসলামপন্থীদের উপর দমন পীড়ন এবং বিরোধী দলের নেতাদের ফাঁসি প্রদানের দিকে ইঙ্গিত করে মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী এ নেতা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যা ঘটছে তার ব্যাপারে যারা কোন কথা বলছেন না, তারা এই লজ্জাজনক দায়ভার থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। আমরা সব ধরণের সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেয়ার পরও এবং কারো ঘৃনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে ফাঁসি দেয়ার হার ক্রমেই বেড়েই চলছে। এমন রায় প্রদানকারীদের প্রতি আমরা অভিশাপ বর্ষণ করছি। ”

তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোগান এ সময় সিরিয়ায় চলমান গণহত্যার প্রসঙ্গে বলেন “সিরিয়াতে ১২ মিলিয়ন মানুষকে শহীদ করা হয়েছে। ৬ লাখ নিষ্পাপ (শিশু ও মহিলা) কে হত্যা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় কোন মুসলমান নিজেকে এই লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারে না।”

এরদোগান ইউরোপীয় ইউনিয়নে তার্কিশদের জন্য ভিসা ফ্রি প্রবেশের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক বেঁধে দেয়া শর্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “তুরস্কের র্সবত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থনদানকারী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের গৃহীত সঠিক পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার্কিশদের জন্য তাদের ভিসা উঠিয়ে নিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধনীতি পরিবর্তন করতে বলছে।”

এরদোগান ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন শর্তকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাশেই সন্ত্রাসীদের আস্তানা গড়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে তোমাদের এই মানসিকতা কেন পরিবর্তন করছ না? তোমরা সন্ত্রাসীদের জন্য আস্তানা বানাবে, সেখানে তাদের জন্য সুবিধা প্রদান করবে; অথবা এমনটা গণতন্ত্রের নামেই করছ বলবে; আর আমাদের ক্ষেত্রে ভিসা উঠিয়ে নেবার কথা বলবে! (ভিসা উঠিয়ে নিতে শর্ত প্রদান করবে)। আর শর্ত হিসেবে আমাদেরকে প্রতিরোধ নীতি পরিবর্তন করতে বলবে? কিছু মনে করবে না, এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

উল্লেখ্য, বহু বছর ধরে তুরস্কের উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকে’র বিরুদ্ধে তুরস্কের অন্যান্য সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও নির্মূল অভিযান পরিচালনা করছে।

এর জের ধরে এ বছরের ২৯ মার্চ ইউরোপীয় পার্লমেন্টের সামনে এরদোগানের গাড়ী বহরের সামনে এবং ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনেই পিকেকের সমর্থনে কিছু সংখ্যক লোক জড়ো হয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে। এ সময় এরদোগানকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগানও দেয় তারা।

রাষ্ট্রপতি এরদোগান এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে এবং পিকেকে’র বিরুদ্ধে চলমান তুরস্কের প্রতিরোধ নীতির ব্যাপারে নাক না গলাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, “ আমরা আমাদের পথে হাটছি, তোমরা তোমাদের পথে চলো। যাদের সাথে চুক্তি করতে ইচ্ছে হয় তাদের সাথে চুক্তি কর।” তুরস্কের রাজধানী আংকারাসহ বিভিন্ন শহরে প্রায় নিয়মিত বিরতিতে ট্যুরিস্ট স্পট, মেট্রোস্টেশন ও সেনাবাহিনীর উপর আত্মঘাতি বোমা হামলার ঘটনা ঘটেই চলছে। এসব ঘটনায় কখনো পিকেকে,কখনো আইএস এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে,আবার কখনোবা ঘটনার পর নিজেরা দায় স্বীকার করেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

উল্লেখ্য, গত ৪ঠা মে প্রধানমন্ত্রী আহমত দাভতুগলো প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ ও ২২ মে আসন্ন একে পার্টির সর্বোচ্চ সম্মলনে (অলান উস্তু কনগ্রেসী) সভাপতি পদে প্রার্থীতা না করার ঘোষনা দেবার পর এটাই রাষ্ট্রপতি রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের প্রথম পাবলিক বক্তব্য। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!