ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ছাত্র প্রহার এবং ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে কান ধরে উঠবস করানো এবং অপদস্তের পর এবার নারায়নগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বরখাস্ত করা হয়েছে।তবে তার বরখাস্ত আদেশে কারন উল্লেখ করা হয়েছে, বিনা ছুটিতে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকা।
মঙ্গলবার স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ তাকে বরখাস্ত করে বলে জানা গেছে। দশম শ্রেনীর এক ছাত্রকে থাপ্পড় মারায় সৃষ্ঠ ঘটনার পর স্থানীয় সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে উঠবস করানো হয় এবং চরম অপদস্থ করা হয়।
এরপর বিষয়টি মিডিয়ায় এলে শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই সমালোচনা করেন।এছাড়া এই ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে সারা দেশের বহু শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করেছেন এবং সরকার সমর্থক জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমানের বিচার দাবী করেন।
শিক্ষামন্ত্রী সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একজন সম্মানিত শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করবে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানো অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার। আমার মনে হয়, প্যানেল কোড যদি ঠিকমত ঘাটা হয়, তাহলে নিশ্চই পাওয়া যাবে এটা একটা অপরাধ।
আইন মন্ত্রী বলেন, এই অপরাধের জন্য আমার মনে হয় যারা এ ব্যাপারে জড়িত নিশ্চয় তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। তার কারণ আইন কিন্তু নিজের হাতে তুলে নেওয়াটা আমরা কোনোমতেই বরদাশত করবো না। প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ৮ মে স্কুলের এক ছাত্র মারধরের সময় আল্লাহ-রাসুলের নাম মুখে নিলে তিনি ধর্ম নিয়ে কটূ কথা বলেন।
পরে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রের মা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করলে শুক্রবার এ বিষয়ে স্কুলে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকের সময় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিষয়টি এলাকার মসজিদ থেকে মাইকিং করা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়। তারা শিক্ষককে মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানকে খবর দেয়া হয়। তিনি সেখানে গিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। ওই সময় শ্যামল কুমার ভক্ত প্রকাশ্যে কানে ধরে ওঠ-বস করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
সেলিম ওসমান বলছেন, অভিযোগের সত্যতা মেলার পর ওই শিক্ষককে জনরোষ থেকে বাঁচাতে এভাবে মাফ চাওয়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
আইনমন্ত্রী বলেন, এই শিক্ষক একজন ছাত্রকে মারধর করেছিল বলে আপনাদের কাগজ পড়ে জেনেছি। যদি সেটা হয়েও থাকে তাকেও বিচারের আওতায় আনা যায়। তাই বলে তৎক্ষনাৎ মোবাইল কোর্ট ছাড়া ওইখানে বিচার করে ফেলাটা বরদাশত করা যাবে না। আমার মনে হয় এটার ব্যাপারে একটা আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।