DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

২০ বিদেশী জিম্মিকে শুক্রবার রাতেই হত্যা করে হামলাকারীরা : আইএসপিআর

ispr2 copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গুলশানের ক্যাফেতে কমান্ডো অভিযানে ছয় বন্দুকধারী মারা পড়লেও তার আগে তারা ২০ জিম্মিকে হত্যা করে বলে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাইরেক্টর মিলিটারি অপারেশনন্স (ডিএমও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, অভিযান শেষে ওই ক্যাফের ভেতরে ২০টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

শুক্রবার রাতে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর পর রাতভর ক্যাফেটি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ঘিরে রাখার পর সকালে সেনা বাহিনীর  নেতৃত্বে  শুরু করে কমান্ডো অভিযান।

‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের এই অভিযান সকালে ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় শেষ হয় বলে জানান ব্রিগেডিয়ার নাঈম।

তিনি বলেন, ‘প্যারা কমান্ডোরা ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু হয়, ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সকল অপরাধীকে নির্মূল করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে।’

এরপর তল্লাশি চালিয়ে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এদের সবাইকে আগের রাতেই হত্যা করা হয়।’ ধারাল অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা।

নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতেও পারলেও তারা সবাই বিদেশি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রচলিত নিয়ম মেনেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁর মোবাইল নম্বর-০১৭৬৯০১২৫২৪। প্রাথমিকভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নাঈম আশফাক চৌধুরী ঘটনার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারি নামের একটি রেস্তোরাঁয় দুষ্কৃতকারীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভেতরে প্রবেশ করে। রেস্তোরাঁর সবাইকে জিম্মি করে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে।

পরবর্তীতে পুলিশ কর্ডন করে সন্ত্রাসীদের যথেচ্ছ কর্মকাণ্ড থেকে নির্বৃত্ত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-র‍্যাব ও বিজিবি যে সাহসিকতা, আন্তরিকতা ও পেশাদারি প্রদর্শন করেছে, তা অনন্য।’

আইএসপিআরের সংবাদ সম্মেলনে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অভিযানকালে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদত বরণ করেন এবং ২০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে সরকার প্রধান কর্তৃক আদেশ প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।’

তিনি জানান, ‘সেনাবাহিনী গতকাল রাত থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাব সহযোগে সম্মিলিতভাবে অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এয়ার কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে সকাল আটটায় অপারেশনের সব কার্য সম্পন্ন করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত পিস্তল, ফোল্ডেট বাঁট একে ২২ রাইফেল, বিস্ফোরিত আইইডি, ওয়াকিটকি সেট ও অনেক ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের কেউ হতাহত হয়নি।

গতকাল রাতে অপারেশনে অংশ নেওয়া পুলিশের নিহত দুজন কর্মকর্তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে এই সেনা কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সার্বিক কৌশলের মাধ্যমে অতি দ্রুততার সঙ্গে অভিযান সফল করার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সরকার প্রধানের সময়োচিত, সাহসী, দৃঢ় ও সঠিক দিক-নির্দেশনার জন্য এই অভিযান সফল হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার বিষয়াবলি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপনাদের জানানো হবে।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত রাতেই জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত 'আমাক' গুলশানের হামলায় ২০ জন নিহত হবার কথা জানায়।

পরে তারা আরেকটি বার্তায় তারা নিহতের সংখ্যা ২৪ বলে উল্লেখ করে। বক্তব্যের সমর্থনে তারা ঘটনাস্থলের কিছু ছবিও প্রকাশ করে।

 সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এম এম ইমরুল হাসান, র‍্যাব-পুলিশ ও বিজিবির মুখপাত্ররা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!