ক্যপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মাদারিপুরের কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে কথিত হত্যার চেষ্টা কারী ফাহিম হত্যা নিয়ে লেজে গোবরে অবস্হায় পড়েছে হাসিনার পুলিশ।
এবার জানা গেলো এই প্রভাষক রিপনকে কোপানোর ৪ দিন আগেই ফাহিমকে আটক করে ঢাকার পুলিশ। শর্ত মোতাবেক জঙ্গি কাজ শেষে ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল ফাহিমের।কিন্তু ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তড়িঘড়ি করে হত্যা করে পুলিশ।
মাদারীপুরে ক্রস ফায়ারের নামে পুলিশের গুলিতে নিহত ফাহিমকে জঙ্গি হিসাবে তৈরী করে ডিএমপির জঙ্গি সেল, অতপর এসব কথা ফাঁস করে দেয়ার কারনে খুব দ্রুত হত্যা করে মাদারীপুর পুলিশ, জানিয়েছে মাদারীপুর পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সোর্স।
সূত্র জানায়, বেশ কিছু দিন ধরে চলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকে কোনোভাবেই ইসলামি জঙ্গিদের কাজ হিসাবে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারছিল না সরকার। তাই ঘটানো হয় মাদারীপুরে “ফাহিম নাটক”। সম্প্রতি চলা সাঁড়াশি অভিযানের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে সন্দেহজনক ভাবে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হয় ফাইজুল্লাহ ফাহিম (১৮)। থানায় নিয়ে মারধরের পরে জানা যায়, সে রাজউক কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, নিয়মিত নামাজ পড়ে, কিন্তু শিবির ও তাবলিগ বিরোধী এবং তার বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জ।
এসকল তথ্য বিবেচনা করে ঢাকা মেট্রপলিটান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম সেলের (সিটিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী ফাহিমকে দিয়েই জঙ্গি নাটক সাজানো সিদ্ধান্ত হয়।
ফাহিমকে দিয়ে হিন্দু কাউকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে শিবিরকে ফাঁসানো সম্ভব। ফাহিমকে ছেড়ে দেয়ার শর্ত হিসাবে একটা কাজ করতে বলা হয়।
এরপরে পুলিশ ফাহিমকে দিয়ে তার বাবার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠায়, 'বিদেশ চলে গেলাম, এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে!' এদিকে ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে থানায় জিডি করেন বাবা গোলাম ফারুক।
সূত্র আরও জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিসি বিভাগের জঙ্গি সেলের সদস্যরা ফাহিম সহ ঐরকম আরও দু’জনকে গাড়িতে করে মাদারীপুরে নিয়ে আসে বুধবার সকালে।
এরপরে সন্ধ্যায় তাদের নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমুদ্দিন কলেজের পেছনেই সোবাহান মুন্সির বাড়িতে। সেখানেই ভাড়া করা বাসায় থাকতেন প্রভাষক রিপন চক্রবর্তী। তাদের হাতে চাপাতি দিয়ে কোপাতে বলা হয়। কোপানোর পরে পরিকল্পনা মাফিক সিটিসি সদস্যরাই ফাহিমকে আটক দেখিয়ে থানায় নিয়ে যায়।
কিন্তু থানার রাখার পরিবর্তে সিটিসির ঐ গাড়িতে করেই রাতভর ড্রাইভ করে ফাহিমকে নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বলা হয় মাদারীপুরের ঘটনায় শিবির জড়িত, রেটিনা কোচিং সেন্টার জড়িত, বরিশালে আরও হামলা করতে হবে, মীর কাসেম আলীর আইনজীবি বান্নাকে ফাঁসাতে হবে, এমনকি উত্তরার অস্ত্র উদ্ধারের নাটকের অগ্রিম স্বীকারোক্তি দিতে বলা হয়।
কিন্তু এত কিছুতে ফাহিম ভয় পেয়ে যায়, সে রাজী হয় না বরং উল্টা শর্ত পালন করার ফলে ছেড়ে দিতে বলে। তখন তাকে আবার ফেরত নেয়া হয় মাদারীপুরে এবং শুক্রবার ছুটির দিনে আদালতের মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
রিমান্ডের প্রথম দিনেও ফাহিম ঢাকায় আগে আটক হওয়া এবং শর্ত মাফিক কাজ করার কারনে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। এমনকি তার মামা বড় অফিসার, সে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে, এসব নানা কথা বলতে থাকে। ফলে ফাহিমকে বাঁচিয়ে রাখা খুব রিস্কি হয়ে পড়ে, এবং মনিরুল ও তার উর্ধতনরা সিদ্ধান্ত নেয় ফাহিমকে খরচ করে ফেলার।
ডিএমপির সিটিসির নির্দেশমত শুক্রবার রাত ২টার দিকে মাদারীপুর পুলিশ ফাহিমকে নিয়ে যায় মাদারীপুরের মিয়ারচর। গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পুলিশের একাধিক সদস্য সামনাসামনি গুলি চালিয়ে হত্যা করে ফাহিমকে।
যদিও মাদারীপুর এসপি টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, সকাল ৭টার ঘটনা! প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, ফাহিমের হাতে হাতকড়া পরানো ছিল, এবং তার বুকের বাঁ পাশে গুলির ক্ষতচিহ্নও রয়েছে। ফাহিমকে এভাবে হত্যার করার ফলে এর সাথে জড়িত মাদারীপুর পুলিশদের মধ্যে এখন ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানায় নাম না প্রকাশ করার শর্তে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার।
কেননা, ঘটনাপ্রবাহ সঠিকভাবে তদন্ত হলে সবাই ধরা পড়ে যাবে। প্রথমত, ফাহিম এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়লে তাকে মারধর করে আহত করা হতো, কিন্তু তেমন ঘটনা ঘটেনি।
দ্বিতীয়ত, মাদারীপুর পুলিশের হাত থেকে আদালতে পাঠানোর আগে ফাহিমকে ঢাকার সিটিসির কাছে পাঠানো হলো কি করে?
সিটিসি ডিএমপি অধীনে আলাদা একটা বিভাগ। মাদারীপুর জেলা পুলিশের আসামীকে আদালতের অনুমতি ছাড়া সিটিসির কাছে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নাই। এটা সম্পূর্ন এখতিয়ার বহির্ভুত ও বেআইনী।
তৃতীয়ত, ফাহিমকে শিবির হুজির কর্মী বানানো হলেও তার বাবা মা এবং সহপাঠিরা জানিয়েছে ভিন্ন কথা- ফাহিম শিবির অপছন্দ করতো।
চতুর্থত, ফাহিমকে মাদারীপুর আদালতে দেখা গেছে বুলেটপ্রুফ পড়া অবস্থায়, সেই ফাহিমকে অভিযানের নামে ক্রস ফায়ার করতে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধতামূলকভাবে বুলেট প্রুফ থাকার কথা, তাহলে বুলেট প্রুফ অবস্খায় হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্খায় কি গোলাগুলির ঘটনায় কেউ মারা যেতে পারে?
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার সাংবাদিকদেরকে বলছে, অনেক পুলিশ গুলি চালিয়ে ফায়েজউল্লাহকে হত্যা করেছে।
পঞ্চমত, পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হলে গুলি পিঠে লাগার কথা, কিন্তু বাস্তবে গুলি লেগেছে সামনে, এবং বুকের বাম দিকে হৃদপিন্ড বরাবর। তার মানে, টার্গেটেড শুট।
এমন অগোছালো ভাবে কাজগুলো করা হয়েছে, যে কোনো তদন্তেই ধরা পড়ে যাবে আসল ঘটনা।
তাই পুলিশের মধ্যে আতংক ও হতাশা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশকে জঙ্গীর আস্তানা এবং সংখ্যালঘুদে জীবন এখানে বিপন্ন দেখাতে এসব সাজানো নাটক আজ দেশবাসী গভীর উদ্বেগের সাথে অবলোকন করছে যা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও লজ্জাস্কর।