ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ রেলওয়ে কী এখন ইন্ডিয়ান রেলওয়ের অংশ? ভারত থেকে ব্রডগেজের জন্য আনা এলএইচবি কোচগুলো দেখে এ প্রশ্ন অনেকেরই।
কোচগুলোর ফ্যানে লেখা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে, পাওয়ার কারে ইয়রেজিতে ডেনজার লেখার পাশে হিন্দি লেখা। এছাড়া কোচের দরজাতেও হিন্দি লেখা দেখে যে কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারেন।
গত এপ্রিল মাসে এলএইচবির প্রথম চালান আসার পর দুই মাসের অধিককাল সময় সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে সংস্কারের কাজ চলেছে। সৈয়দপুর কারখানাতেও লেখাগুলো কেন মুছে ফেলা হলো না সে প্রশ্নের জবাব দিবে কে?
জানতে চাইলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ইফতিখার হোসেন গতরাতে টেলিফোনে বলেন, ভারতের তৈরী বলে কোচের গায়ে হিন্দি লেখা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। আমরা দেখে শুনে পরবর্তিতে এগুলো ইরেজ (মুছে ফেলা) করে ফেলবো।
ভারত থেকে আনা এলএইচবি কোচ নিয়ে শুরু থেকেই নানা সমালোচনা চলে আসছে।
প্রথমত এর রঙ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শুরু থেকেই। লাল সবুজের কোচে লাল রঙ এবং সবুজ কোনোটাই বাংলাদেশী পতাকার রঙ নয়।এই লাল আর সবুজ ভারতীয় পতাকার রঙ সদৃশ বলে জনমনে ব্যপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আবার রঙগুলোর ফিনিসিংও ভালো নয়। কোচের বডিও মসৃন নয়। সৈয়দপুর কারখানায় প্রথম চালান আসার পর কোচগুলোর বডি স্টেইনলেস স্টিল কিনা তা নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধে।
সে সময় বাংলাদেশী প্রকৌশলীর উত্তরে ভারতীয় এক প্রকৌশলী বলেছিলেন,‘ ইয়ে স্টেইনলেস স্টিল নেহি, ইন্ডিয়াকা স্টিল হ্যায়’। কোচগুলো চালু হওয়ার পর দেখা গেল, ফ্যানগুলোতে লেখা ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’ কোচের দরজাতেও ইংরেজির সাথে হিন্দি লেখা সাঁটানো।
হিন্দি এসব লেখা দেখে যাত্রীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রেলওয়ের ফেসবুকগুলোতেও এ নিয়ে সনমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকের বক্তব্য আমরা তো অর্ডার দিয়ে কোচ কিনেছি। যেখানে কোচের রঙ, ডিজাইন নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দি লেখা থাকার যৌক্তিকতা কোথায়?
আমাদের দেশের কজন হিন্দি লেখা পড়তে পারে? গত ২৫ জুন ঢাকা রেল স্টেশনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর হাজার হাজার মানুষ নতুন কোচগুলো দেখার জন্য ভিড় করে।
সে সময় খোদ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্রডগেজের কোচগুলোতে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ও হিন্দি লেখা নিয়ে সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একই সাথে ইন্দোনেশিয়া থেকেওতো কোচ আনা হয়েছে। সেই কোচগুলোতে এরকম অস্বস্তিকর কিছু চোখে পড়েনি।
অথচ ভারত থেকে আনা কোচগুলো নিয়ে যতো অসঙ্গতি। আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি কোচের নীচের একটা অংশে অবশ্যই ম্যানুফাকচার কোম্পানীর নাম থাকবে। তারিখ থাকবে। প্রয়োজনীয় কোড থাকবে।
কিন্তু দরজার মধ্যে ইংরেজির সাথে হিন্দি লেখা, ফ্যানের মধ্যে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে লেখা থাকাটা স্বাভাবিক নয়। এর কারণ ভারত কোচগুলো তৈরী করেছে বাংলাদেশের জন্য। তিনি বলেন, কোচগুলো যেখানে বাংলাদেশের জন্য তৈরী হচ্ছে সেখানে হিন্দি লেখার যৌক্তিকতা যেভাবেই ব্যাখ্যা করেন না কেন এই বেমানান।
দুুদিন আগেও রাজশাহী থেকে আগত শামীম নামে এক ব্যবসায়ী এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কোচগুলো আরামদায়ক, উন্নতমানের তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার কাছে খারাপ লেগেছে ভারতের হিনমন্যতা দেখে। তারা তো বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী কোচগুলো তৈরী করেছে।
সেখানে হিন্দি লেখার প্রয়োজন ছিল না। তবে তিনি এও বলেন, কোচগুলো দু’মাস ধরে সৈয়দপুর ওয়ার্কশপে ছিল। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এগুলো মুছে ফেলতে পারতেন। কেনো তারা তা করেন নি?
এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের একজন কর্মচারী বলেন, শুরু থেকেই এগুলো আমাদের চোখে পড়েছে। আমরা এগুলো মুছে ফেলা হবে কিনা সে সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মতামতও চেয়েছি। কেউই এগুলো মুছে ফেলার ঝুঁকি নিতে চান নি।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল বুধবার রাতে রেলওয়ের পশ্চিম বিভাগের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ইফতিখার হোসেনকে ফোন করলে তিনি বলেন, বাঁকা চোখে দেখলে এগুলোকে অস্বাভাবিক মনে হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। এগুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তা জানেন কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সমালোচনা করলে আপনারা করতে পারেন। অন্যরা কখনও করবে না।