ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রাজধানীতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত যুবক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার প্রধান আসামি শরিফ বলে দাবি করেছে পুলিশ।
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, শরিফ পুরস্কার ঘোষিত ৬ জঙ্গির অন্যতম। সে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যার প্রধান আসামি।
এর আগে শনিবার গভীর রাত খিলগাঁওয়ের মেড়াদিয়া বাঁশ পট্টি এলাকায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ওই যুবক নিহত হন।
তখন অজ্ঞাত যুবক হিসেবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল পুলিশ।
খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মঈনুল ইসলাম জানান, শনিবার গভীর রাত খিলগাঁওয়ের মেড়াদিয়া বাঁশ পট্টি এলাকায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ওই অজ্ঞাত যুবক নিহত হন। তার আনুমানিক বয়স হবে ৩০ থেকে ৩৫ বছর।
ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে প্রথমে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বাহাউদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী তিন যুবক পুলিশের তল্লাশি চৌকি পার হচ্ছিল। পুলিশ সিগন্যাল দিলে তারা মটরসাইকেল না থামিয়ে গতি বাড়িয়ে দেন। পরে যুবকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে এক যুবক নিহত হন। অপর দুজন মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়।
ডিবির এই পরিদর্শক দাবি করেন, 'বন্দুকযুদ্ধের' পর ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢামেক সূত্র জানায়, খিলগাঁও থানা পুলিশ রাত পৌনে ৩টার দিকে নিহত ওই যুবকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসে। এখন সেখানেই তার মরদেহ রয়েছে।
৬ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ছিল শরিফ : ডিবি
এদিকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শরীফ ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাড়াও আরো ছয়জন ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্ট হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল বলে দাবি করছে পুলিশ।
আজ রবিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন এ দাবি করেন। এর আগে শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়ার বাঁশপট্টি এলাকায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ডিএমপির চিহ্নিত জঙ্গি শরীফ নিহত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, নিহত শরিফ লেখক অভিজিৎ রায়, ব্লগার নীলাদ্রী নীলয় হত্যা, লালমাটিয়ায় আহম্মেদ রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টা, সাভারে শান্তা মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যা মামলার তদন্তে এবং বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃত এবিটির সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী সকল ঘটনায় তার সরাসরি জড়িত।
ডিবির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, জাগৃতি প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা, তেজগাঁও এ ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা, এবং সাম্প্রতিক সময়ে সূত্রাপুরে সংগঠিত ব্লগার নাজিমউদ্দিন সামাদ, কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তনয় হত্যার অন্যতম প্রশিক্ষক ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে তদন্তে তার নাম জানা যায়।
ডিবি আরও জানায়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজে পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বইমেলায় তার নেতৃত্বে অভিজিৎ রায়কে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের ২ মিনিট পূর্বেও তার নেতৃত্বে কয়েকজনকে অভিজিৎ রায়ের পিছু নিতে দেখা যায়। এ ছাড়াও সে বাড্ডার সাতারকুলে পুলিশের ওপর হামলায় অন্যতম নেতৃত্ব প্রদানকারী এবং মোহাম্মদপুর ও দক্ষিণখানে বোমা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অন্যতম প্রশিক্ষক। তার সম্পর্কে তথ্য দাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরুস্কার ঘোষণা করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।